শেরপুরে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো জেলা প্রশাসনের জিসিও শাখা

তারিকুল ইসলাম, শেরপুরে প্রতিনিধি: শেরপুরে খেলাপী ঋণের জন্য জমা দেয়া টাকার লভ্যাংশের চেক প্রদান করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন জেলা প্রশাসনের জিসিও (জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসার) শাখা। ২৬ জুন বুধবার বিকেলে চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মোঃ মাসুদের হাতে লভ্যাংশের ওই চেক তুলে দেন জিসিও মোস্তাফিজুর রহমান শাওন।

জানা যায়, ১৯৭৮ সালের দিকে শেরপুরের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ মাসুদ শেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কল্যাণে তাঁতশিল্প স্থাপনের জন্য তৎকালীন সরকারের শেরপুর জেলার সিও ডেভেলপম্যান্টের থেকে ঋণ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্থ পরিশোধ করতে না পেরে সেই ঋণ খেলাপী হয়ে পড়ে। এর অনেক দিন পরে সরকারি পাওয়া আদায়ের জন্য প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা পাওনা হিসেব করে তার নামে পিডিআর অ্যাক্টে মামলা হয় ২০০৭ সালে। এরপরে ২ কিস্তিতে ৫০ হাজার করে মোট ১ লাখ টাকা ব্যাংক হিসেবে জমা রেখে মোঃ মাসুদ আইন অনুযায়ী মামলা পরিচালনা করেন এবং প্রায় ৪ বছর ধরে মামলা পরিচালনা করেও ২০১১ সালে এসে মামলায় হেরে যান এবং সরকারি সকল অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে চালান করে সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করেন।

২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক, শেরপুরের কার্যালয়ের জেনারেল সার্টিফিকেট শাখার জিসিওর (জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসার) দায়িত্ব প্রদান করা হয় সহকারী কমিশনার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান শাওনকে।

তিনি জানান, আমাকে জিসিও শাখার দায়িত্ব দেওয়ার পরে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব স্যারের নির্দেশনায় প্রথমেই শাখার স্থবিরতা কাটিয়ে গতিশীল করার চেষ্টা করি। ফেব্রুয়ারি -১৯ মাসের শেষের দিকে শাখার নিয়মিত অভ্যন্তরিন নিরীক্ষার অংশ হিসেবে শাখার সহকারী আব্দুর রশিদকে নিয়ে শাখার সকল মামলার নথি (প্রায় ৫২০টি) পর্যালোচনা করে ১ টি নিষ্পত্তি নথিতে দৃষ্টি আটকে যায়।

পূর্বে ব্যাংকে চাকরি করার অভিজ্ঞতা থাকার কারণে খুব সহজেই বুঝতে পারি যে ২০০৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪ বছর ব্যাংকে ১ লাখ টাকা ডিপোজিট করে মামলা পরিচালনা করলেও সেই একাউন্ট থেকে কোন লভ্যাংশ নেওয়া হয়নি এবং মামলায় হেরে গিয়ে খাতক মোঃ মাসুদ তার কাছে দাবীকৃত সকল টাকা পরিশোধ করেছেন। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায় ১ লক্ষ টাকার ৪ বছরের লভ্যাংশ কোথায় গেল?

পরের দিনেই জেনারেল সার্টিফিকেট শাখার সহকারীর মাধ্যমে আমি ওই ব্যাংকের হিসেবের স্টেটমেন্ট উত্তলোন করি এবং দেখতে পাই ২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ওই হিসেবে প্রায় ২৭ হাজার টাকা লভ্যাংশ হয়েছে এবং এ ২৭ হাজার টাকার ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ব্যাংকের বিভিন্ন কোষ্ট (হিসেব পরিচালনা ব্যয়) কেটে আরো প্রায় ৩ হাজার টাকা, সর্বমোট প্রায় ৩০ হাজার টাকা লভ্যাংশ হয়েছে। ফেব্রুয়ারি-২০১৯ মাসের শেষে জিসিও হিসেবে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানাই। তিনি আমার কাছে জানতে চান এই অর্থ সাধারণত কীভাবে ব্যয় করা হয়?

তখন আমি জানাই যে, সাধারণ এমনভাবে কোন অর্থ বা লভ্যাংশ পেলে তা জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হয় বা ডিএফ (ডেভেলপম্যান্ট ফান্ড) এ নেওয়া হয়। আর আপনি চাইলে খাতককে খুঁজে বের করে তাকে ফিরিয়েও দিতে পারেন। তখন জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব স্যার ওই টাকার লভ্যাংশ টাকার প্রকৃত হকদারকে প্রদান করার নির্দেশনা প্রদান করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় ওইমামলার খাতক শেরপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি মোঃ মাসুদকে ফোনে বিষয়টি জানানো হয় এবং তাকে ডেকে এনে তার লভ্যাংশ পাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করতে বলা হয়। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন অফিসিয়াল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে বুধবার বিকেলে মোঃ মাসুদ সাহেবের হাতে তার লভ্যাংশের ৩০ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়।

মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, মূলত শাখার অডিট করতে গিয়ে বিষয়টি আমার চোখে প্রথমে ধরা পড়ে এবং ডিসি স্যার আমাদেরকে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করার যে নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা সেই নির্দেশনা পালন করে চলেছি। এটা সেই নির্দেশনার’ই একটা দৃষ্টান্ত স্থাপিত হল আজকে। আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনায় এ জেলার উন্নয়নের জন্য সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছি এবং জেলা প্রশাসন, শেরপুর এভাবেই সবসময় স্বচ্ছতা ও জবাদিহিতার মাধ্যমে এই জেলার মানুষের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর