দেলদুয়ারে উদ্বোধন হলেও মেলেনি জনবল অনুমোধন

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে ৫০ শয্যা উপজেলা স¦াস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্বোধনের প্রায় ২ বছর পার হলেও প্রয়োজনীয় জনবল ও মালামালের অনুমোধন মেলেনি আজও । উপজেলার বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নের লক্ষে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতি করে ২০১৬ সালে তিন তলা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর নির্মাণ কাজ শেষ করা হয় । সে সময়ের স্থানীয় সংসদ সদস্য খন্দকার আবদুল বাতেন ২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উদ্বোধন করেন । অথচ প্রয়োজনীয় জনবল ও মাল মালের অনুমোধনের জন্য আজও অপেক্ষার প্রহর গুণছে উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি।

এদিকে, ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নানা সমস্যায় জর্জড়িত । উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে তীব্র ডাক্তার সংকট সহ আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব । প্রায় ৩৬ বছর পুরানো এক্স-রে মেশিন দিয়ে চলছে রোগ নির্ণয় কাজ । এছাড়া ত্রুটিযুক্ত জেনারেটর মেরামত করে কাজ চালানো হচ্ছে । নেই কোন আধুনিক পাওয়ার সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা । জেনারেটরে সমস্যা দেখা দিলে হাসপাতালটিতে মোমের আলোয় হয় এক মাত্র ভরসা । অর্থাৎ ডাক্তার সংকট ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে । দেলদুয়ার উপজেলা স¦াস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মোট ডাক্তারদের পদ সংখ্যা রয়েছে ১৮ টি । এদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য ১০ টি এবং ইউনিয়ন কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য রয়েছে ৮ টি পদ । উপজেলায় বর্তমানে ডাক্তার রয়েছে ১৩ জন । এতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য ৭ জন এবং ইউনিয়ন কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য ৬জন ডাক্তার । এদের মধ্যে মোট ৬ জন ডাক্তার অন্যত্র প্রেষণে রয়েছেন । উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত ৪ জন ডাক্তার দায়িত্ব পালনের কথা থাকেলেও প্রেষণে থাকায় ২ জন ডাক্তার নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন ।

মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে বহির বিভাগে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত রোগীদের উপচেপড়া ভীড় । জরুরী বিভাগেও গিয়ে দেখা গেছে একই রকম চিত্র । বিভিন্ন সমস্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা রয়েছে ৩০ জন ।

চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে সামান্য কয়েকটা ঔষধ দিয়ে থাকেন । বেশিরভাগ ঔষধ কিনেতে হয় বাইরে থেকে । এছাড়া ডাক্তারাও তেমন সময় নিয়ে রোগী দেখেন না । সব ধরণের রোগ নির্ণয় পরীক্ষা করাতে হয় বাইরের ক্লিনিক থেকে । স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত দু’একজন ডাক্তার থাকলেও এরপর আর তাদের হাসপাতালে খুজে পাওয়া যায় না। ব্যবস্থাপত্র দেন নার্স ও মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্টরা। বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে পুরো হাসপাতাল। এমনকি জরুরী বিভাগেও একমাত্র ভরসা মোম ও হারিকেনের আলো। ইনডোরে সকাল ১০টার দিকে চিকিৎসক মাত্র একবার রোগী দেখেন। সংকটের অযুহাতে বেলা ১১টার পর থেকে হাসপাতালে কোনো ওষুধ সরবরাহ করা হয় না। এসব অভিযোগ এলাকাবাসীর ।

দেলদুয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মিনহাজ উদ্দিন মিয়া বলেন, ৫০ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য এখনো প্রয়োজনীয় জনবল ও মালামালের অনুমোধন হয়নি । উপজেলায় ডাক্তার সংকট থাকার কারণে স্বাস্থ্য সেবা কিছুটা ব্যহত হচ্ছে । তবে প্রেষণে কর্মরত ডাক্তারের ফিরিয়ে আনতে পারলে উপজেলায় ডাক্তার সংকট কিছুটা কমতে পারে । তিনি আরও বলেন, উপজেলা স¦াস্থ্য কমপ্লেক্সে আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে । অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরবরাহ অনুযায়ী ঔষধ বিতরণ করা হয়ে থাকে । তবে বর্তমানে ঔষধের সরবরাহ বেশি রয়েছে বিতরণও করা হচ্ছে। এছাড়া দেলদুয়ার উপজেলায় স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়িয়ে মডেল হিসেবে গড়ে তুলবেন বলেও আশা করছেন তিনি।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর