৪ বছর ধরে অসম্পূর্ণ সেতু, দূর্ভোগে ৪ ইউনিয়নের মানুষ

২০১৭ সালের বন্যায় কুড়িগ্রামের ধরলা নদীর পানির স্রোতে রাস্তা ধ্বসে খালের সৃষ্টি হওয়ার ফলে কুড়িগ্রাম থেকে যাত্রাপুর যাওয়ার পথে জেলা সদরের পাঁচগাছি ইউনিয়নের শুলকুর বাজার সেতুটি যান চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।

এমতাবস্থায় ২০১৮ সালে কুড়িগ্রামের স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) থেকে জানুয়ারি মাসে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি ভেঙে নতুন করে সেতুর কাজ শুরু হয় । কিন্তু ঠিকাদার ও এলজিইডির কাজের অবহেলার কারণে সময়মতো সেতুটির কাজ শেষ হয়নি। যার ফলে প্রতিনিয়ত চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন সেতুটি দিয়ে চলাচলরত ৪ ইউনিয়নের লাখো মানুষ।

পাঁচ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে নয় মিটার দৈর্ঘ্য ও সাত দশমিক তিন মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে কাজ দেওয়া হয় স্থানীয় ঠিকাদার গোলাম রব্বানীকে। গত বছরের জানুয়ারি মাসে সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ শেষ করার সময়সীমা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত শেষ হয়েছে মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ কাজ। বাকী কাজ না করে মাসের পর মাস ফেলে রাখা হয়েছে অসম্পূর্ণ সেতুটি। কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না এলজিইডি কর্তৃপক্ষও।

যাত্রাপুর এলাকার ব্যবসায়ি শামসুল ইসলাম বলেন, যাত্রাপুর হাট হলো কুড়িগ্রাম জেলার একটা বড় হাট। কিন্তু সেতুর এই অবস্থা থাকার কারণে হাটের অবস্থাও করুণ হয়ে গেছে। পণ্যবাহী গাড়ি আনা-নেওয়া করতে না পারায় ব্যবসায়ীরা এই হাটে কম আসছেন। ফলে এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অসম্পূর্ণ সেতুর কারণে আমরা সময়মতো জেলা শহরেও যাতায়াত করতে পারছি না।

শুলকুর বাজার এলাকার বাসিন্দা নুর হোসেন বলেন, সেতুর কাজ বাকী থাকায় আমাদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কিছুদিন পর বন্যার পানি আসবে,তখন নৌকায় যাতায়াত করতে হবে আমাদের। এরজন্য প্রত্যেকবার নৌকায় উঠলে ভাড়া দিতে হবে ১০ টাকা। মোটরসাইকেলের জন্য দিতে হয় ১০ টাকা আর বাইসাইকেলের জন্য দিতে হয় পাঁচ টাকা। বন্যার সময় দিনের বেলা নৌকা পাওয়া গেলেও রাতে পাওয়া যায় না। তাই রাতের বেলা আমাদের থাকতে হয় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।

একই এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, ২০১৭ সালের জুলাই মাসের ভয়াবহ বন্যায় ধরলা নদীর পানির তোড়ে রাস্তা ধ্বসে গিয়ে খালের সৃষ্টি হয়। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে সেখানে সেতু তৈরির কাজ শুরু হলেও আজও শেষ হয়নি। ঠিকাদার ও এলজিইডি কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে সেতুর কাজ সময়মত শেষ হয়নি। আর তাই দুর্ভোগ বেড়েছে স্থানীয়দের।

পাঁচগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, এই সড়ক দিয়ে যাত্রাপুর, পাঁছগাছি, ঘোগাদহ ও ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মানুষ কুড়িগ্রাম জেলা শহরে যাতায়াত করেন। সেতুটি অসম্পূর্ণ থাকায় বর্ষা আসলে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মিটিংয়ে কয়েকবার আলোচনা করেছি। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছেও গিয়েছি কয়েকবার। কিন্তু কোনো ফল হয়নি।

সেতুর কাজ ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে দাবি করে ঠিকাদার গোলাম রব্বানী বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজটি অসম্পূর্ণ রয়েছে। এবছরেই সেতুর কাজ সম্পূর্ণ করে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা প্রকৌশলী (চঃদাঃ) সামিন শারার ফুয়াদ বলেন, ঠিকাদারের অবহেলার কারণে সেতুর কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। ঠিকাদারকে বার বার তাগিদ দিয়েও কোনো ফল হয়নি। সেতুর নির্মাণ কাজ মেয়াদ উর্ত্তীণ হবার পরও ৪৫ শতাংশ হবার কারণে আমরা কাজ বাতিলের জন্য নিয়মমাফিক ২৮ দিনের একটি চিঠি দিয়েছি । চিঠির জবাব পাওয়ার পর আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

সুজন মোহন্ত/বার্তাবাজার/এফএইচপি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর