কুষ্টিয়ায় এএসআই সোমেন অস্ত্রসহ আটক

কুষ্টিয়ার কাষ্টমস মোড়ে একটি ৪ তলা ভবনের সামনে এক পুলিশের এএসআই গুলি করে তার ২য় স্ত্রী আসমা এবং আসমার আগের পক্ষের সন্তান রবিন এবং কথিত প্রেমিক সাকিলকে গুলি করে হত্যা করেছে।

রবিবার(১৩ জুন) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

ঐ ৩ জনকে গুলি করে হত্যার পরে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে সৌমেন রায় তাদের উদ্দেশ্যে আতংক ছড়ানোর জন্য গুলি চালায়। এসময় স্থানীয়রা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে তাকে থামানোর চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে ঘাতক সোমেন রায়ের অস্ত্রের গুলি ফুরিয়ে গেলে উপস্থিত বিক্ষুব্ধ জনতার আক্রমনে ঐ ৪তলা ভবনের ভেতর ঢুকে গা ঢাকা দেয়। পরে পুলিশ এসে বিক্ষুদ্ধ জনতাকে সরিয়ে দিয়ে ঘাতক সৌমেনকে গ্রেফতার করে এবং কঠোর পুলিশি পাহারায় তাকে জেলা ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।এসময় তার কাছ থেকে তার সার্ভিস পিস্তলটি উদ্ধার করে পুলিশ।

এএসআই সৌমেনের বর্তমান কর্মস্থল খুলনার ফুলতলা থানায়। আসমা কুমারখালীর নাতুড়িয়া গ্রামের আমির শেখের মেয়ে ও তার কথিত প্রেমিক সাকিলের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের কারিগরপাড়ার মেজবাউর রহমানের ছেলে। সে কুষ্টিয়ার বিকাশের এসআর হিসাবে কর্মরত ছিলো।

নাতুড়িয়া গ্রামের এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, ৯/১০ বছর আগে কাঞ্চনপুর গ্রামের সুজন নামের এক ব্যাক্তির সাথে আসমা খাতুনের পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। সেখানের তার একটি কন্যা সন্তানও আছে। সুজনের সাথে সংসার করার সময় পাশ্ববর্তি কাঞ্চনপুর গ্রামের রুবেল নামে এক যুবকের সাথে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ে আসমা। তার জেরে সুজনকে তালাক দিয়ে রুবেলকে বিয়ে করে আসমা খাতুন। এই সংসারেও আসমার একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। তার নাম রবিন। রবিন জন্ম নেওয়ার কয়েকমাস পর রুবেলের সাথে বনিবনা না হওয়ায় রুবেলকে তালাক দিয়ে রুবেলের নামে মামলা করে আসমা খাতুন। সেই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান এএসআই সৌমেন রায়।

এই মামলার তদন্তের সুত্রে আসমাদের কুষ্টিয়ার বাবর আলী গেট সংলগ্ন ভাড়া বাসায় যাতায়াত শুরু হয় সৌমেনের। সেখান থেকে পরিচয় এবং সম্পর্কে জড়িয়ে পরে আসমা এবং সৌমেন। রুবেল এর সাথে তালাক হয়ে যাওয়ার পরে সৌমেন আসমাকে বিয়ে করে। যদিও এলাকাবাসী বলছে তাদের বিয়ের ব্যাপারটা তারা জানে না। তবে তাদের চলাফেরা ছিলো স্বামী স্ত্রীর মতো এটা সবার চোখে পড়েছে। আসমাকে বিয়ের কিছুদিন পর সৌমেনের বদলি হয় বাগেরহাটে। তারপরে বাগেরহাট হয়ে বর্তমানে খুলনার ফুলতলায় যোগদান করে। সৌমেনের অনুপস্থিতিতে সৌমেনেরই পরিচিত বিকাশ এজেন্ট সাকিলের সাথে পরিচয় হয় আসমার এবং তারা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।

সাকিলের মা জানায়, গত ২ মাস আগে সৌমেন তার বাসায় এসে তার বউ এর সাথে সাকিলকে ফোনে কথা বলতে নিষেধ করে এবং হুমকিও দিয়ে যায়।

আসমার বাবা আমির শেখ বলেন, তার মেয়ে আসমার সাথে কয়েক বছর আগে সৌমেনের বিয়ে হয়েছে। তবে কবে কোথায় বিয়ে হয়েছে সেটা আমার জানা নেই। আর আসমার ছেলে নিহত রবিন তার আগের স্বামী রুবেলের সন্তান। আজ সকালে (গতকাল) সৌমেন ফোন করে বলে আসমাকে খুলনায় নিয়ে যাবে। কিন্তু এই কথা শুনে আসমা যেতে অস্বীকার করে। পরে আমি খবর পায় আমার মেয়েকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুষ্টিয়া পুলিশের একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বলেন, এএসআই সৌমেন পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, সে রবিবার সকালে বাসযোগে তার নিজের সার্ভিস পিস্তল এবং ২টি ম্যাগজিনে ১২ রাউন্ড গুলিসহ কুষ্টিয়া আসে। আসার পথেই মুঠো ফোনে আসমাকে খুলনায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। এতে আসমা অস্বীকার করলে আসমাকে তার সন্তানসহ কাষ্টম মোড়ে আসতে বলে। এরপর ফোন করে সাকিলকেউ কাষ্টম মোড়ে আসতে বলে। কাষ্টমমোড়ে এসে সৌমেনের সাথে আসমার কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সৌমেন তার পিস্তল বের করে আসমা ও সাকিলকে গুলি করে। তাদের গুলি করা দেখে শিশু রবিন দৌড় দিলে তাকেও গুলি করে। এসময় আতংক সৃষ্টির জন্য সৌমেন মোট ১১ রাউন্ড গুলি চালায়। গুলির শব্দ শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে সৌমেন কাষ্টামমোড়ের ৪তলা ভবনে অবস্থান নেয়।

খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ও কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ঘটনায় ৩ সদস্যে করে আলাদা ২টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই সাথে ঘাতক সৌমেন কে এএসআই পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে পুলিশ সুত্রে জানা গেছে।

কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম বলেন, এএসআই সৌমেন পুলিশ সদস্য হলেও এই ঘটনাটি তার ব্যক্তিগত অপরাধ। তার পরকিয়া প্রেম ও দাম্পত্তের কলহের কারনেই এই ঘটনার সুত্রপাত। সৌমেনকে একজন খুঁনি হিসাবে দেখেই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে, রোববার বিকেলে নিহত ৩ জনের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা তাপস কুমার সরকার এ ময়নাতদন্ত করেন। ময়নাতদন্ত শেষে তিনি জানান, তিনজনকে দুটি করে ছয়টি গুলি করা হয়েছে।

প্রত্যেকের মাথায় কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে। তবে একজনেরও গুলি পাওয়া যায়নি। প্রথমে শাকিল খানের ময়নাতদন্ত করা হয়। তাঁর মাথার বাম পাশে গুলি করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ডান পায়ের ঊরুতে গুলির চিহ্ন রয়েছে। এরপর আসমা খাতুনের ময়নাতদন্ত করা হয়। আসমার মাথা ও গলায় গুলির চিহ্ন রয়েছে। সবশেষে শিশু রবিনের (৬) ময়নাতদন্ত করা হয়। রবিনের মাথায় ও পিঠে গুলির চিহ্ন রয়েছে। তবে কারও গুলিই পাওয়া যায়নি। গুলিগুলো শরীর ভেদ করে বাইরে চলে গেছে।

ধারণা করা হচ্ছে, রবিনকে দৌড়ে পালানোর সময় পেছন থেকে পিঠে গুলি করা হয়। এরপর পড়ে গেলে তার মাথায় গুলি করা হয়। পিস্তলসহ আটককৃত পুলিশের এএসআই সৌমেন রায় এর বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার কসবা গ্রামে।

এ দিকে কুষ্টিয়া পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সৌমেন রায় ২০১৫ সালে কনস্টেবল থেকে এএসআই পদে উন্নীত হন। পরে ২০১৬ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানায় যোগদেন। সেখান থেকে জেলার অন্যান্য থানায়ও কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ মিরপুর থানার হালসা ক্যাম্পে ছিলেন। এরপর বাগেরহাট হয়ে খুলনা ফুলতলা থানায় যোগ দেন। এ দিকে শাকিল খানের বাবা মেজবার রহমান বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় সৌমেন রায়কে একমাত্র আসামি করে মামলা করা হয়েছে। যার নং-৩৯, তারিখ : ১৩.০৬.২

টুটুল/বার্তা বাজার/টি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর