তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ কাটিয়ে দেশ আজ উন্নয়ন বিস্ময় হয়ে উঠেছে

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ৮০’র দশকের তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ কাটিয়ে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন বিস্ময় হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত উন্মোচিত হচ্ছে নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার। রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়ন করে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তুলনীয় এক শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, সুখী এবং উন্নত জনপদ।

তিনি বলেন, দেশি-বিদেশী নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে উন্নয়ন, অগ্রগতি আর সমৃদ্ধির পথে হাঁটছে আজকের বাংলাদেশ। আওয়ামীলীগ সরকারের জনকল্যাণমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন উদ্যোগ বাস্তবায়নের কারণেই বাংলাদেশের এই উন্নয়ন এবং অদম্য অগ্রযাত্রা সম্ভব হয়েছে।রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফেরত পাঠানো না গেলে বাংলাদেশের নিরাপত্তাই বিঘ্নিত হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ার জন্য তিনি মিয়ানমারকে দোষারোপ করেন।

বুধবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব তথ্য জানান।

সংসদ নেতা বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা এমন পর্যায়ে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি যে, পদ্মা সেতুর মত বৃহৎ প্রকল্প নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। পদ্মা সেতুসহ আমরা ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। ২০৪১ সালে ১৬ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি মাথাপিছু আয় নিয়ে বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে। সোনার বাংলায় ’দারিদ্র্য’ হবে সুদূর অতীতের কোন ঘটনা।

বিএনপি-জামায়াত জোটের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একবিংশ শতাব্দির শুরুতেই আওয়ামী লীগ সরকারের করা এই অগ্রযাত্রা থমকে দাঁড়ায়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে। আবার দুর্নীতির চক্রে নিপতিত হয় দেশ। হাওয়া ভবনের নামে তারেক জিয়া চালাতে থাকে লুটপাট। অর্থনৈতিক উন্নয়ন সূচকের প্রায় সবগুলোতেই বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়তে থাকে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদে দুই তৃতীয়াংশের অধিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। আমরা আবার দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য মনোনিবেশ করি। দেশ সবক্ষেত্রে এগিয়ে যায়।

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য পুলিশের সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদের এক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকরা স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে রাজী হয়নি। ফলে ২৫ নভেম্বর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হয়নি। আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারের সঙ্গে আমরা তিনটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদক করেছি। চুক্তির একটিতে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে যে, দুই বছরে মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে তথাপিও মিয়ানমার সরকার নানা তালবাহানা সৃষ্টি করে এই প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চুক্তিতে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে যে, এ সকল বাস্তুচ্যূত মিয়ানমার অধিবাসীদের নিরাপত্তা, সম্মান এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। চুক্তির এ আদর্শ ও মুল বাণী বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমার সরকারকেই উদ্যোগী ভুমিকা গ্রহণ করতে হবে এবং আশ্বাস প্রদান করতে হবে কেননা মিয়ানমার সরকার নিজেরাই এ সমস্যা তৈরি করেছে। বিশ্ব জনমত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অব্যাহতভাবে আমাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ এ বিষয়ে মানবাধিকার কমিশনে একটি রিপোর্ট প্রেরণ করেছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকার তাদেরকে এ বিষয়ে কাজ করতে দিচ্ছে না। মিয়ানমারের অসযোগীতা সত্বেও আমরা দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক দুইটি পথই খোলা রেখেছি। বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ি সকল বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিস্পত্তির বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ার জন্য মিয়ানমারকে দোষারোপ করে বলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মৌলিক অধিকার বঞ্চিত এই সকল বাস্তুচ্যুত অধিবাসীরা স্বাভাবিকভাবেই অসন্তুষ্টিতে ভুগছে। তাদের রয়েছে অনেক অভাব-অভিযোগ। এদেরকে অতিদ্রুত ফেরত না পাঠালে আমাদের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রসঙ্গত. মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর ২০১৭ সালের অগাস্ট থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তার আগে গত কয়েক দশকে এসেছে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চুক্তি করার পর ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতি নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মনে আস্থা না ফেরায় এবং তারা ফিরে যেতে রাজি না হওয়ায় সেই পরিকল্পনা অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলে যায়।

২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চুক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দু’দেশের সম্মতিক্রমে দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর সম্ভ্যাব্য তারিখ হিসেবে ১৫ নভেম্বর ২০১৮ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকরা স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে রাজি হয়নি।

মিয়ানমারের তালবাহানার দিকটি দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রাখাইন রাজ্যে যথাযথ সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক মহল মিয়ানমারে উপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে মিয়ানমার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে এবং বলছে যে বাংলাদেশের অসহযোগিতার কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্ব হচ্ছে। আমরা বারবার বিভিন্ন ফোরামে বলেছি যে, এ সকল বাস্তুুচ্যুত মিয়ানমার জনগণের ফেরত মিয়ানমার সরকারের উপর বর্তায় এবং তাদেরকেই উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর