প্রস্তাবিত ভ্যাটের প্রভাবে অগণিত শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার স্বপ্নের বাতি নিভে যাচ্ছে

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। এই বাক্য শুধু বইয়ে বা খাতায় লিপিবদ্ধ কোনো উক্তি নয়,এটি একটি বাস্তবতার নিরিখে পর্যবেক্ষণ করা চরম সত্য বাক্য।

এখন বিষয় হলো এই বাক্যটি আমি বা আমরা সর্বোপরি জাতি হিসেবে কতটুকু হৃদয়ে লালন করছি।

এবার আসি মূল আলোচনায় বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে আয়তনের তুলনায় ঘনবসতিপূর্ণ দেশের তালিকায় থাকা অন্যতম এক দেশ। এদেশে নিঃসন্দেহে শিক্ষার মান আগাচ্ছে তবে প্রতিবছর যে হারে শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিক এর গন্ডি টপকায় সেই অনুপাতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটের সংখ্যা অতি নগণ্য। তাই স্বভাবতই ভর্তি যুদ্ধে পরাজিত সৈনিকের সংখ্যা অগণিত কিন্তু খুশির বিষয় হলো এই আক্ষরিক অর্থের পরাজিত সৈনিকরা প্রকৃত এবং বাস্তবমুখী জয়ের প্রত্যাশায় প্রাইভেট এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কেই বেছে নেয়।

প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার্থীরা পাবলিক অথবা প্রাইভেট যেই বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ুক না কেন যোগ্যতা তার নিজেকেই প্রমাণ করতে হয়।
আর তাছাড়া বর্তমানে পাবলিকের পাশাপাশি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সফলতাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। আগে অনেক অভিভাবক ও ব্যক্তিবিশেষের ধারণা ছিল; ‘প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট বিক্রি করে থাকে’। তবে সময়ের পরিক্রমে আজ সে ধারণা বদলে গিয়েছে। বিগত বছরগুলোতে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির অভূতপূর্ব সফলতা এবং দেশের বিভিন্ন জব সেক্টর, করপোরেট প্রতিষ্ঠানের গন্ডি পেরিয়ে গুগল, ফেসবুক সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিনন্দন ফলাফল সমালোচকদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে।

গুটিকয়েক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ছাড়া বেশিরভাগ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি দক্ষ শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী দ্বারা যখন মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে বদ্ধপরিকর, ঠিক সেই মুহূর্তে আঘাত হানলো করোনা নামক ভয়ানক ব্যধি। ভয়াবহ এই অভিশাপের ছোবলে চাকরি হারিয়েছে এবং ব্যবসায় ধস নেমেছে অগণিত মানুষের। সর্বপরি আর্থিকভাবে এক-তৃতিয়াংশ মানুষ যখন ক্ষতিগ্রস্ত ঠিক তখন চোখের সামনে অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে ঝরে পড়তে দেখেছে জাতি এবং ঠিক এই সময়টাতে এক চরম সত্য উন্মোচন হয়ে অনেকের ভুল ধারণা ভেঙ্গেছে যে ‘প্রাইভেট ইউভার্সিটিতে শুধু ধনীর ছেলেরাই পড়ে’।

মূলত বাস্তবতা হলো এই; উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী এবং পাবলিক ইউভার্সিটির সিটের সঠিক অনুপাত না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী নিজের স্বপ্ন, সফলতা এবং সর্বোপরি জাতিকে কিছু দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিকেই বেছে নেয়। আর এই কাতারের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই বাবার স্বল্প বেতনের কষ্টার্জিত টাকা, বাবার লোনের টাকা, জমি বিক্রির টাকা, টিউশনির টাকা, এছাড়াও অনেকে খন্ডকালীন চাকরির টাকা দিয়ে তাদের টিউশন -ফি প্রদান করে থাকে। কিন্তুু বিধাতার নির্মম পরিহাসে, করোনাকালীন সময়ে আর্থিক টানাপোড়েনে অনেক শিক্ষার্থীই তাদের স্বপ্নকে বিসর্জন দিতে বাধ্য হচ্ছে।

এই যখন অবস্থা তখন ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির উপর ১৫% ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। যা মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা এবং সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌছানোর বাতি যতটুকু টিঁম টিঁম করে জ্বলছিল ততটুকুও নিভিয়ে দেওয়ার সামিল।

মূলত শিক্ষায় ভ্যাট নামক এই স্বপ্ন-ভঙ্গের হাতিয়ারের সূচনা হয়েছিলো ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের খসড়া বাজেটে। তখন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির উচ্চশিক্ষার উপর ১০% কর আরোপ করা হয়েছিল, পরবর্তীতে প্রচুর সমালোচনা এবং শিক্ষার্থীদের আহাজারিতে ৭.৫% করার সিদ্ধান্ত নিলেও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের সূদুর প্রসারি এবং দক্ষ বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত থেকে ২০১৫ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর সরে আসা হয়েছিলো।

পরিশেষে একটাই অনুরোধ; ভ্যাট নামক এই বোঝা অগণিত শিক্ষার্থীর উপর চাপানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্নের বাতি জ্বালিয়ে রাখবেন। সেই সাথে আমরাও অঙ্গিকার করছি দেশ ও জাতির কল্যাণে মেধা ও শ্রম দিয়ে অবদান রাখব “ইন শা আল্লাহ”।

লেখকঃ
আহনাফ আহমেদ
শিক্ষার্থী,
ইইই বিভাগ,
গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।

বার্তাবাজার/পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর