অপহরণের সাড়ে ৩ মাস পর কলেজ ছাত্রী উদ্ধার, কথিত প্রেমিক আটক

তারিকুল ইসলাম,জেলা প্রতিনিধি: শেরপুর জেলা শহরের পৌরসভার উপকণ্ঠে খোয়ারপাড় এলাকার দরিদ্র সবজী ব্যবসায়ী গোলাম রব্বানীর কলেজ পড়ুয়া কিশোরী মেয়ে (১৭) কে গত ১৩ মার্চ ফেসবুকের মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারক প্রেমিক রবিউল ইসলাম ওরফে নোমান (২৫) নামে এক যুবক অপহরণ করে বিভিন্ন স্থানে রেখে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে ওই কিশোরীর বাবা-মা আত্মীয় স্বজন জেলার বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে শেরপুরের পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম পিপিএম’র দ্বারস্থ হন। পরে তিনি ওই কলেজ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারের জন্য ব্যাপক অনুসন্ধান চালান। অবশেষে ২৩ জুন রোববার সন্ধ্যায় শেরপুর সদর থানার পুলিশ কুমিল্লা জেলার ইপিজেড এলাকা থেকে ওই অপহৃতা কলেজ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার এবং সেই সাথে প্রতারক অপহরণকারী রবিউল ইসলাম ওরফে নোমানকে আটক করে শেরপুর থানায় নিয়ে আসা হয়। রবিউল ইসলাম ওরফে নোমান পিরোজপুর জেলার জিয়ানগর উপজেলার টেংরাখালী গ্রামের জনৈক আব্দুল লতিফ সরদারের ছেলে।

পুলিশ সূত্র ও অপহৃতা কলেজ শিক্ষার্থী উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, মোবাইল ফোনে এবং ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতারক রবিউল ইসলাম ওরফে নোমান তার সাথে অভিনব কায়দায় প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এছাড়াও সে বলে উচ্চ শিক্ষিত, পুরাতন ঢাকায় তাদের বাড়ী এবং সেখানেই বড় হয়েছে। পরে সে খিষ্টান থেকে মুসলমান হয়েছে। তার বাবা মধ্যপ্রাচ্য রয়েছে এবং খিষ্টান থেকে মুসলমান হওয়ায় তাকে বাড়ী থেকে বিতড়িত করেছে। প্রতারক অপহরণকারী প্রেমিক রবিউল ইসলাম ওরফে নোমান কলেজ শিক্ষার্থী প্রেমিকাকে ফেসবুকে কথার মধ্যে প্রেমের গল্প এবং প্রলোভনে ফেলে দিনের পর দিন মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে গভীর প্রেমে মক্ত করে ফেলে। এরই এক পর্যায়ে চলতি ২০১৯ সালের ১৩ মার্চ রবিউল ইসলাম ওরফে নোমান ওই কিশোরী শিক্ষার্থীকে কৌশলে শেরপুর থেকে সিএনজি যোগে অপহরণ করে প্রথমে জামালপুর ও পরে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় নিয়ে যায়। পরে রবিউল ইসলাম ওরফে নোমান জালজালিয়াতি কাবিন নামার মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীর সাথে স্বামী-স্ত্রী রূপে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকে। এদিকে পাগল প্রায় বাবা-মা আত্মীয় স্বজন নিখোঁজ শিক্ষার্থীকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে অবশেষে পুলিশের আশ্রয় নেয়।

এঘটনায় পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম পিপিএম’র নির্দেশনায় শেরপুর সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনসার আলী প্রথমে দেশের বিভিন্ন জেলায় অনুসন্ধান চালিয়ে ব্যর্থ হয়। তবুও থেমে থাকেনি ওই ভিকটিমকে উদ্ধারের শেষ আশা। পুলিশের অভিযানে অবশেষে রোববার সন্ধ্যায় কুমিল্লার ওই স্থান থেকে অপহৃতা ভিকটিমকে উদ্ধার এবং সেই সাথে অপহরণকারী প্রেমিক নোমানকে আটক করা হয়। নোমান উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মী ও পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে সে ফেসবুকের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলার কলেজ শিক্ষার্থী ও কিশোরীদের সাথে সিনেমা স্টাইলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে জাল কাবিন নামা তৈরি করে বিয়ে করে তার প্রেমিকাকে। এভাবে বিয়ের নামে বেশ কিছুদিন দৌহিক সম্পর্ক স্থান করে অবশেষে প্রেমিকা-স্ত্রীকে ফেলে সটকে পরে প্রতারক নোমান।

সে আরো জানায়, এভাবে অনেক কিশোরীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এবং জাল কাবিন নামায় বিয়ে করে সর্বনাশ করেছে। অপরদিকে উদ্ধার হওয়া কলেজ শিক্ষার্থী, তার বাবা-মা অপহরণকারী নোমানের কঠোর শাস্তিদাবী করেছেন।

এছাড়াও ভুক্তভোগী ওই কলেজে শিক্ষার্থী উপস্থিত সাংবাদিকদের এমনটাই জানালেন, তার মতো কেউ যেন ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্ক করে বাড়ী ছাড়া না হয়।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর