সংবাদ মাধ্যমসহ ইরানের ৩৬ ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিল যুক্তরাষ্ট্র

ইরানি এবং ইরানের সাথে সংশ্লিষ্ট ৩৬টি সংবাদ ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন অভিযোগ করছে, এই সাইটগুলো মিসইনফরমেশন বা ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে।

মঙ্গলবার দেখা যায় এসব ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে গেছে। তার জায়গায় দেখা যাচ্ছে একটি নোটিশ যাতে বলা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এগুলো ‘বাজেয়াপ্ত’ করেছে। এতে এফবিআই এবং মার্কিন বাণিজ্য দফতরের সিলও দেখা যাচ্ছে।

এতে রয়েছে ইরানের সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রেস টিভি এবং ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের পরিচালিত আল-মাসিরা টিভি।

এমন এক সময় এ ঘটনা ঘটলো, যখন ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করার লক্ষ্যে করা একটি চুক্তি পুনরায় কার্যকর করাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা চলছে।

মার্কিন বিচার বিভাগ বলছে, ইরানের ইসলামিক রেডিও ও টেলিভিশন ইউনিয়ন (আইআরটিভিইউ) পরিচালিত ৩৩টি ওয়েবসাইট এবং ইরাকের ইরান-সমর্থিত কাতাইব হেজবোল্লাহ পরিচালিত ৩টি ওয়েবসাইট ‘সিজ’ বা বাজেয়াপ্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। রয়টার বার্তা সংস্থা এ খবর দিয়েছে।

মার্কিন বিচার বিভাগ আরো বলেছে, আইআরটিভিইউ যে ডোমেইন ব্যবহার করতো তার মালিক ছিল একটি আমেরিকান কোম্পানি, এবং এ ডোমেইন ব্যবহার করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র অর্থ দফতরের ‘অফিস অব ফরেন এ্যাসেটস কনট্রোলের’ যে লাইসেন্স নিতে হয় – তা তারা নেয়নি।

অন্যদিকে কাতাইব হেজবোল্লাহকে যুক্তরাষ্ট্র একটি সন্ত্রাসী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে, এবং তারাও পূর্বোক্ত লাইসেন্সটি নেয়নি।

মঙ্গলবার বিকেলে ওই ওয়েবসাইটগুলোতে ঢোকা যাচ্ছিল না।

আল-আলম ওয়েবসাইটে একটি বার্তা দেখা যাচ্ছিল যাতে বলা হয় – “আলআলমটিভি ডট নেট ডোমেইনটি যুক্তরাষ্ট্রের সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। … ব্যুরো অব ইন্ডাস্ট্রি এ্যান্ড সিকিউরিটি, অফিস অব এক্সপোর্ট এনফোর্সমেন্ট এবং ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের একটি আইন প্রয়োগ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এটি করা হয়েছে।”

ইরানের প্রেস টিভি এবং আল-আলমের কিছু ওয়েবসাইটেও এরকম নোটিশ দেখা গেছে।

প্রেস টিভি হচ্ছে ইরানি সরকারের প্রধান ইংরেজি উপগ্রহ টিভি চ্যানেল এবং আল-আলম হচ্ছে এর আরবি সংস্করণ। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য থেকে প্রচার কার্যক্রম চালায় এমন একটি বাহরাইনি আরবি ভাষার চ্যানেল লুয়ালুয়া টিভিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

ইয়েমেনের হুতি আন্দোলনও আদের আল-মাসিরা ডোমেইন ব্লক হবার কথা নিশ্চিত করেছে।

যে ডোমেইনগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এগুলোতে ডট কম, ডট নেট এবং ডট টিভি রয়েছে। প্রথম দুটি ডোমেইন কোন নির্দিষ্ট দেশের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়।

তবে ডট টিভি ডোমেইনটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ টুভালুর মালিকানাধীন, কিন্তু এটি পরিচালনা করে ভেরিসাইন নামে আমেরিকান প্রতিষ্ঠান।

অন্য একটি দেশের শীর্ষস্থানীয় ডোমেইন বাজেয়াপ্ত করাকে সার্বভৌমত্বের লংঘন হিসেবে দেখা হতে পারে এমন সম্ভাবনা রয়েছে।

বাজেয়াপ্ত হবার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই কিছু ওয়েবসাইট নতুন ডোমেইন ঠিকানা নিয়ে ইন্টারনেটে ফিরে আসে।

কয়েক দিন আগে ইরানে কট্টরপন্থী এবং পশ্চিমাবিরোধী এব্রাহিম রাইসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর এই ঘটনা ঘটলো।

ইরানের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নেই
ইরানে কোন বেসরকারি রেডিও বা টিভি নেই। সব সংবাদ চ্যানেলই সরকারি মালিকানাধীন।

উপগ্রহ ডিশও ইরানের অবৈধ, তবে এগুলো প্রায়ই দেখা যায়। অতীতে ইরানে কেউ ডিশ দেখছে কিনা তা জানতে পুলিশ নানা কায়দায় তল্লাশি চালাতো, বাজেয়াপ্ত করা উপগ্রহ ডিশ গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য ট্যাংকও ব্যবহার করা হতো।

অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্র ৯২টি ওয়েবসাইট বাজেয়াপ্ত করে – যা তাদের ভাষায় বিভ্রান্তিকর রাজনৈতিক তথ্য ছড়ানোর জন্য ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কোর ব্যবহার করছিল।

ইরানি সরকার যুক্তরাষ্ট্রে এই বাজেয়াপ্ত করার ব্যাপারে সরকারিভাবে কোন মন্তব্য করে নি। তবে সংবাদমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সেন্সরশিপের অভিযোগ আনা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী প্রেস টিভির উপস্থাপক মারজিয়া হাশেমি টুইট করেন: “আপনি যা বলছেন তা যদি ডিসি পছন্দ না করে তাহলে ডোমেইন বাজেয়াপ্ত করা – এটাই কি যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার আরেকটি নমুনা?”

পুরনো বৈরিতা
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান দীর্ঘদিনের পুরনো শত্রু হলেও ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সংক্রান্ত এক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যাবার পর দু দেশের সম্পর্ক আরো খারাপ হতে থাকে।

ইরান ও ৬টি শক্তিধর দেশের মধ্যে সম্পাদিত ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর নতুন ও কঠোর কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

এর জবাবে ইরানও তাদের পরমাণু কর্মসূচির ওপর আরোপিত সীমা লংঘন করতে শুরু করে।

জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হবার পর তিনি এ চুক্তিতে আবার ফিরে আসতে চেয়েছেন, তবে দু পক্ষই বলছে, তার আগেই অন্য পক্ষকে চুক্তি মেনে চলা শুরু করতে হবে।

গত রোববার ওই চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করার এক বৈঠক ভিয়েনাতে অনুষ্ঠিত হয়, যাতে ইরান এবং এতে স্বাক্ষরকারী বাকি পাঁচটি দেশ চীন, ফ্রান্স, জার্মানি,রাশিয়া ও যুক্তরাজ্য যোগ দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা এতে পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন।-বিবিসি বাংলা।

বার্তা বাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর