আগের মত গ্রামের রাস্তায় দেখা মেলে না হলুদ সোনালু ফুল

গ্রামের রাস্তার পাশে এখন আর দেখা মেলে না হলুদ সোনালু ফুলের। নানা সংকটে বিলুপ্তির পথে গ্রামীন সোনালু ফুলের গাছ। আর তাই বৈশাখ এলে খুবই কম চোখে পড়ে এই ফুলের। আগের দিনে বৈশাখী হাওয়ায় দুলতে থাকতো হলুদ—সোনালি ফুল। হলুদ বরণ সৌন্দর্য মাতোয়ারা করে রাখতো চারপাশ। খরতাপে চলতি পথে পথিকের নজর কাড়বেই। গ্রীষ্মের প্রকৃতিতে প্রাণের সজীবতা নিয়ে যেসব ফুল ফোটে তার মধ্যে সোনালু উল্লেখযোগ্য।

উদ্ভিদ বিষয়ক একাধিক জার্নাল মারফত জানা যায়, সোনালু গাছ আকারে ছোট। ডালপালা ছড়ানো— ছিটানো। দীর্ঘ মঞ্জুরিদর ঝুলে থাকা ফুলগুলোর পাপড়ির সংখ্যা পাঁচটি। সবুজ রঙের একমাত্র গর্ভকেশরটি কাস্তের মতো বাঁকানো। এ গাছের ফল বেশ লম্বা, লাঠির মতো গোল। তাছাড়া ফল, ফুল ও পাতা বানরের প্রিয় খাবার। এজন্য এ ফুলের আরেক নাম বান্দরলাঠি। গাঢ় সবুজ রঙের পাতাগুলো যৌগিক, মসৃণ ও ডিম্বাকৃতির। ফুল এক থেকে দেড় ইঞ্চি পর্যন্ত চওড়া হয়। এ গাছের কাঠ জ্বালানি ছাড়াও অন্যান্য কাজে লাগে। ফলের শাঁস বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে কাজে লাগে। বাত, বমি ও রক্তস্রাব প্রতিরোধে উপকারী। বীজ সহজেই অঙ্কুরিত হয়, যদিও বৃদ্ধি মন্থর। এছাড়াও এ গাছের বাকল, রঙ ও ট্যানিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হয়।

সাতক্ষীরার বাসিন্দা আবু রায়হান জানান, এক সময় গ্রামের প্রায় প্রতিটি এলাকায় এই ফুলের দেখা মিলত। আমরা ছোট বেলা এই ফুল নিয়ে অনেক বাড়িতে সাজিয়ে রাখতাম। এমনকি ফুল ঝরে পড়ার পর গাছে সরু সরু ফল ঝুঁলতে থাকে। যা অনেকটা লাঠির মত। ফলের ভিতরের বীজগুলো ঝন ঝন শব্দ হয়। হাতে নিয়ে ঝুম ঝুমির মত বাজাতেও ভালো লাগত। কিন্তু পরিবেশের পরির্বতনে আজ এই ফুলের অস্তিত্ব সংকটে। এখন আর আগের মত সোনালু বা সোনালি ফুল দেখা মেলে না। তাই এটি রক্ষা করতে আমাদের সকলের দায়িত্ব নেওয়া উচিৎ।

দেবহাটা উপজেলা বনবিভাগের সহকারী আবুল কালাম জানান, বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন প্রাজাতির গাছ বিলুপ্তির পথে। আর এই বিলুপ্তির তালিকায় সোনালু ফুলও রয়েছে। তবে এই ফুলের গাছের চাহিদা কম থাকায় এটি খুব বেশি দেখা মেলে না। তবে এটি সারিবদ্ধ ভাবে রোপন করা হলে ফুলের মৌসুমে অন্যরকম এক পরিবেশের সৃষ্টি হবে।

সরকারি খানবাহাদুর আহছান উল্লা কলেজের বাংলা প্রভাষক তৌহিদুর রহমান জানান, বাংলা সাহিত্যে বিভিন্ন ফুলের বর্ণনা রয়েছে। ফুলের সৌন্দর্য নিয়েও বিভিন্ন ছড়া—কবিতা—গানে উপমা পাওয়া যায়। সোনালু ফুল দেশের গ্রামীণ জনপদের পাশাপাশি শহরের মানুষের কাছেও সমান গুরুত্ব বহন করে। এটি ফুটলে এর সৌন্দর্য নিজেই বহন করে। সবাইকে আকর্ষন করে। বিলুপ্তি প্রায় এই ফুলটিকে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের সবার কর্তব্য।

দেবহাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি আব্দুর রব লিটু বলেন, দেবহাটা উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্বাহী অফিসার ইকবল হোসেন দেবহাটা উপজেলা সড়কের দুপাশে সোনালু ফুলের গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়ে ছিলেন। যাতে ফুলের মৌসুমে বিভিন্ন এলাকার পর্যটকদের আকর্ষন বৃদ্ধি করা যায়। কিন্তু অল্প সময়ে তিনি বদলি হয়ে যাওয়ায় উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হয়নি। তবে ইছামতি নদীর তীরে রূপসী ম্যানগ্রোভ যাওয়ার পথে সারিবদ্ধ ভাবে সোনালু ফুলের গাছ লাগানো যায় তাহলে প্রাকৃতিতে এক অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি করবে। এমনকি ফুলের মৌসুমে পর্যটকদের ভীড় পড়ে যাবে। যেহেতু এই গাছটির বীজ গ্রামীন ভাবে সংরক্ষণ সম্ভব তাই উদ্যোগটি বাস্তবায়ন অনেক সহজ হবে। এমনকি কম খরচে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে।

মীর খায়রুল আলম/বার্তাবাজার/পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর