ঢাবি উপাচার্যের সমালোচনা করলেই মামলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও এর উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো ব্যঙ্গাত্মক সমালোচনা করলে আইনি পদক্ষেপ নিবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যান্টিনে স্বল্পমূল্যে খাবার নিয়ে ভিসির মন্তব্য ও করোনা পরীক্ষা কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করা নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা ও ব্যঙ্গাত্মক বিদ্রুপের জেরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা হেয় প্রতিপন্ন না হয় সেজন্য আলোচ্য বিষয়টির স্পষ্টীকরণ প্রয়োজন হয়েছে। খাবার ও কোভিড টেস্ট কার্যক্রম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে চলা ব্যঙ্গবিদ্রুপ সম্প্রতি কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে।

তাদের ভাষ্য, সম্প্রতি দায়িত্বশীল মহল বিভিন্নভাবে সেসব যথেচ্ছাভবে ব্যবহার করছেন, যা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত।বস্তুত কিছু অসাধু চক্র কোনো অপতথ্য বারবার ব্যবহার করে সেটিকে তথ্যে পরিণত করতে চায়, যা জনমনে অনেক সময় বিভ্রান্তি তৈরি করে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে, বিভ্রান্তিকর ও খণ্ডিত তথ্য ব্যবহার করে কোনো বিশেষ মহল যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করতে এবং মানহানি না ঘটাতে পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে। অতি সম্প্ৰতি দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বল্পমূল্যের খাবার নিয়ে উপাচার্যের বক্তব্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনা টেস্টের জন্য স্থাপিত পিসিআর ল্যাব নিয়ে ‘খণ্ডিত ও বিভ্রান্তিকর’ তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

পত্রিকায় প্রকাশিত ‘খণ্ডিত ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের স্পষ্টীকরণ’ করে এতে বলা হয়, সম্প্রতি দুটি বিষয় বিশেষভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। বিষয়গুলো ইতোপূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ ‘ব্যঙ্গ বিদ্রূপ’ রূপে উপস্থাপন করেছেন। তখন সেটিকে বৃহত্তর সমাজের কিছু মানুষের ভিন্ন রুচি ও ভিন্ন মূল্যবোধ হিসেবে ধরে আমলে নেওয়া হয়নি। সেই সাংবাদিক অবশ্য পরে সেজন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। একজন শিক্ষক হিসেবে উপাচার্য বিষয়টিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছেন।

ঢাবি কর্তৃপক্ষ বলছে, টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ার খাবার মেন্যুর নজিরবিহীন স্বল্পমূল্য বিষয়ে উপাচার্যের মন্তব্য ‘বিবিসি বাংলা’ পরিচালিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সত্য প্রমাণিত হয়।

পিসিআর ল্যাবের বিষয়ে বলা হয়, ‘দ্বিতীয় বিভ্রান্তিকর তথ্য’টি হলো – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে সাড়া দেয়নি।

কোভিড-১৯ টেস্টিং কার্যক্রম শুরু করে বেশ বিলম্বে; কিছুদিন পর আবার ল্যাব বন্ধ করে দেয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ডজনেরও অধিক আরটি-পিসিআর মেশিন থাকা সত্ত্বেও সেসব দিয়ে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা না করে বসে আছে। এ বক্তব্যটি বিভিন্ন মহলে ব্যাপক প্রচার চালানো হয়েছিল।

প্রকৃত ঘটনা হলো কোনো বিলম্ব ছাড়াই গত বছরের ১৯ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞানী, জিন প্রকৌশলী ও প্রাণরসায়নবিদদের নিয়ে প্রথম ‘কোভিড-১৯ (প্যানডেমিক) রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি; গঠন করে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করে কোভিড মহামারি প্রতিরোধে কতিপয় সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে পারস্পারিক সহযোগিতার প্রস্তাবনা দেয়।

কোভিড-১৯ টেস্ট এর জন্য হাসপাতাল বা ডেডিকেটেড ল্যাবের ন্যায় কোনো ল্যাব ও প্রশিক্ষিত জনবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল না।

তিনটি বিভাগের ল্যাবে পঠন-পাঠন ও নিয়মিত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি করে মোট তিনটি আরটি-পিসিআর মেশিন ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যগুলো কনভেনশনাল পিসিআর মেশিন; সেগুলো কোভিড টেস্ট করার উপযোগী নয়।

উল্লেখিত কমিটির মাধ্যমে বিভাগগুলো থেকে তিনটি আরটি-পিসিআর মেশিন এনে উচ্চতর বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব উদ্যোগে বায়োসেফ্‌টি নিশ্চিত করে তিন সপ্তাহে তৈরি করা হয় কোভিড-১৯ টেস্টিং ল্যাব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন পাওয়ার পর তা ৫ মে উদ্বোধন করা হয়। প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং কয়েকজন শিক্ষক দ্বারা এটি পরিচালিত হতে থাকে।

মে মাসের শেষ সপ্তাহে ঈদের ছুটির সময়ে ল্যাব পরিচালনায় লোকবলের ঘাটতি পড়ে গেল; কয়েকজন শিক্ষার্থী স্বেচ্ছাসেবক করোনা সংক্রমিত হলেন এবং আরএনএ কনটামিনেশন নিরসনে ল্যাব জীবাণুমুক্ত করা প্রয়োজন হলো।

এ পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানিয়ে টেস্টিং কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করা হয়েছিল; ল্যাব বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। দশ দিন পর যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে, জনবল সংগ্রহ করে পুনরায় টেস্টিং সেবা কার্যক্রম শুরু হয়; যা এখনো চলমান।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ঘটনাক্রমে, টেস্টিং কার্যক্রমের সাময়িক স্থগিতের কারণ হিসেবে ল্যাব পরিচালনায় স্বেচ্ছাসেবক-লোকবল ঘাটতি ও আরএনএ কনটামিনেশন নিরসন সংক্রান্ত মূল কারণ চাপা পড়ে যায়; অর্থ সংশ্লেষণের বিষয়টি শীর্ষে উঠে আসে।

বর্তমানে এ ল্যাবটিকে ভাইরোলজি বিষয়ে উচ্চতর গবেষণনার জন্য বায়োলজিক্যাল হ্যাজার্ড অ্যানালাইসিস এ্যান্ড হেল্থ রিসার্চ ল্যাবরেটরি নামে একটি স্বতন্ত্র ল্যাবে রূপান্তর করা হয়েছে। এ ল্যাবে টেস্টিং এর পাশাপাশি ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিংও করা হয়েছিল।

বার্তা বাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর