‘করোনাকালীন ঈদ ভাবনা’

প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে বিপর্যস্ত জনজীবন। যা থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশও। যার প্রভাব পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ঈদ আনন্দে। ঈদকে ঘিরে নানা আয়োজন ও পরিকল্পনা সীমিত হয়ে গেছে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায়।

তবুও থেমে থাকবে নাহ জীবনের চাকা। নানাভাবে করোনাকালে ঈদকে উদযাপন করবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের ঈদ ভাবনা তুলে ধরেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র মোঃ ফাহাদ হোসেন।

আমাদের চেনা জীবনের সাথে সাথে উৎসব উদযাপনের ধরনও পাল্টে গেছে

কোভিড-১৯ ধরনীতে আঘাত করার পরই আমাদের চেনা জীবনের সাথে সাথে উৎসব উদযাপনের ধরনও পাল্টে গেছে। প্রায় এক বছর হতে চলল আমরা আমাদের চিরচেনা অভ্যস্ত জীবন-যাপন থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন জীবন পার করছি।

তবুও নিজে এবং নিজের পরিবারকে সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষার জন্য আমাদের যথাসম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। তাই সব সময়ের মত করে এবারে আমাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ উল ফিতরকে উদযাপন করতে পারবো না। ঈদের সবচেয়ে আকর্ষনীয় দিক হচ্ছে কেনা-কাটা। যেহেতু অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়াটাই বোকামী, তাই এবারে নতুন জামা-কাপড় ছাড়াই ঈদ উদযাপন করতে হবে। বন্ধুদের সাথে ঈদের দিন ঘুরাঘুরি কিংবা আত্নীয়দের বাসায় দাওয়াতও হয়তো এবার খেতে যাওয়া হবে না। যদিওবা ঈদের দিন ঘরে বসে থেকে ঈদের আনন্দে কিছুটা ভাটা পড়বে, কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে এই মহামারীতে বেচে থাকাটাই চ্যালেঞ্জ। যদি এবারের ঈদ স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদে পালন করতে পারি, তাহলে হয়ত ভবিষ্যতে আরো ঈদ উদযাপন করার সুযোগ পাওয়া যাবে।

শফি মাহমুদ সাগর
নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

শেষ হোক আমাদের উৎসব-আনন্দ গুলোর অঘোষিত নির্বাসন

“ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ…।” এভাবেই খুশি নিয়ে ঈদ আসত প্রতিবছর। গ্রামে থাকার সুবাদে আনন্দও হতো ভরপুর। তবে বর্তমানে ক্যাম্পাস থেকে রমজান ও ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসার তাড়াহুড় কিংবা ছুটি ফুরিয়ে যাওয়ার খারাপ লাগা গুলোকে খুব মনে পড়ছে।

গত দুই ঈদের মত এবারের ঈদও কাটবে ভিন্নভাবে। সুস্থ পৃথিবীর ঈদ গুলোয় আগে থেকেই ছিলো কত পরিকল্পনা; কেনাকাটা, খাবার তৈরি, অতিথি আপ্যায়ন, ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা…সব আজ ঘরবন্ধি! বলা যায় আসছে ঈদে আগেকার মত আনন্দঘন ব্যস্ততা গুলো থাকবে না। বরং ঘরের কাজ, বাড়ির সবার সাথে আনন্দ ভাগাভাগি আর দূরে থাকা প্রিয়জনদের সাথে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ ও দূর থেকে শুভেচ্ছা বিনিময়ের মতো নানান সাধারণ আয়োজনে দিনটি কাটাতে হবে।

নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্য আয়োজন গুলো সীমিত করতে হবে, তবে আনন্দগুলো নয়। শেষ হোক আমাদের উৎসব-আনন্দ গুলোর অঘোষিত নির্বাসন, সুস্থ থাকুক সবাই।

নুসরাত জাহান ;
শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

পৃথিবীর সব শ্রেণীর মানুষের ভেদাভেদ ঘুচে গিয়ে ন্যায় এবং সত্য প্রতিষ্ঠিত হোক

সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশের ঈদকে মোটাদাগে শহুরে ঈদ এবং গ্রাম্য ঈদে ভাগ করা যায়। দুই ধরনের ঈদকেই খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হ‌ওয়ায় এদের মধ্যকার ফারাকটাও আমার কাছে অনেকটা সুস্পষ্ট। গ্রামের অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত মানুষদের মধ্যে ঈদের পবিত্রতা এবং শিক্ষার যতটুকু প্রয়োগ দেখেছি, তার অনেকাংশেই ঘাটতি রয়ে গেছে আমাদের শহুরে জীবনযাপনে অভ্যস্ত যান্ত্রিক মানুষদের মাঝে। এখানে শ্রেণিব্যবধানের দেয়ালটা যেনো অনেক বেশিই প্রকট। ধনিক শ্রেণীর মানুষেরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অতি দরিদ্রদের দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করলেও সেটা নামেমাত্র। সমাজের নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষগুলোর প্রতি যে অবহেলা, সেটার যত্ন নেওয়ার যেনো কেউ নেই।

বর্তমান মহামারী পরিস্থিতিতে এ শ্রেণির মানুষগুলোর দুর্ভোগ যেনো আরো চরম আকার ধারণ করেছে। একদিকে আত্মসম্মান, অপরদিকে আর্থিক দুর্দশা। সমাজের অবহেলিত এ জনগোষ্ঠীর দুর্দশা মোচনে সক্ষমরা আরো বেশি আন্তরিক এবং উদ্যোগী হবে এ প্রত্যাশাই র‌ইল এ বছরের মহামারী পীড়িত ঈদুল ফিতরে। সবাই নিজ নিজ আবস্থান থেকে সবার পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। পৃথিবীর সব শ্রেণীর মানুষের ভেদাভেদ ঘুচে গিয়ে ন্যায় এবং সত্য প্রতিষ্ঠিত হোক।

মিফতাহ উদ্দিন মাহমুদ,
শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

লেখক
মোঃ ফাহাদ হোসেন
বার্তাবাজার প্রতিনিধি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

বার্তাবাজার/পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর