ছেলের পাতা শিয়াল মারার ফাঁদে বাবার মর্মান্তিক মৃত্যু!

মারতে চেয়েছিলেন শিয়াল। ভাগ্যের নির্মাম পরিহাস সেই শিয়াল মারা ফাঁদে মর্মান্তিক মৃত্যু হল হোসেন আলী সরকার (৬০) নামের বৃদ্ধ পিতার। শিয়াল মারা ফাঁদে পড়ে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ল পিতা। মৃত্যুর আগে জীবিত অবস্থায় কেউ দেখতেও পেল না তাকে। পথচারীর দেয়া খবরে ছুটে গেলেন সবাই।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখলেন মাটিতে পড়ে আছে পিতার নিথর দেহ। মুহুর্তেই কান্নায় ভারি হয়ে উঠে বাতাস। ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহীর বাগমারায়। উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের ইসলাবাড়ি গ্রামে। ছেলে রেজাউল করিমের মুরগীর ফার্ম দেখাশোনা করতেন হোসেন আলী।

রবিবার (১৩ জুন) ভোরে ফজরের আজান হলে প্রতি দিনের মতো মসজিদে নামাজের উদ্দেশ্যে যান তিনি। নামাজ শেষে ভোরে আবারও রেজাউলের মুরগীর ফার্মে দিকে রওনা হন। মুরগীর ফার্মের দিকে আসার পথে সামনে পড়ে হোসেন আলী সরকারের বড় ছেলে আমিন এর মুরগীর ফার্ম। আমিনের মুরগীর ফার্মে শিয়াল মারার জন্য বিদ্যুতের লাইনের সাথে সংযোগ দিয়ে ফার্মের চারি পাশে পাতা ছিল জিআই তারে শিয়াল মারা ফাঁদ। এদিকে ওই ফাঁদের নিকটে আমের গাছ থেকে একটি আম পড়ে ছিল। সেই আম তুলে নিতে গিয়ে শিয়াল মারা ফাঁদে আটকে পড়েন হোসেন আলী সরকার। সেখানেই ঘটে তার মর্মান্তিক মৃত্যু।

আমিনের সেই ফার্মের পাশেই রয়েছে একটি রাস্তা। সেই রাস্তা দিয়ে ভোরে একটি মহিলা হাটছিলেন। হাটার সময় হোসেন আলীকে দেখতে পায়। পরে তার বাড়িতে খবর দেয়া হলে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসেন পরিবারের লোকজন। প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসককে নিয়ে আসলে তিনি মৃত বলে ঘোষণা করেন। তাতেও নিশ্চিত না হয়ে হোসেন আলী সরকারকে ভবানীগঞ্জের একটি বেসরকারী ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানেও একই কথা বলেন চিকিৎসক। পরে বাড়িতে নিয়ে জানাযার ব্যবস্থা করেন।

স্থানীয়রা জানান, হোসেন আলী সরকারের তিন ছেলে এর মধ্যে আমিন এবাং রেজাউল মুরগীর ফার্ম রয়েছে। আরেক ছেলে জাহিদুল ইসলাম তিনি কৃষি কাজ আর ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। হোসেন আলীর বড় ছেলে আলাদা ভাবে স্ত্রী সন্তান নিয়ে অন্যত্র সংসার করছেন। মেঝ ছেলেকে নিয়ে এক সাথে সংসার করছেন তিনি। মেঝ ছেলের মুরগীর ফার্ম দেখাশোনা করেন তিনি। বড় ছেলের সাথে সাংসারিক কলোহের কারণে আলাদা করে দেন হোসেন আলী। বর্তমানে মেঝ ছেলেকে সাথে নিয়ে সংসারের কাজকর্ম করে থাকেন। মেঝ ছেলে রেজাউলের মুরগীর ফার্ম দেখলেও মৃত্যু হলে হলো বড় ছেলে আমিনের মুরগীর ফার্মে পাতা শিয়াল মারা ফাঁদে।

এটা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। রবিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় জানাযা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে হোসেন আলী সরকারকে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে মৃত্যু হয়েছে। গোপন করা হয়েছে শিয়াল মারা ফাঁদ। এলাকাবাসীর প্রশ্ন মুরগীর ফার্মের চারিপাশে কেন বিদ্যুতের লাইন দিতে হবে। এতে তার পিতা না পড়ে অন্যকেউ তো পড়তে পারতো।

পল্লী বিদ্যুতের বাগমারা জোনাল অফিসের ডিজিএম মিনারুল ইসলাম বলেন, কেউ যদি বিদ্যুতের তার অরক্ষিত রেখে কোন অপ্রীতির ঘটনা ঘটায় তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোন ভাবেই বিদ্যুতের অবচয় করা যাবেনা। বিদ্যুতের অবচয় করা আইননত দন্ডণীয় অপরাধ।

এ ব্যাপারে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বৃদ্ধার মৃত্যুর ঘটনায় থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে।

মোঃ নবী আলম/বার্তাবাজার/পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর