বেড়ায় আ’লীগ নেতা হত্যা মামলার আসামি ও বালুদস্যু ফজরের নামে মামলা

পাবনা বেড়া উপজেলার হাঁটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজর আলীসহ মোট পাঁচ জনের বিরুদ্ধে বালু মহাল আইনে মামলা হয়েছে।

বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সবুর আলীর নির্দেশনায় শুক্রবার (১১জুন) রাতে হাঁটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) মো. নজরুল ইসলাম বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, হাঁটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের ভুমি অফিসের অন্তর্গত পেঁচাকোলা মৌজার যমুনা নদীর পশ্চিম পাশ সংলগ্ন ৪ নং ইউপি সদস্য মো. ছিল্টুর বাড়ির পাশে ফাকা জায়গায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অন্য কোন জায়গা হতে অবৈধ ভাবে বালু উত্তলন করে পুকুর ভরাট করছে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে পুকুর ভরাটের সত্যতা পাওয়া যায়।

স্থানীয় স্বাক্ষীগণ ও গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নুহু মোল্লা (৪২), মো. মুকুল হোসেন (৪১), হালিম (৪০), মো. ফজর আলী, মো. মিজানুর রহমান (মিজান) ও তাদের সাথে অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জন আসামী পরস্পর যোগসাজসে অবৈধভাবে পুকুর ভরাট করে আসছিল। আসামীদের বিরুদ্ধে বালু মহাল ও মাটি ব্যাবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ১৫(১) তৎসহ বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষন আইন ১৯৯৫ এর ৬(ঙ) ধারায় বেড়া মডেল থানায় নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও একাধিক সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের (০৭ জুন) উপজেলার হাঁটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের নতুন পেঁচাকোলা গ্রামে আসামি ফজর আলীর নের্তৃত্বে একটি চক্র যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে পুকুর ভরাট করার সময় ওই গ্রামের আজম আলীর ছয় বছরে ছেলে আসাদুল্লাহ নিখোঁজ হওয়ার পর অবৈধ বালির নিচে চাপা পড়েছে আশঙ্কা করে পরিবার ও এলাকাবাসি।

শত চেষ্টার পরও নিখোঁজের সাত দিনেও মেলেনি ছেলেটির খোঁজ। নিখোঁজ আসাদুল্লাহ অবৈধ বালির নিচে চাপা পড়ার খবরে এলাকায় ব্যাপক হৈ-চৈ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় “অবৈধ বালুর নিচে চাপা পড়ে শিশু নিখোঁজ” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। দীর্ঘ সময় শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় প্রশাসন।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ফজর আলী একজন চিহ্নিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হওয়ার পরও দলের প্রভাবশালী নেতাকর্মীদের ছত্রছায়া হয়েছেন হাঁটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এ নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে ক্ষোপ ও প্রতিবাদ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সম্প্রতি ২০১৪ সালে বেড়া উপজেলার হাঁটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোকাদ্দেস আলী মুকুল ওরফে মখলুকে (৪৫) প্রকাশে কুপিয়ে হত্যা করে আসামী ফজর আলী ও তার আপন ছোট ভাই ইজ্জত তার ভাগ্নে তারেক, মাজেম মোল্লা, মানিকসহ কতিপয় এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী।

নিহত মোকাদ্দেস আলী মখলু হাঁটুরিয়া পূর্বপাড়া গ্রামের শিকার আলীর ছেলে। সেই সময় ঘটনার পর নিহতের ভাই আব্দুস ছাত্তার মোল্লা বাদী হয়ে হাঁটুরিয়া গ্রামের মৃত্য আজাহার প্রামানিকের ছেলে ফজর আলী, ইজ্জত, তারেক, মাজেম মোল্লা, মানিকসহ ৯ জনকে আসামি করে বেড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।

মাজেম মোল্লা (৫৫) ও মানিক হোসেন (৩০) নামের দুই ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করলে তারা জামিনে বেড়িয়ে আসে। বাকি অন্য আসামিরা আগাম জামিন নেয়।

এছাড়াও ২০১৮ সালের মার্চ মাসে উপজেলার মোহনগঞ্জ সরদারপাড়া গ্রামের মোঃ ইকবাল হোসেন ও তার বড় ছেলে মোঃ মেহেদী হাসানের (সেনাবাহিনীর সৈনিক) এর বিয়ের অনুষ্ঠানে অপহরণকারীর প্রধান ফজর আলী তার বাহিনী নিয়ে ইককবাল হোসেনের বাড়িতে গিয়ে প্রকাশ্যে এক লাখ টাকা চাদা দাবি করেন।

এসময় চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে ঐদিন রাত সাড়ে আটটার দিকে ইকবাল হোসেনের মেজ ছেলে আব্দুল্লাহ তানভিন তনুকে মোহনগঞ্জ বাজার থেকে জোর করে মোটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে যায়। পরে পেঁচাকেকালা নদীর ঘাটে নিয়ে তাকে মারপিট করে মুক্তিপনের টাকা দাবি করে।
তনুর বাবা মুক্তিপনের ৬০ হাজার টাকা নিয়ে ফজর আলীকে দেয়। এখবর পেয়ে বেড়া থানা পুলিশ এলাকাবাসির সহযোগিতায় শীর্ষ সন্ত্রাসী, অপহরণককারী বাহিনীর প্রধান ফজর আলীকে গ্রেফতার করে। এসময় তার ছোট ভাই ইজ্জত, ভাগ্নে তারেক,শরিফুল ইসলাম,সাইদুল ইসলাম সহ বাহিনীর সবাই পালিয়ে যায়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ফজর আলী’র সাথে মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

বেড়া থানার ওসি অরবিন্দ সরকার বলেন, অপরাধী যেই হোক তাদের ছার দেয়া হবে না। সে যত প্রভাবশালী হোক না কেন। ইতোমধ্যে ফজর আলীকে প্রধান করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামীরা সকলেই পলাতক। তাদের ধরতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে জানালেন তিনি।

প্রসঙ্গত ফজরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজী,সন্ত্রাসী,অপহরণ,ডাকাতি,খুন,ছিন্তাইসহ ডজনখানেক মামলা ছিল। ২০১৮ সালে ডজন খানেক মামলার আসামি ফজর আলী’র আপন ছোট ভাই ইজ্জত আলী পুলিশের সঙ্গে বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হয়।

মাসুদ রানা/বার্তা বাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর