সুন্দরবন কুরিয়ারে পাঠানো আম গোপালঞ্জের পরিবর্তে গেল সুনামগঞ্জে!

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলীর বাসিন্দা বিএম মনির। পেশায় তিনি একজন শিক্ষর্থী। তিনি সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে গোপালগঞ্জে আম পাঠিয়েছিলেন তার এক পরিচিত আইনজীবীর কাছে। কিন্তু কুরিয়ারে পাঠানো সেই আম গোপালগঞ্জে না গিয়ে পৌঁছে যায় সুনামগঞ্জে।

কুরিয়ারে আম পাঠানোর বিড়ম্বনার বিষয়ে তিনি বলেন, গত ৯ জুন রাত সাড়ে ৭ টার দিকে গোদাগাড়ীতে অবস্থিত সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে গোপালগঞ্জে ৩টি লটে তিনজনের কাছে মোট ৬০ কেজি আম পাঠাই। এর মধ্যে দুজন গ্রাহক তাদের নামে আমগুলো পেয়েছেন। কিন্তু তা ৫ থেকে ৬ দিন পর পৌছানোতে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়।

তিনি বলেন, আরও একটি ক্যারেট পাঠিয়েছিলাম গোপালগঞ্জের এক আইনজীবী সোলায়মান সিদ্দিক বাদলের নামে। কিন্তু সেটি গোপালগঞ্জে না গিয়ে চলে যায় সুনামগঞ্জে। যার কনসাইনমেন্ট নম্বর হচ্ছে- ৭০২০৪০০০০২৯৪৬৫/১ ও ২০ কেজি আমে খরচ পড়েছে ৩২০ টাকা। আম না পৌঁছানোর বিষয়টি গোদাগাড়ী অফিসে জানালে তিনি এ তথ্য দেন।

তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ কুরিয়ার সার্ভিস থেকে গোপালগঞ্জে অবস্থানকারী সেই আইনজীবী বড়ভাইকে ফোন দেয় আম নিয়ে যাওয়ার জন্য। পরে আইনজীবী বাদল আমাকে ঘটনাটি জানান।

এছাড়াও তিনি বলেন, ওই একই দিনে অর্থাৎ ৯ জুন আমি আমার আপন বড়ভাই মোজাম্মেলকে ঢাকার ইপিজেড এলাকার ৪০ কেজির দুই ক্যারেট আম পাঠাই। কিন্তু তিনি সেই আম পেয়েছেন ৬ দিন পর। ৬ দিন পর আম পৌঁছানোতে সেগুলো পচে যায়। বড়ভাই মোজাম্মেলকে পাঠানো আমের কনসাইনমেন্ট নম্বর হচ্ছে- ৭০২০৪০০০০২৯৪৭৪/১। ৪০ কেজি আমে কুরিয়ার খরচ পড়েছে ৪৮০ টাকা।

এমন বিড়ম্বনার কথা জানাতে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের হটলাইনে বার বার কল করা হয়। কিন্তু কোন নম্বরই তারা ফোন ধরেন না। পরে বাধ্য হয়ে এঘটনায় গোদাগাড়ী কুরিয়ার সার্ভিসের মালিকের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি একটি অভিযোগ লিখে জমা দেওয়ার জন্য বলেন। সে মোতাবেক কুরিয়ারের রিসিভ কপি সংযুক্ত করে আবেদনও করি। কিন্তু প্রায় দেড় সপ্তাহ গড়িয়ে গেলেও তারা এবিষয়ে উদাসীনতা দেখাচ্ছেন, কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।

গোদাগাড়ী এলাকায় সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের আরেক সেবাভোগী সারোয়ার রহমান। পেশায় তিনি গামের্ন্টেস এর মালিক। সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের বিড়ম্বনার বিষয়ে প্রতিবেদককে তিনিও তুলে ধরেন তার দুটি ঘটনা। তিনি বলেন, গত ১৪ জুন ভোলা জেলায় আবির নামের এক ব্যক্তির কাছে আম ২৫ কেজির একটি ক্যারেট আম পাঠিয়েছিলাম তিনি। কিন্তু এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও গ্রাহক সেই আম পাননি। যার কনসাইনমেন্ট নাম্বার ছিল- ৭০২০৪০০০০৩০২৬৭/১। এতে কুরিয়ার খরচ পড়েছিল ৪০০ টাকা।

অন্যদিকে, ১৭ জুন মুনসিগঞ্জে উজ্জ্বল নামের এক পরিচিত গার্মেন্টস ব্যবসায়ীর নিকট অর্ডারের ভিত্তিতে দুই ক্যারেটে ৪০কেজি আম পাঠানো হয়। যার কনসাইনমেন্ট নম্বর হচ্ছে-৭০২০৪০০০০৩০৭৬১/২। এতে কুরিয়ার খরচ হয়েছিল ৬৪০ টাকা। কিন্তু এক ক্যারেট আম সেখান থেকে হারিয়ে যায় বলে জানায় সুন্দরবন কর্তৃপক্ষ।

তিনি জানান, পরে আমি সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ৭ টি হটলাইন নাম্বারে লাগাতার ফোন দিতে থাকি আমার অভিযোগের বিষয়টি জানানোর জন্য। এতে দুইজন ফোন ধরেন। একজন খুব খারাপ আচরণ করে ফোন কেটে দেন। পরদিন ভিন্ন একটি নাম্বারে ফোন করা হয়। তিনি আমার স্লিপ নাম্বার শুনে খোঁজ নিয়ে বলেন আপনার ভোলা ও মুন্সিগঞ্জের দুইটি ক্যারেট আমই কামারপাড়ায় রয়েছে। সেটি পৌঁছাতে দুদিন সময় লাগবে।

পরদিন আবার ফোন দিলে তিনি হেড অফিসের প্রধানের নাম্বার দেন। তার সাথে কথা বললে তিনি স্থানীয় সুন্দরবন কুরিয়ারের মালিকের সাথে কথা বলার জন্য পরামর্শ দেন। পরে মালিকের সাথে দেখা করে কথা বললে তিনি একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। গোদাগাড়ী সুন্দরবন কুরিয়ারে আজ দুটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগী সারোয়ার রহমান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে এমন আম পাঠানোর বিড়ম্বনার স্বীকার শুধু শিক্ষার্থী মনির ও সারোয়ারই নন আরও ৮ থেকে ১০ জন ব্যক্তি এমন ঘটনার স্বাীকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস অনেক বেশী চার্জ নিচ্ছেন কিন্তু সে তুলনায় সেবা দিচ্ছেন খুব খারাপ। অনেক ক্ষেত্রেই আম হারিয়ে যাচ্ছে, চুরি যাচ্ছে, সময়মত গ্রাহকের কাছে পৌঁছাছে না এতে পথেই আম পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতো সমস্যা সত্ত্বেও সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস উদাসীন রয়েছে। এতে গ্রাহক ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে বলেও জানিয়েছেন অনেকে।

নবী আলম/বার্তাবাজার/এফএইচপি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর