বন্ধুর ছেলের কাছ থেকে উপহার পেয়ে কাঁদলেন চঞ্চল চৌধুরী

অধিকাংশ বাবা মায়েরাই সর্বস্ব দিয়ে, সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে সন্তান লালন পালন করেন, সন্তান যেন মানুষের মত মানুষ হয়ে গড়ে ওঠে। আর কর্মহীন অবসর জীবনে যেন সন্তানের কাছে একটু আশ্রয় পান…..

সন্তানের প্রথম উপার্জনের টাকায় কেনা ছোট্ট একটা উপহার, স্বর্গীয় সুখ এনে দেয়….. কেউ কেউ ভাবছেন আমার ছেলে ‘শুদ্ধ’ বোধ হয় ওর প্রথম উপার্জনের টাকায় আমাকে কিছু কিনে দিয়েছে! না,শুদ্ধ তো মাত্র ক্লাস ফাইভে।
তবে শুদ্ধ’রই এক বড় ভাই, নাম তার দিব্য জ্যোতি, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, সেই সাথে নিজেও একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পার্ট টাইম পড়ায়। মাঝে মাঝে অভিনয় করে টেলিভিশন,সিনেমায়,বিজ্ঞাপনে।

দিব্য’র একটা জমজ ভাই আছে, নাম তার সৌম্য জ্যোতি। সেও একই কাজ করে। দিব্য সৌম্য’র বাবা নাট্যকার বৃন্দাবন দাস
আর মা শাহনাজ খুশী। দিব্য-সৌম্য আমার সন্তান তুল্য… কিন্তু ওরা আমাকে কখনই পিতৃ স্হানীয় ভাবে না…. ভাবে বন্ধু স্থানীয়….
তুই তুকারী করে কথা বলে, কখনও আমার নাম ধরে ডাকে, কখনো আমার নাটকের কোন চরিত্রের নামে ডাকে….
কিয়েক্টাবস্থা,বলে বোঝানো যাবে না। আমিও ওদেরকে আমার বন্ধু এবং সমবয়সীই ভাবি… তাতে আমার বয়সটাও একটু কমে,এই আর কি!!!!

সেই দিব্য সেদিন হঠাৎ আমাকে অবাক করে দিলো!! কিছুদিন আগে দিব্য তার উপার্জনের প্রথম টাকায় মাকে শাড়ী,আর বাবা কে মোবাইল ফোন কিনে দিয়েছিল। সৌম্যও তার প্রথম উপার্জনের টাকায় ওর মাকে শাড়ী কিনে দিয়েছিল। যাই হোক, দিব্য এবার ঈদে তার উপার্জনের টাকায় আমাকে একটা পাঞ্জাবী কিনে দিয়েছে। ঈদ উপহার…. এটা কোন কথা??? আমি আনন্দে কাঁদবো,নাকি কি করবো, তখন বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আনন্দটুকু প্রকাশ করতে এখনো আমার চোখটা ভিঁজে উঠছে, আর বুকের ভেতর একটা প্রশান্তি বয়ে যাচ্ছে।

এই তো সেদিনের কথা…. ছোট্ট ছোট্ট হাত,পা,মুখ নিয়ে কোলে উঠতো,আশে পাশে ঘুর ঘুর করতো দিব্য-সৌম্য….
দিব্য’র এই উপহার আমার কাছে অনেক অনেক আনন্দের,অনেক ভালোবাসার….. দিব্য সৌম্য’র মত হয়তো শুদ্ধও একদিন এমনটাই করবে। আমার মত অনেক বাবা মা ই আছেন,যাঁরা কাঙালের মত এই স্বপ্নটাই দেখেন। একটা দিনের কথা খুব মনে পড়ছে…. আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র। দিনে দুই/তিনটা টিউশনি করি। আমার মায়ের স্বর্নের একটা চেইনের খুব শখ ছিল,কিন্তু আমাদের তেমন কোন অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ছিল না। মনে মনে ইচ্ছা ছিলো, আমার মায়ের এই শখটা আমি একদিন পূরণ করবো। যাই হোক,অনেক কষ্ট করে ,টিউশনির টাকা জমিয়ে, যেদিন মাকে একটা স্বর্নের চেইন কিনে দিয়েছিলাম, আমার মা সেদিন অনেক কেঁদেছিল…. মায়ের সেই চোখের জল সোনার মতই চিক চিক করছিল। চোখের জলে কত টা আনন্দ লুকিয়ে থাকে,আমি সেদিন দেখেছিলাম…. আমার অনেক গুলা সন্তান… ভাগ্না,ভাগ্নি,ভাস্তা,ভাস্তি,শুদ্ধ…
সবাই তোরা বাবা মায়ের আশ্রয় আর আনন্দ হয়ে ওঠ। তোদের সবার জন্য আশীর্বাদ …. সকল সন্তানই যেন সকল বাবা মায়ের আশ্রয় হয়ে ওঠে।
সবাইকে ঈদ মুবারক

(চঞ্চল চৌধুরীর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত)।

বার্তা বাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর