রোহিঙ্গাসহ ৫৫ হাজার ৩১০ জন হলেন ‘ভোটার’!

চট্টগ্রামে অবৈধভাবে রোহিঙ্গাসহ মোট ৫৫ হাজার ৩১০ জনকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ উঠেছে সাবেক সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পরিচালক (জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ) খোরশেদ আলমসহ চার জনের বিরুদ্ধে।

এই ঘটনায় বুধবার (১৬ জুন) তাদের নামে মামলা দায়ের করেছেন দুদকের উপ সহকারি পরিচালক শরীফ উদ্দীন।

মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে, চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ের সাবেক উচ্চমান সহকারী মাহফুজুল ইসলাম, সাবেক অফিস সহায়ক রাসেল বড়ুয়া ও পাঁচলাইশ থানা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ের সাবেক টেকনিক্যাল এক্সপার্ট মোস্তফা ফারুক।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ভোটার তালিকাভুক্ত করার কাজে ব্যবহৃত সরকারি ল্যাপটপ ব্যবহার করে অভিযুক্তরা আর্থিক সুবিধা নিয়ে রোহিঙ্গাসহ অন্যান্যদের অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যা দুদকের প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণীতে বলা হয়, দুদকের অনুসন্ধানে পাওয়া রেকর্ডপক্র ও তথ্যাদি পর্যালোচনা করে দেখায় যে, চট্টগ্রাম জেলায় ব্যবহৃত ডেল-এর একটি ল্যাপটপ বিভিন্ন আইটেমের মালামাল মিরসরাই উপজেলায় ব্যবহার করার জন্য রাসেল বড়ুয়া ২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর চালানের মাধ্যমে মোস্তফা ফারুকের কাছে হস্তান্তর করেন। যা তিনি মিরসরাই নিয়ে যান।

সাবেক মিরসরাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও বর্তমানে ঢাকার অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তোফায়েল আহম্মেদ জানান যে, ২০১৫ সালের হালনাগাদ কার্যক্রমে যে পরিমাণ মালামাল/সরঞ্জাম তিনি গ্রহণ করেন, তার সম্পূর্ণটাই ফেরত দেন।

মাহফুজুল ইসলাম জানান, তিনি ল্যাপটপটি পেয়ে মীরসরাই উপজেলা নির্বাচন অফিসে পাঠান। ল্যাপটপটি হালনাগাদে বিভিন্ন উপজেলায় ব্যবহৃত হয়েছে বলা হলেও অনুসন্ধানকালে ল্যাপটপটির সর্বশেষ অবস্থান জানাতে পারেনি চট্টগ্রাম সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়।

সেখানে আরো উল্লেখ করা হয়, ল্যাপটপটি ফেরত না পাওয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসের কার্যালয় হতে মাহফুজুল ইসলাম ও রাসেল বড়ুয়ার দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেননি বা ল্যাপটপটি না পাওয়ার বিষয়ে কোনো ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করেননি। এছাড়া খোরশেদ আলম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তকরণ কাজে এবং জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিকরণ ব্যবহৃত বিশেষায়িত সম্পত্তি উল্লেখিত ল্যাপটপটি উদ্ধারের কোনো পদক্ষেপ/কার্যক্রম গ্রহণ করেননি এবং উক্ত বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে না এনে বা ল্যাপটপটি গায়েব হয়ে যাওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি না করে তার উপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধমূলক বিশ্বাস ভংগ করে একে অপরের সহযোগিতায় ল্যাপটপটি আত্মসাত করেছেন। পরবর্তীতে আত্মসাত করা উক্ত ল্যাপটপসহ কয়েকটি ল্যাপটপ ব্যবহার করে রোহিঙ্গাসহ মোট ৫৫ হাজার ৩১০ জনকে অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্যে পাওয়া যায়।

এছাড়া একটি পত্রিকার প্রতিবেদন ধরে খোরশেদ আলমকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হলে তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালকের কাছে জমা দেন। সেই প্রতিবেদন ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, উল্লিখিত ল্যাপটপটি গায়েব হওয়ার বিষয়টি তদন্ত কমিটি কৌশলে এড়িয়ে গেছেন। এই বিষয়ে কোনো কর্মচারি/কর্মকর্তাকে দায়ী বা কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

এতে প্রতীয়মান হয় যে, খোরশেদ আলম চট্টগ্রাম সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার দায়িত্বে থাকাকালীন ঘটনাটি হওয়ায় নিজেকে এবং অন্য আসামিদের উক্ত অপরাধের দায় থেকে বাঁচানোর অপচেষ্টা করেছেন। আসামিরা ল্যাপটপটি গায়েব করার তথা সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের বিষয়টি তৎকালীন জেলা নির্বাচন অফিসার খোরশেদ আলমের উপরে সরকারি সম্পত্তি বিশেষ করে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভক্তকরণ কাজে ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করণে ব্যবহৃত বিশেষায়িত অতি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ল্যাপটপটি যথাযথ সংরক্ষণ না করে তার উপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে হেফাজতকারী হিসেবে তিনি ল্যাপটপটি উদ্ধারের কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করে এবং বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনা কিংবা গায়েব হয়ে যাওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা বা সাধারণ ডায়েরি না করে বর্ণিত অপরাধ সংঘঠনে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছেন।

২০১৯ সালে রমজান বিবি নামে এক রোহিঙ্গা নাগরিক তার নিজের পরিচয় গোপন করে চট্টগ্রাম নির্বাচন অফিস থেকে জাতীয় পরিচয় পত্র সংগ্রহ করতে এসে আটক হন। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় নির্বাচন অফিসের কর্মচারিদের মাধ্যমেই তিনি এই জাতীয় পরিচয় পত্র সংগ্রহ করেছেন। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জয়নালসহ বেশ কয়েকজনকে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়।

বার্তা বাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর