যাত্রী ছাউনী কমাতে পারে সড়ক দুর্ঘটনা

ঢাকায় বাসস্টান্ড ঠিক কয়টা? আপনি যদি লোকাল বাসের হিসেব করেন, তাহলে সেই বাসস্ট্যান্ড গুনে শেষ করা যাবে না। ঢাকায় তো লোকাল আর সিটিং বাসের তফাৎ খুব একটা নেই। সে যাই হোক আপনাকে ছোট্ট একটা হিসেব দেখানো যায়। ধরুণ আপনি মোহাম্মদপুর থেকে যাত্রা শুরু করলেন মতিঝিলের উদ্দেশ্যে। মোহাম্মদপুর দিয়ে বাসটি ছেড়ে ২৭ নাম্বার সিগনালে এসে লোক উঠাবে। এর ২০০ মিটার সামনে শংকর বাসস্টান্ড। সেখান থেকে যাত্রী উঠবে। এর ৮০০ মিটার দূরে আবাহনী মাঠ বা স্টার কাবাব, সেখান থেকে যাত্রী তুলবে। এরপর ৫০০ থেকে ১০০০ মিটারের মধ্যেই ইবনে সিনা, ধানমন্ডি ১৫, জিগাতলা, সিটি কলেজ, সাইন্স ল্যাব, বাটার সিগনাল, কাটাবন, শাহবাগ মোড়, মৎস ভবন, পল্টন ও গুলস্থানের পর মতিঝিল গিয়ে আপনার গন্তব্য শেষ হবে। এটা শুধু ধানমন্ডির একটা রাস্তার চিত্র বর্ণনা করা হলো। ঢাকার প্রায় সবগুলো রুটের চিত্র এই একই। বাসস্টান্ডের কোন শেষ নেই।

মজার ব্যাপার হলো এরমধ্যে যেখানে সেখানে গাড়ি থামিয়ে লোক উঠানো ও নামানো তো হবেই। আর এই যাত্রীরা গাড়িতে উঠার জন্য রীতিমতো রাস্তার অর্ধেক দখল করে থাকবে। গাড়ি আসলে চলে প্রতিযোগিতা, কে আগে উঠবে। আর সেই প্রতিযোগিতা না করেও তো উপায় নেই। তার গন্তব্যের পৌছার জন্য এই প্রতিযোগিতা ঢাকার শহরের নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাতে বাদ যায় না মহিলা যাত্রীরাও।

সমস্যাটা হলো এই হুরাহুরিতে কারো নজর থাকে না যে পেছন থেকে কোন গাড়ি আসছে কিনা। পেছনের ড্রাইভার যদি একটু অসতর্ক হয়, দুর্ঘটনা ঘটা তখন সময়ের ব্যাপার। আর এর মধ্যে তো গাড়ির ড্রাইভারদের ওভারটেক করার প্রতিযোগিতা আছেই। মটর বাইকের যাত্রীরা সাধারণত রাস্তার পাশ দিয়ে চলে। তারাও ঠিক কখন যে হুট করে চলে আসে তার ঠিক নেই। এই যে চিত্র সেটা সবারই পরিচিত।

এখান থেকে উত্তরণের কি ব্যবস্থা হতে পারে? গণপরিবহনের যাত্রী ওঠা-নামার জন্য নির্ধারিত স্থান ‘বাস-বে’ বা যাত্রী ছাউনী পুরো খালি। তবে সেখানে বাস থামছে না। রাস্তার মাঝে কিংবা পাশেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে ঠেলাঠেলি করেই ওঠা-নামা করছেন যাত্রীরা। ঢাকার শহরে এত এত বাসস্টান্ড কিন্তু ছাত্রী ছাউনী কয়টা? আর যেসব যাত্রী ছাউনী রয়েছে, তাতে পাগল ঘুমায় না হয় অপরিত্যাক্ত অবস্থায় পরে আছে। এর আশেপাশে মল মুত্র ত্যাগ করে পথচারিরা। অনেক যাত্রী ছাউনীতে তো রীতিমতো দোকান দিয়ে বসেছে। বিমান বন্দর সড়কের বনানী সিগন্যালের দক্ষিণ পাশে ফুটওভার ব্রিজের পাশেই রয়েছে সুন্দর পরিপাটি বাস-বে এবং যাত্রী ছাউনী। কিন্তু সেখানে থামে না কোনো বাস। সিগনালের উত্তর অংশ থেকেই যাত্রী ওঠানামা করায় এই সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন গণপরিবহন। কিন্তু এর ভ্রুক্ষেপ কার আছে?

সরেজমিনে গেলে এক বাইক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, হঠাৎ করেই বাস থেকে যাত্রী নেমে বাইকের সামনে এসে যায়। আবার অনেকে আকস্মিক ফুটপাথ থেকে দৌড় দেয় বাসে ওঠার জন্য। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা। অনেক দুর্ঘটনা ঘটছেও।

চালকদেরও রয়েছে অভিযোগ, ‘আমরা তো যাত্রী ছাউনীতেই বাস থামাতে চাই। কিন্তু সিগন্যাল দিলে যাত্রীরা নামতে চায়। বাসবে পর্যন্ত যাওয়ার ধৈর্য নাই। আবার তখন গেট খুললে অনেক যাত্রী উঠে পরে। ওইখানে (ছাত্রী ছাউনী) যাওয়ার আগেই বাস ফিল-আপ হয়ে যায়। তাই আর সেখানে বাস থামাই না।
এক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশ জোরালো ভূমিকা পালন করতে পারে। রাজধানীতে ছাত্রী ছাউনীগুলো পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত সিটি কর্পোরেশনের কর্তাব্যক্তিদের। পুলিশ এমনটা দেখলে শুধু ড্রাইভার নয়, তাৎক্ষনিকভাবে যাত্রীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তাছাড়া নিজের ইচ্ছেমতো চলন্ত গাড়ি থামিয়ে রাস্তা পাড় হওয়ার অভ্যাস তো আছেই ঢাকার নাগরিকদের। যা অনেক সময়ই বিপদ ডেকে আনে।

প্রতিটি বাস স্টপেজে যাত্রী দাঁড়ানোর জন্য যাত্রী ছাউনি অবশ্যই দরকার। রাস্তায় দাড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা বন্ধ করতে হবে। তাহলে জ্যামও যেমন কমবে, বিপদও কমবে। বাস স্টপেজগুলো ইন্টারসেকশন হতে একটু দুরে সুবিধাজনক স্থানে হবে। কতটুকু এলাকার মধ্যে বাস স্টপেজ হবে তা বাস স্টপেজ শুরু এবং বাস স্টপেজ শেষ সাইন বোর্ড দিয়ে চিহ্নিত করতে হবে। বাস স্টপেজ শুরু ও শেষের সাইনবোর্ডের মাঝে ফুটপাত ঘেঁষে কতটি বাস দাঁড়াতে পারবে তা ব্লক আকারে রোড মার্কিং করে চিহ্নিত করতে হবে। কর্তা ব্যক্তিরা যদি এসবে নজড় দেয়, তাহলে অচিরেই সড়কের ভয়াবহ রুপ কিছুটা হলেও কমবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর