মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চোখে পানি

গতকাল ছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের চার দশক। এক ঝড়-তুফানের দিনে তিনি পিতার হত্যার ছয় বছর পর দেশে ফিরেছিলেন। তাঁর প্রত্যাবর্তন মঙ্গলময় হয়েছিল বলে তিনি আজ প্রধানমন্ত্রী।

ঈদ পেরিয়ে চার দিন। ঈদ মুবারক বলতেও বুকে বাধে। ঈদ নিয়ে ঘরমুখো মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট দেখলে ব্যথায় বুক ভেঙে খানখান হয়ে যায়, আপনা থেকেই চোখে পানি আসে। এ দেশের মানুষ রাস্তাঘাটে এমন অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট করেছিল ১৯৭১-এর মার্চে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নির্মম আক্রমণে। আমার প্রিয় আমেরিকাপ্রবাসী ড. নুরুন্নবী তার বইয়ে লিখেছে, হানাদার পাকিস্তানিদের আক্রমণের আগে আগে হল ছেড়ে জিঞ্জিরা গিয়েছিল। পাঁচ-ছয় দিন জিঞ্জিরায় এ বাড়ি-ও বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে নবীনগর পৌঁছে। সেখান থেকে কখনো হেঁটে কখনো গাড়িতে তিন-চার দিনে বাড়ি ফিরেছিল। করোনায় আক্রান্ত বাংলাদেশে এ নিয়ে মনে হয় তিনবার লাখ লাখ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হলো।

গত বছর কোনো নোটিস ছাড়াই গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেওয়ায় রাস্তায় মানুষের ঢল নেমেছিল। ক’দিন যেতে না যেতে ফ্যাক্টরি খুলে দেওয়ায় আবার ফিরতি ঢল। অনেক বিজ্ঞ পন্ডিত অনেক রকম অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। কিন্তু তাদের মুখে ছাই দিয়ে শ্রমিকরা তেমন কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়নি। এ বছর ঈদযাত্রায় মারাত্মক দুর্ভোগের কারণ দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ, ছোট ছোট গাড়ি এক টাকার জায়গায় ১০ টাকা, ১০০ টাকার জায়গায় হাজার টাকা ভাড়া নিয়েছে। শুধু তাতেই কষ্ট আর বিড়ম্বনার শেষ নেই। রাস্তায় রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেআইনি বাধা ঈদযাত্রী ঘরমুখো মানুষের যন্ত্রণা বাড়িয়ে দিয়েছে শতগুণ।

কেউ কোনো সাধারণ বিচার-বুদ্ধি দিয়ে কাজ করে না। সবাই কেমন যেন কর্তার ইচ্ছাই কর্ম। এর মধ্যে সেদিন পাটুরিয়া ঘাটের কাছাকাছি এক মহিলা পুলিশের বক্তব্য হৃদয় স্পর্শ করেছে। চ্যানেলের লোকজন যখন জিজ্ঞেস করেন শক্তভাবে ব্যারিকেড কার্যকর করছেন না কেন? অসাধারণ মমতায় মহিলা পুলিশটি বলেছেন, ‘ঘরমুখো মানুষদের ফেরাতে বেশি শক্তি প্রয়োগ করলে, জোর-জবরদস্তি করলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে, জানমালের ক্ষতি হতে পারে। তাই আমরা অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করিনি।’ কি চমৎকার কথা। এ মেয়েটির কনস্টেবল না হয়ে এসপি হলে কত ভালো হতো। তার কি পরম বিবেচনাবোধ। বোধহীন প্রশাসনে এমন বিচার-বিবেচনার দু-চার জন থাকলে বাংলাদেশের অবস্থা বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার মতো হতো। অথচ ফেরিঘাটে হাজার হাজার মানুষ রোদে গরমে ছটফট করছে, পার করার কোনো উদ্যোগ নেই। ঈদের আগে বলা হয়েছিল, শনিবার থেকে ফেরি বন্ধ করে দেওয়া হবে, নিত্যপণ্য পরিবহনের জন্য রাতে দু-চারটা চলবে। প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন খুবই জরুরি। কিন্তু মানুষের চাইতে জরুরি কিছু নেই।

একটা দেশে সবার ওপরে মানুষ, মানুষের ওপর কিছু নেই। মানুষের ওপরে দয়াময় প্রভু পরম দয়ালু আল্লাহ, আর কেউ না। রাস্তাঘাট তৈরি করা হয় নির্বিবাদে গাড়ি-ঘোড়া চলার জন্য। গাড়ির জন্য রাস্তা, মানুষের জন্য গাড়ি। কিন্তু সেই মানুষ যখন গাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নামে তখন রাস্তা হয় মানুষের। তখন আর গাড়ি-ঘোড়া থাকে না। দু-এক জন রাস্তায় নামলে তাদের অবহেলা করা যায়, এড়িয়ে চলা যায়, সরিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামলে গাড়ি-ঘোড়াকেই সরে যেতে হয় মানুষের অবাধ চলাচলের জন্য। ইদানীং সেই বিচারবোধটাই কারও মধ্যে নেই। রাষ্ট্রব্যবস্থা সাধারণ মানুষের কল্যাণে, সাধারণ মানুষের সেবায়। সেই সাধারণ মানুষকে চাকর-বাকর ভাবলে তো চলবে না। রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ কর্মচারী-কর্মকর্তাদের আজ্ঞাবহ- এ ধারণাই ভুল। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কেন যে সাধারণ মানুষকে শ্রদ্ধা করতে শেখে না ভেবে পাই না। এদিকে আরিচা-পাটুরিয়ায় যারা ফেরি নিয়ে বসেছিলেন শত সহস্র মানুষের কষ্ট দেখে তাদের কি বিবেক একবারও নাড়া দেয়নি। ওদিকে শিমুলিয়ায় শিশুসহ ফেরি পার হতে গিয়ে পাঁচজন জীবন দিয়েছেন, সভ্য জগতে আমরা কী করে মুখ দেখাব? ফেরি পারাপারেও যদি লোকক্ষয় হয় নিরপরাধ মানুষ মারা যায় সভ্য বলে দুনিয়ার সামনে দাঁড়ানোর আমাদের কোনো মুখ থাকে?

ঈদে ঘরমুখো মানুষের জীবন দিয়ে ফেরি পার হতে হয়েছে। ফেরার পথে কী হবে সে তো আল্লাহই জানেন। জানি না কার নির্দেশে ফেরি বন্ধ, লঞ্চ বন্ধ, পারাপারের সব নৌযান বন্ধ। সেদিন এক স্পিডবোট দুর্ঘটনায় ২৬ জন মারা গেছেন। আমাদের দেশে মাতাল চালকের অভাব নেই। তাই বলে সব স্পিডবোট, লঞ্চ এবং ফেরি বন্ধ করে দিয়ে মানুষকে এ রকম মৃত্যুর দুয়ারে ঠেলে দেওয়া কোনো কাজের কথা নয়। দুর্ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু, ফেরি পারাপারে চাপাচাপিতে পাঁচজনের মৃত্যুর চাইতে কম নাকি বেশি? সুস্থভাবে বিচার করলে ফেরিতে উঠতে গিয়ে পাঁচজনের মৃত্যু কোনো দুর্ঘটনায় ৫ হাজারের মৃত্যুর চাইতে অনেক বেশি নিন্দনীয়। আমরা কেন তলিয়ে দেখি না। সবাই যদি তার বিচার-বিবেচনা নিয়ে কাজ করত তাহলে এমন জটিলতা অনেক সহজেই কাটিয়ে ওঠা যেত। শাজাহান খানের পর এখন কে নৌপরিবহনমন্ত্রী জানি না। বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কে? আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান করা হতো। এখন কাকে করা হয়েছে, কাকে করা হয় জানি না। ঘাটে সবকটি নৌযান চললে, ফেরিগুলো অবাধে চালালে এমন জট হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না তাহলে কারা এসব বন্ধ করল?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানিয়েছিলেন- করোনা থেকে বাঁচতে ঘরে থাকুন, যতটা সম্ভব কম নড়াচড়া করুন। জ্ঞানীরা কি ধরে নিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানুষকে ঘরে থাকতে বলেছেন। আর সাধারণ মানুষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমেছে তাই প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করার জন্য যারা রাস্তায় নেমেছে তাদের বাধা দিতে হবে। আমার তো তেমন মনে হয় না। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ কে মানেনি? আমি মেনেছি, আমার মতো হাজারো লাখো মানুষ ঘরে থেকে তাঁর অনুরোধের মূল্য দিয়েছে। আমি বলব, যারা রাস্তায় নেমেছিল তারও শতকরা ৯০ ভাগ প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ উপেক্ষা করে নয়, বরং মান্য করেই ঘরমুখো হয়েছিল। গরিবের ঘরমুখো হওয়া কলিজার বোঁটা ছেঁড়া টান সেটা ক্ষমতাবান বা সম্পদশালীরা বুঝবে না, তাদের বোঝার মতো মনও নেই।

সন্তানের মুখ দেখা, বাবা-মায়ের মুখ দেখা সে যে কি আকুলতা যাদের ভিতরে আপনজনের জন্য নাড়ি ছেঁড়া টান আছে শুধু তারাই বোঝে। তাই যারা রাস্তায় নেমেছিল তাদের সঠিক মর্যাদা দেওয়া উচিত, সাহায্য করা উচিত। ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গিয়ে শুনলাম, ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জায়নামাজে বসে কেঁদেছেন, কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন। বিশেষ করে অতিরিক্ত গরম এবং চাপাচাপিতে শিমুলিয়া ঘাটে শিশুসহ পাঁচজন মারা যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী কেঁদেছেন বেশি।

এখন যদিও যোগাযোগ অনেকটাই কম, ১৯৭৩-৭৪ সালে যোগাযোগ ছিল স্বচ্ছ কাচের মতো। যখন তখন বঙ্গবন্ধুর সামনে পেছনে আশপাশে যেতে পারতাম, দেখতে পারতাম বলতে পারতাম। ’৭৪-এ উত্তরবঙ্গে মঙ্গায় যখন খাবার না পেয়ে মানুষ মারা যাচ্ছিল বঙ্গবন্ধু এক বেলা খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। মাঝেমধ্যে দেখতাম কি বিচলিত কি কষ্ট। প্রধানমন্ত্রীর মা মাঝেমধ্যেই বলতেন, ‘কাদের তোমার নেতা তোমাকে খুব ভালোবাসে আদর করে। দেখ তো, তুমি কিছু করতে পার কি না। তোমার নেতা আজ কত দিন দুই বেলা খায় না। এক বেলা তাও পেট ভরে খাওয়াতে পারি না।’

আমি কাছে গেলে এ ব্যাপারে কথা বললে তিনি বলতেন, ‘তোরা আমাকে বঙ্গবন্ধু বানিয়েছিস, জাতির পিতা বানিয়েছিস মানুষ না খেয়ে থাকলে আমি খাই কী করে?’ কোনো উত্তর দিতে পারতাম না। সেদিন এর-ওর সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা জানাতে জানাতে নেত্রীর কারও কারও সঙ্গে কথা হয়। সেখানে তাঁর অতি কাছের দু-এক জন থেকে যখন শুনলাম, নেত্রী জায়নামাজে বসে আল্লাহর কাছে জারজার হয়ে কাঁদেন তখন বঙ্গবন্ধুর কথা বড় বেশি মনে পড়ে। বঙ্গবন্ধু কাঁদতেন মাথার চুল ছিঁড়তেন। তাই তাঁর মেয়ে তাঁর রক্ত দেশের মানুষের জন্য এমন কষ্ট পাবেন বা পান সেটা অবিশ্বাস করার কোনো কারণ দেখি না।

এমনিতেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাচ্চাদের ভীষণ ভালোবাসেন, আদর করেন। আমার চাইতে অনেক বেশি বাচ্চাদের প্রতি তাঁর আদর ভালোবাসা। বাচ্চাদের আদরে কোনো জাতপাত, গরিব-ধনী দেখেন না। বাচ্চা হলেই কোলে তুলে নেন। আমারও অমন দোষ আছে। বিয়ের পর প্রথম প্রথম পাশের বস্তির রিকশাওয়ালার ছেলে কোলে নিয়ে বারান্দায় বসে থাকতে দেখে আমার বউ একবার বেশ রাগ করেছিলেন। বাচ্চা কোলে নেওয়ায় যতটা না রাগ ছিল তার চাইতে অনেক বেশি ছিল তার হলুদ রঙের নাকের পেটায়। মাঝেমধ্যে দুই নাকের পেটা বের হচ্ছিল আবার ভিতরে যাচ্ছিল। যদিও ৪০-৪৫ বছরের বিবাহিত জীবনে আমার স্ত্রীরও এখন বাচ্চা আদরে কোনো কষ্ট নেই, তারও জাতপাতের কোনো বাছবিচার নেই। বাচ্চা হলেই হলো। সেটা রাজার না ফকিরের তা এখন আর আমার স্ত্রী বিবেচনা করেন না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাচ্চাদের আদরযত্ন করার প্রশ্নে আমাদের চাইতে শতগুণ এগিয়ে।

’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু যখন নিহত হন তখন দেশে কোনো খাদ্যাভাব ছিল না। ’৭৩-’৭৪-এ বঙ্গবন্ধু আহ্বান জানিয়েছিলেন, এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখা যাবে না। তাঁর আহ্বানে ঘরে ঘরে সাড়া পড়ে ছিল। তখন আমার ফরিদপুর-যশোর বেশ যাতায়াত ছিল। ৩-৪ একর জায়গা নিয়ে ফরিদপুরের সার্কিট হাউস। সার্কিট হাউসের এক বৃদ্ধ পিয়ন সেখানে ধান চাষ করেছিলেন। ৮০-৯০ মন ধান হয়েছিল। আমি তাকে চাষের জন্য ১৫-১৬ শ টাকা দিয়েছিলাম। ধান পাকলে ডিসির নাজির অর্ধেক নিয়ে নিতে চেষ্টা করেছিল। তখন ফরিদপুরের ডিসি ছিলেন মোহাম্মদ আলী। তাকে বলে সব ধান যে চাষ করেছে সেই পিয়নকে দিয়েছিলাম। শুধু ফরিদপুরে নয়, বাংলাদেশের সব জায়গায় ধান-পাট-শাকসবজি ফুলে-ফলে ভরে গিয়েছিল। ঠিক সে রকম একটি সময় বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। আজও বুকে বাধে কি গভীর ষড়যন্ত্রই না করেছিল পরাজিত শত্রুরা। আজও সে ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়নি। সবকিছু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওপর চাপিয়ে দিয়ে কেন যেন সবাই গা ভাসিয়ে আছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু যারা বাইরে বেরিয়েছেন তাদের তো গলা টিপে ধরতে অথবা ঠ্যাং ভেঙে দিতে বলেননি। যারা কর্তৃত্ব করেন তাদের সামান্য জ্ঞান-বুদ্ধি থাকলে সমস্যার সমাধান করতেন, সমস্যা আরও বাড়াতেন না। গণপরিবহন বন্ধ। কেন বন্ধ? সব চলছে গণপরিবহন বন্ধ! পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা না খেয়ে মরে যাওয়ার উপক্রম। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী প্রিয় ওবায়দুল কাদের ঈদের বেশ কদিন আগেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে জেলায় জেলায় গণপরিবহন চলার কথা বলেছেন। দূরপাল্লার গাড়ি না হয় বন্ধ, কিন্তু লোকাল গাড়িও কেন চালানো হলো না? এখানেও কি শাজাহান খান, নাকি সরকারকে অপ্রিয় করার কোনো ষড়যন্ত্র?

৮ মে টাঙ্গাইল থেকে ঢাকা এসেছিলাম। আমিনবাজারের কাছাকাছি আসতে সোয়া ঘণ্টা-দেড় ঘণ্টা লেগেছিল। আমিনবাজার থেকে গাবতলী পৌঁছতে পাকা দুই ঘণ্টা। গত পরশু ঈদের দুই দিন পর টাঙ্গাইল থেকে আমার গাড়ি এসেছে সেই আমিনবাজারের ভাঙা ব্রিজ থেকে গাবতলী ১ কিলোমিটারে আড়াই ঘণ্টা। রাস্তার ওপর পুলিশ রোড ব্রেকার ফেলে রেখেছে। দু-তিনটি রোড ব্রেকারের জন্য লাখো মানুষের ২-৩ ঘণ্টা চরম কষ্ট। দেখার কেউ নেই। সবাই ভাবছে তারা সরকারের ভালো করছেন। কিন্তু ধীরে ধীরে মানুষ যে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে এক মুহূর্তের জন্যও কেউ ভাবছেন না। আর যারা এসব করছেন এটা যদি তাদের পরিকল্পনা হয়ে থাকে তাহলে সরকারে যারা আছেন তারা ভিতরের অন্তর্ঘাত ধরতে পারছেন না। ফেরিঘাটের এই যে অরাজকতা সব নৌযান বন্ধ করে দেওয়া এসবে কি আদৌ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল? যদি না থেকে থাকে তাহলে যারা এ অপকর্ম করেছেন তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে কি? যারা সরকারে থেকে সরকারের সর্বনাশ করছেন তাদের খুঁজে বের করুন।

দোষ হলে প্রধানমন্ত্রীর আর ভালো, সুনাম হলে সব আমলাদের, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের- এভাবে চলতে পারে না। কিছু আমলা-ফইলা মিলে আবার সাত দিনের লকডাউন দিয়েছেন। এমন ঢিলেঢালা, মানুষ মারা লকডাউন করোনার ওষুধ হতে পারে না। গাদাগাদি হয়ে বস্তিতে গরিব মানুষ বাস করে। একজন আরেকজন থেকে আড়াই হাত দূরে থাকার জায়গাও তাদের নেই। কই সেখানে তো করোনার মহামারী নেই। ভারতে প্রতিদিন লোক মারা যায় ৪-৫ হাজার, আক্রান্ত ৫ লাখ। আমাদের মারা যায় ৩০-৩২ জন। তাই বাইরে থেকে আসা লোকদের প্রতি যত্নবান হোন, বিশেষ করে ভারত থেকে আসা লোকদের প্রতি। তাহলেই হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যতটা সম্ভব চললেই মনে হয় পরম করুণাময় আল্লাহর দয়ায় আমরা পার পেয়ে যাব। পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চোখের পানি এবং আমাদের ১৮ কোটি মানুষের প্রার্থনায় বিশ্বমানবতার ওপর থেকে করোনার মহাপ্রাদুর্ভাব ধুয়ে যাক, মুছে যাক।-বাংলাদেশ প্রতিদিন।

লেখক: কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম; রাজনীতিক।

বার্তা বাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর