ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, দায় এড়াতে রামেকে প্রেরণ!

লক্ষাধিক টাকার চুক্তিতে ব্রেন টিউমার অপারেশন করার দায়িত্ব নেন রাজশাহী রয়্যাল হাসপাতাল এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টারের চিকিৎসক ডা. আ ফ ম মোমতাজুল হক।

অথচ, সেই হাসপাতালে ছিল না প্রয়োজনীয় চিকিৎসার যন্ত্রপাতি ও সহায়ক চিকিৎসক, নার্স। একাই ওটিতে নিয়ে ৫ ঘন্টা রোগীকে কাটাছেড়া করেন। এতে ভুল চিকিৎসায় অকালে প্রাণ হারাতে হয় ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত রোগী কুলসুম নামের এক নারীকে।

ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৫ জুন (মঙ্গলবার) রাত সাড়ে ৭টার দিকে রয়্যাল হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে।

এ ঘটনায় নিহত কুলসুমের স্বামীর বড়ভাই আব্দুল মালেক গত বুধবার (১৬ জুন) বাদী হয়ে নগরীর রাজপাড়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এ ঘটনায় রয়্যাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও অপারেশনকারী চিকিৎসক ডা: আফম মোমতাজুল হককে দায়ী করেছেন রোগীর স্বজনরা। তাদের দাবী, চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার কারণে কুলসুম (৩৮) এর মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে রাজপাড়া থানায় অপমৃত্যুর অভিযোগে সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ জুন সন্ধার দিকে কুলসুমকে ব্রেন টিউমার অপারেশনের জন্য রয়্যাল হাসপাতালে ভর্তি করেন তিনি। এ অপারেশনের জন্য তিনি ডা. মোমতাজুল হকের সাথে মৌখিক চুক্তি অনুযায়ী অগ্রিম ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা রয়্যাল হাসপাতালের ক্যাশ কাউন্টারে জমা করেন। এছাড়া বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ ৩৭ হাজার, ওষুধ বাবদ ৮ হাজার ৮০০ টাকা ও রক্ত বাবদ ২ হাজার টাকা পরিশোধ করেন রোগীর স্বজন আব্দুল মালেক। এরপর ১৫ জুন বিকাল ৩ টার দিকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয় রোগীকে। ৫ ঘন্টা পর অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে রাত ৮টার দিকে ডা. মোমতাজুল হক বলেন, রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে আইসিইউতে নিতে হবে।

অভিযোগে আরও জানা গেছে, পরবর্তীতে তিনি কাউকে কিছু না জানিয়েই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় রামেক হাসপাতালের আইসিইউতে রোগীকে প্রেরণ করেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীর স্বজনদের বলেন, রোগী ক্লিনিকেই মারা গেছেন। নিজেকে বাঁচাতে এবং দায় এড়ানোর জন্য রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয়।

অভিযোগকারী আব্দুল মালেক ভাষ্য, কাউকে কোন কিছু না জানিয়ে চিকিৎসক নিজেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে আইসিইউতে পাঠিয়েছিলেন তিনি। মূলত, তিনি নিজের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুও দায় এড়াতে গিয়ে রয়্যাল হাসপাতালের সহযোগিতায় এমন কাজটি করেছেন।

মালেক আরও বলেন, অপারেশনের সময় রোগীর নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো। এছাড়া রোগী যন্ত্রনায় ছটফট করার কারণে তার হাত পা বেধে নাকে গজ দেয়া হয়েছিল বলেও জানান আব্দুল মালেক। ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর কারণে প্রতিবাদ জানালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় গুন্ডা দিয়ে হুমকি-ধামকি দেন এবং তারাই লাশ বাড়ী নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দেন। পরে মৃতদেহ বাড়ী নেওয়ার জন্য গাড়ীর ব্যবস্থা করে দেন।

এ বিষয়ে জানতে ডা. মোমতাজুল হককে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

এদিকে সহকারী সার্জন সারওয়ার হোসেনকে ফোন দিলে তিনি বলেন, এবিষয়ে আমি কিছুই জানি না। ডাক্তার অপারেশন করেছেন তিনিই ভালো বলতে পারবেন। আমি শুধু তার অপারেশন করার টাকা নিয়ে তাকে পৌঁছে দিয়েছি মাত্র।

তিনি জানান, চিকিৎসক রাজশাহীতে নেই। গতকাল (বুধবার) বিকেলে ঢাকা গেছেন। কবে ফিরবেন বলতে পারছি না। তবে ঘটনার বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবো না।

অন্যদিকে রাজশাহী রয়্যাল হাসপাতাল এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টারের প্রধান হিসাব সহকারী মো. হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসকদের কথায় আমাদের চলতে হয়। তারা এখানে চিকিৎসা করেন, টাকা নেন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে একটি ফি প্রদান করেন। তাছাড়াও এঘটনাটি আমার জানা নেই। ম্যানেজার সাহেবের মেয়েও অসুস্থ থাকায় তিনিও ঘটনাটি জানেন না।

এদিকে রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগকারী আব্দুল মালেককে চিকিৎসাপত্রসহ যাবতীয় পেপার্স নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। বিস্তারিত যাচাই-বাছাই কওে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান রাজপাড়া থানা পুলিশের এই কর্মকর্তা।

নবী আলম/বার্তাবাজার/ই.এইচ.এম

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর