অস্ত্রহাতে গণপূর্ত বিভাগের কার্যালয়ে আ’লীগ নেতাদের মহড়া (ভিডিওসহ)

প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্রহাতে পাবনা গণপূর্ত বিভাগের কার্যালয়ে মহড়া দিয়েছেন ২৫-৩০ জনের একটি দল। অনেকের হাতে দেখা যায় আগ্নেয়াস্ত্রও। পেশায় ঠিকাদার এসব ব্যক্তি আওয়ামী লীগের পদেও অধিষ্ঠিত বলে জানা গেছে।

ঘটনাটি গত ৬ জুনের। তবে সম্প্রতি গণমাধ্যমের হাতে এসেছে ওই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ। ফুটেজটি প্রকাশ হলে ঘটনাটি নিয়ে জন্ম হয় ব্যপক সমালোচনার।

অস্ত্রহাতে মহড়া দেওয়া ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত করে গণপূর্ত বিভাগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ৬ জুনের ওই ঘটনায় নেতৃত্ব দেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাজী ফারুক। তার সঙ্গে ছিলেন পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ আর খান মামুন এবং জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালু।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ৬ জুন দুপুর ১২টার দিকে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ফারুক হোসেন জামার হাতা গুটিয়ে সদলবলে পূর্ত ভবনে ঢুকছেন। তার পেছনে শটগান হাতে পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ আর খান মামুন এবং জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালু। অস্ত্র নিয়েই তারা কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে ঢুকতে দেখা গেছে। ওই সময় তাদের সঙ্গীরা বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন। ১২টা ১২ মিনিট পর তারা ফিরে যান।

সূত্র জানায়, আগতরা বিভিন্ন কক্ষে ঢুকে নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমকে খুঁজছিলেন। এক পর্যায়ে তারা উপ সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের কক্ষে গিয়ে তার টেবিলে আগ্নেয়াস্ত্র রেখে অপেক্ষা করতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর তারা বের হয়ে যান।

বিষয়টি এরই মধ্যে ব্যাপক আলোচনায় এলেও প্রভাবশালী ঠিকাদার ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের চাপে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছিলো। কিন্তু সর্বশেষ গত সপ্তাহে জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপন হলে জানাজানি হয়ে যায়।

পাবনা গণপূর্ত বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নিয়ে প্রভাব বলয় তৈরি করে উন্নয়ন কাজের কোটি কোটি টাকার টেন্ডার নিজেদের আয়ত্বে নিতে চেষ্টা করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বে থাকা ঠিকাদাররা। তাদের দাপটে অনেক পেশাদার ঠিকাদাররা গণর্পূর্ত বিভাগে টেন্ডার জমা দিতে পারেন না। এই কাজ নির্বিঘ্ন করতে অফিসের প্রকৌশলী ও কর্মরতদের নিজেদের পক্ষে নিতে তারা নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করেন। সূত্র বলছে, গত ৬ জুনের ঘটনা তারই ধারাবাহিকতায় ঘটেছে বলে তারা মনে করেন।

বিষয়টি স্বীকার করে পাবনা গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ঠিকাদারেরা তার কক্ষে গিয়েছিলেন এবং তার টেবিলে অস্ত্র রেখে নির্বাহী প্রকৌশলীর খোঁজ করছিলেন।

এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিম জানান, ঘটনার সময় তিনি অফিসের বাইরে ছিলেন। তবে, পরে তিনি নিজেও সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছেন। তাতে অস্ত্র হাতে অনেকে পূর্ত ভবনে ঢুকেছেন তা দেখতে পেয়েছেন। তবে তাকে সরাসরি বা ফোনে কোন হুমকি দেয়া হয়নি

অস্ত্র নিয়ে এমন মহড়ার কারণ জানতে চাইলে সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাজী ফারুক বলেন, আমি গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদার নই। বিল সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে মামুন ও লালু আমাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলো। তবে, এভাবে যাওয়া আমাদের উচিত হয়নি।

পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ আর খান মামুন বলেন, নিজের নিরপত্তার স্বার্থে বৈধ লাইসেন্সকৃত অস্ত্রটি নিয়ে আমি ব্যবসায়িক কাজে ইট ভাটায় যাচ্ছিলাম। যাবার পথে নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমের সাথে কথা বলতে গণপূর্ত বিভাগে যাই। কিন্তু তিনি না থাকায় আমরা ফিরে আসি।

তবে যুবলীগ নেতা শেখ লালু দাবি করছেন, ভুল করে তিনি অস্ত্র নিয়ে অফিসে ঢুকে পড়েছিলেন।

এ ব্যাপারে পাবনার পুলিশ সুপার মুহিবুল হক খান বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। অস্ত্র আইনের শর্ত ভঙ্গ হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ভিডিও …

বার্তা বাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর