৯ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা দুই ব্যবসায়ী, নিঃস্ব ৬৭ ব্যবসায়ী

দুই ব্যবসায়ীর প্রতারণার ফাদেঁ পড়ে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের অন্যতম বন্দর নগরী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের ব্যবসা বানিজ্য।

প্রতারণার শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অন্তত ৬৭ জন ব্যবসায়ী। দেউলিয়া হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন এই ব্যবসায়ীরা। অধিকাংশ ব্যবসায়ীর পরিবারের ঘরে নেই ঈদের আনন্দ। এ ঘটনায় প্রতারকের বিচার চেয়ে থানায় মামলা দায়ের করে প্রধানমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ব্যবসায়ীরা।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের হাওরাঞ্চলের উৎপাদিত ধান কৃষক ও পাইকাররা নিয়ে আসেন আশুগঞ্জ বন্দরে। এ সব ধান আশুগঞ্জের ১৪৭টি আড়াৎদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন চাতাল মিল ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। চাতাল ব্যবসায়ীরা এই ধান চাতালে চাউলে রুপান্তরীত করে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চাউলের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। প্রতিদিন সততার ও নিষ্ঠার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার ধান ও চাউল ক্রয় বিক্রি করে থাকে আশুগঞ্জের ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের সরলতাকে পুজি করে আশুগঞ্জের সোহাগপুরের হাজী হামদু মুন্সী অটো রাইস মিলের সত্ত্বাধীকারী আবু সালাম মুন্সী ও মা জায়েদা খাতুন অটো রাইস মিলের সত্ত্বাধীকারী আবু কালাম তারা দুই সহোদর ভাই ইসলাম এন্ড ব্রাদাস প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে ব্যবসা শুরু করে। বন্দরের আড়ৎদারদের কাছ থেকে দুটি চাতাল মিলের জন্য ধান ক্রয় করতে থাকে। প্রথমে লেনদেন ভালো করে আড়ৎদারদের বিশ্বস্তা অর্জন করেন। পর্যায়ক্রমে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সুকৌশলে বাকিতে ধান ক্রয় করতে থাকে। এক পর্যায়ে বন্দরের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ২০ লক্ষ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত বাকী নিতে থাকে। টাকার অংক বাড়তে থাকায় সুকৌশলে ৬৭জন আড়ৎদার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তাদের মূলধন প্রায় ৮ কোটি ৮৫ লক্ষ ২৪ হাজার ৭শ ১১টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় দুই সহোদর ভাই। এতে করে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করা ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সকল মূলধন হারিয়ে এখন চরম অর্থকষ্টে পড়েছেন তারা।

মুলধর হারিয়ে ব্যাংকের ঋনের বুঝা নিয়ে এখন অনেক ব্যবসায়ীই পথে বসেছেন। উপাইয়ন্ত না পেয়ে ব্যবসায়ীরা থানায় একটি মামলা দায়ের দায়ের করেছেন। এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তাদের মূলধন প্রায় ৮ কোটি ৮৫ লক্ষ ২৪ হাজার ৭শ ১১টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় দুই সহোদর ভাই।

ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের মধ্যে হাজী মোঃ ফজলুর রহমান জানান,‘‘বন্দরের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৮ কোটি ৮৫ লক্ষ ২৪ হাজার ৭শ ১১টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় দুই সহোদর ভাই। প্রতারকরা আমার ৯৯ লক্ষ টাকা নিয়ে গেছে। এতে করে আমি মূলধন সংকটে পরে আছি। আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছি। পরিবার-পরিজন নিয়ে পথে বসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এমতাবস্থায় আমরা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

আরেক ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী ও আশুগঞ্জ চাতাল মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক হাজী মোঃ হেলাল শিকদার জানান, ‘‘দুই ব্যবসায়ীর প্রতারণার ফাদেঁ পড়ে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের অন্যতম বন্দর নগরী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের ব্যবসা বানিজ্য। প্রতারণার শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অন্তত ৬৭ জন ব্যবসায়ী। প্রতারকরা আমাদের ৮ কোটি ৮৫ লক্ষ ২৪ হাজার ৭শ ১১টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। তার মধ্যে আমার ব্যাক্তিগত অর্থ ৪৬ লক্ষ টাকা। আমি এখন সবর্শেষ হয়ে নিৎস পড়েছি।

আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রার্প্ত কর্মকর্তা জাবেদ মাহমুদ জানান, বিষয়টি জানতে পেরেছি। ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

সন্তোষ চন্দ্র সূত্রধর/বার্তাবাজার/পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর