কিডনি বিক্রি করে ছেলের স্বপ্ন পূরণ করতে চান বাবা

গ্র্যাজুয়েশন শেষে মনের মতো চাকরি খুঁজছিলেন জয়েশ প্যাটেল। কিন্তু চাকরি পাওয়ার আগেই ভয়াবহ এক দুর্ঘটনায় চোখের জ্যোতি হারিয়ে ফেলেন তিনি। সেই সঙ্গে হারিয়ে যায় তার ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্নও।

ছেলেকে যেন তার স্বপ্ন হারাতে না হয়, তাই নিজের কিডনি বিক্রি করে সন্তানকে ডাক্তার বানানোর পরিকল্পনা করেছেন জয়েশ।

বার্তা সংস্থা এএনআই জানায়, ভারতের গুজরাট রাজ্যের সুরাট জেলার উপসাল গ্রামের অধিবাসী জয়েশ ও তার পরিবার। ১৯৯৫ সালে স্নাতক শ্রেণির পাঠ চুকিয়ে চাকরি খুঁজতে শুরু করেন তিনি। স্বপ্ন ছিল, ভালো কোনো চাকরি নিয়ে দরিদ্র পরিবারের পুরো ভার কাঁধে নেবেন। খুচরো আয়ে আর চলছে না।

কিন্তু ভাগ্য যেন অন্যকিছু ভেবে রেখেছিল গ্রামের দরিদ্র আদিবাসী অঞ্চলের এই স্বপ্নাতুর মানুষটির জন্য। চাকরি পাবার আগেই সড়ক দুর্ঘটনায় অন্ধ হয়ে যান জয়েশ প্যাটেল। ফলে তিনি পুরোপুরি অন্যদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এদিকে তার পরিবারের জন্য জীবনধারণও হয়ে ওঠে খুব বেশি কষ্টের।

পরিবারের খরচ চালানোর পুরো দায়িত্ব গিয়ে পড়ে জয়েশের স্ত্রীর কাঁধে। দু’বেলার খাবার জোটানোই সেই থেকে তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে উঠেছে।

কিন্তু সবকিছুর পরও ছেলে সাহিল বাড়ির কাছের একটি স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় তাকে লেখাপড়া করানোর সিদ্ধান্ত নেন জয়েশ। লেখাপড়ার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহী সাহিলও দশম শ্রেণিতে বোর্ড পরীক্ষায় ৯০.৫৯ শতাংশ নম্বর অর্জন করে আগের স্কুলের চেয়ে কিছুটা বেশি ব্যয়বহুল নতুন স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। কারণ তার আগের স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সুযোগ ছিল না। আর সাহিলের স্বপ্ন সে চিকিৎসক হবে।

এ পর্যন্ত মেধাবী সাহিলের শিক্ষকরা তাকে যতভাবে সম্ভব সহায়তা করে এসেছেন। তবুও তার পড়াশোনার পুরো ব্যয়ভার চালিয়ে নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পরিবারকে। আর এজন্যই নিজের কিডনি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জয়েশ প্যাটেল।

‘‘আমি সবসময়ই জানতাম, আমার ছেলে খুব মেধাবী। সে ক্লাস টেনের বোর্ড পরীক্ষায় খুব ভালো ফল করেছিল। সে ডাক্তার হতে চায়, কিন্তু তার এই স্বপ্নের আর্থিক যোগান দেয়ার সামর্থ্য আমার নেই।’’

‘যেহেতু আমি ১০ বছর আগে আমার চোখ হারিয়েছি, আমার স্ত্রীই এতদিন ধরে সংসার চালাচ্ছে। তাই আপাতত আমার ছেলের স্বপ্ন পূরণের জন্য কিডনি বিক্রি করা ছাড়া আমার কাছে আর কোনো পথ খোলা নেই,’ এনএনআই’কে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেন জয়েশ।

বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি সহায়তা পায়নি জয়েশের পরিবার।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর