কলেজের পাশের জঙ্গল থেকে নবজাতক উদ্ধার

বগুড়ায় সরকারি আজিজুল হক কলেজে নতুন ভবনের শহীদ মিনারের পাশে জঙ্গলের ভেতরে পড়ে থাকা এক নবজাতককে ওই কলেজেরই দুই শিক্ষার্থীর সহায়তায় উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গতকাল বুধবার (২০ মার্চ) রাত ১১টায় শিশুটিকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঠোঁট ও তালুকাটা শিশুটিকে বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) বিকেলে এসওএস শিশু পল্লীতে পাঠানো হয়েছে। কন্যা শিশুটি সুস্থ রয়েছে।

জানা যায়, গত বুধবার রাতে নবজাতকটিকে কে বা কারা ওই স্থানে ফেলে যায়। এ সময় নবজাতকের কান্না শুনতে পান ক্যাম্পাসে হাঁটতে বের হওয়া কলেজের দুই শিক্ষার্থী শামীম রেজা ও এমবিএর আবদুল্লাহ। তাঁরা কাছে গিয়ে নবজাতকটিকে পড়ে থাকতে দেখে ৯৯৯–এ ফোন করেন।

রাত ১০টার দিকে বগুড়া শহরের স্টেডিয়াম ফাঁড়ি পুলিশ নবজাতকটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া নবজাতকটির মা-বাবার পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।

ওই হাসপাতাল ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুল আজিজ মণ্ডল বলেন, নবজাতকটি হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু বিভাগের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। নবজাতকের ঠোঁট ও তালুকাটা। এ কারণে নিঃসন্তান এক দম্পতি শিশুটি দত্তক নিতে এসেও ফিরে গেছেন। তবে হাসপাতালে শিশুটির দেখভাল করছেন শহরের খান্দার এলাকার পারভীন বেগম নামের এক নারী।

বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শামীম রেজা বলেন, তাঁরা রাতে কলেজ ক্যাম্পাসে হাঁটছিলেন। এ সময় কলেজ ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার–সংলগ্ন এলাকায় ছোট ছোট গাছের ঝোপ থেকে নবজাতকের কান্না শুনতে পান। পরে সেখানে গিয়ে ফুটফুটে নবজাতকটিকে সুস্থ অবস্থায় দেখতে পান। এ সময় গায়ের গেঞ্জি খুলে নবজাতকটিকে মুড়িয়ে সাহায্যের জন্য ৯৯৯–এ ফোন করেন। কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ও শিশুরোগ বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার আজিজুল হক বলেন, নবজাতকটি মেয়ে। তার বয়স এক দিন হতে পারে। ওজন আনুমানিক আড়াই কেজি। জন্ম থেকেই তার ঠোঁট ও তালু কাটা। সে সুস্থ রয়েছে। খবর পেয়ে শিশুর দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক এক দম্পতি গতকাল সকালে হাসপাতালে আসেন। কিন্তু নবজাতকের ঠোঁট কাটা হওয়ায় তাঁরা ফিরে যান।

শজিমেক হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. নাসরিন জাহান জানান, শিশুটিকে যখন হাসপাতালে আনা হয় তখন তার হাত-পা ঠাণ্ডা ছিল। গায়ের রঙ নীল হতে শুরু করেছিল। দ্রুত তাকে স্যালাইন দেওয়া হয় এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়।

তিনি বলেন, ‘আজ সকালে (বৃহস্পতিবার) আমি শিশুটিকে দেখেছি। সে অনেকটাই সুস্থ। তবে জন্মগতভাবেই ঠোঁট ও তালুকাটা হওয়ার কারণে শিশুটি নিজে থেকে দুধ খেতে পারে না। বিকেল ৪টার দিকে ফজলুল হক নামে পুলিশের স্থানীয় স্টেডিয়াম ফাঁড়ির এক সাব ইন্সপেক্টর শিশুটিকে নিয়ে যায়। শুনেছি শিশুটিকে কোনো এতিম খানায় নেওয়া হয়েছে। তবে এই অবস্থায় শিশুটিকে না পাঠিয়ে হাসপাতালে আরও কিছুদিন রাখা উচিত ছিল। কারণ যেহেতু সে নিজে থেকে দুধ টানতে পারে সে কারণে তাকে বিশেষভাবে পরিচর্যা করা প্রয়োজন।’

বগুড়া সদর থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামান জানান, সরকারি আজিজুল হক কলেজের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র শামীম রেজা এবং বিবিএতে অধ্যয়নরত আব্দুল্লাহ্ বুধবার রাত ১০টার দিকে কলেজের শহীদ মিনারের পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পান। এরপর তারা শহীদ মিনারের পাশে জঙ্গলের ভেতরে একটি শিশুকে পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর তারা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেন।

তিনি বলেন, ‘৯৯৯ থেকে আমাকে ফোন করে নবজাতক শিশু পড়ে থাকার কথা জানানো হয়। এরপর পার্শ্ববর্তী স্টেডিয়াম ফাঁড়ির ইনচার্জ মোস্তাফিজ হাসানকে সেখানে পাঠানো হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় শিশুটির গায়ে কোনো কাপড় নেই। ওই দুই ছাত্র নিজেদের টি-শার্ট শিশুটির গায়ে জড়িয়ে দেয়। পরে কন্যা শিশুটিকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শজিমেক) শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

প্রসঙ্গত, চলতি মাসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী হোস্টেলের ট্রাংকের ভেতর থেকে একটি নবজাতক উদ্ধার হয়। সরকারি আজিজুল হক কলেজ চত্বরেও বেগম রোকেয়া ছাত্রী হোস্টেল রয়েছে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর