জাল চুরির অপরাধে ৫ কিশোরকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন, আটক ৪

নোয়াখালীর বৃহত্তর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় জাল চুরির অপরাধে পাঁচ কিশোরকে মধ্যযুগীয় কায়দায় কোমরে রশি দিয়ে বেঁধে বেদড়ক পিটিয়ে নির্যাতন করেন স্থানীয় এক গ্রাম চৌকিদার।

রবিবার বিকেলে উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে শুল্লকিয়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।

এসময় নির্যাতনের শিকার কিশোরের মায়ের আর্তনাদে পুরো এলাকাটি স্তম্বিত হয়ে যায়। ভয়ে কেউ কিছু বলার সাহস করেনি। পাশ্ববর্তী এক যুবক গোপনে ভিডিও করে সোশাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিলে তা মহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। এর পরেই থানা পুলিশ অভিযান দিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত চারজনকে আটক করে।

১ মিনিট ১১ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায় কিশোর জেলেদের প্রকাশ্যে বেঁধে লাঠি দিয়ে নির্যাতন করছেন একজন। পাশ থেকে তাদের পরিবারের নারী সদস্যরা কান্না করে তাদের ছেড়ে দেওয়ার আকুতি জানাচ্ছেন। কান্নারত নারীরা এগিয়ে আসলে তাদেরও ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে দেখা গেছে।

এই ঘটনায় রবিবার রাতে নির্যাতনের শিকার শিশু পদ দাস নামে এক কিশোরের পিতা হরিপদ দাস বাদী হয়ে চৌকিদার ও ৫ শালিশদারকে আসামী করে হাতিয়া থানায় একটি মামলা করে। রাতে পুলিশ চারজনকে আটক করলেও অভিযুক্ত চৌকিদারসহ দুজন এখনো পলাতক রয়েছে।

এর আগে রবিবার সকালে জাল চুরির অপরাধে স্থানীয় জেলে মাতাব্বরদের উপস্থিতিতে গ্রাম্য শালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে চুরির সাথে জড়িত ৫ জেলে কিশোরকে ২ হাজার টাকা করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও ১০ বেতরাগাত করার সিদ্বান্ত হয়।

শালিশে ১০ বেত করে দেওয়ার সিদ্বান্ত হওয়ার সাথে সাথে স্থানীয় চৌকিদার আমির হোসেন কোমরে বাঁধা কিশোরদের এলোপাতাড়ি পিটাতে থাকে। এসময় কিশোরদের পক্ষে পরিবারের লোকজন বার বার ক্ষমা চাইলে চৌকিদার আরো উত্তেজিত হয়ে যান।

নির্যাতনের শিকার এক কিশোর জেলের বাবা জানান, তার ছেলেসহ পাঁচজন কিশোর জেলে ১০-১১ হাতের তিনটি বিন্দিজাল নিয়ে যায়। পরে ওই জাল উদ্ধার করে মালিককে দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সকালে স্থানীয় পঞ্চায়েত শ্রীহরি জল দাশ, নেপাল দাস, প্রিয় লাল, রাশ মহন, মহলাল দাস ও স্থানীয় চৌকিদার আমির হোসেন মিলে কিশোর জেলেদের ডেকে পাঠায়। এক পর্যায়ে প্রকাশ্যে তাদেরকে বেঁধে লাঠি দিয়ে নির্যাতন করা হয় এবং প্রত্যেকের ২ হাজার টাকা করে মোট ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করে তারা।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত চৌকিদারসহ অন্যদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনির উদ্দিন বলেন, চৌকিদার আমির হোসেন আমার ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও এঘটনায় সে আমাকে না জানিয়ে শালিশে গিয়েছে। ভিডিওটি আমি দেখেছি। কিশোরদের যে ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে তা খুবই অমানবিক।

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের জানান, এই ঘটনায় এক কিশোরের পিতা বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দিয়েছে। রাতেই আমরা চারজনকে আটক করেছি। অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

জিল্লুর রহমান রাসেল/বার্তাবাজার/পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর