রিকশাচালকের টাকা লুট করা সেই ৩ ‘চাঁদাবাজ’ পুলিশ বরখাস্ত

ময়মনসিংহের ভালুকায় রিকশাচালকের কাছ থেকে সর্বস্ব লুটের অভিযোগে ভরাডোবা হাইওয়ে থানার ৩ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শনিবার (০৮ মে) গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ) পুলিশ সদর দফতরের এআই‌জি (মি‌ডিয়া অ্যান্ড পাব‌লিক রি‌লেশন্স) মো. সো‌হেল রানা।

তিনি জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল একটি পোস্টের বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সচেতন এক নাগরিক একটি বার্তা পাঠান। বার্তায় উল্লেখ করা হয়, এক অ‌টোরিকশাচালকের সারারাতের আয় ৬০০ টাকা নিয়ে নিয়েছে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য।

তিন আরও জানান, অভিযোগটি গুরুতর হওয়ায় মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং তাৎক্ষণিক বার্তাটি সংশ্লিষ্ট ইউনিট কমান্ডারদের কাছে পাঠিয়ে অভিযুক্তদের দ্রুত শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করে। সং‌শ্লিষ্ট সবার সঙ্গে যোগা‌যোগ ক‌রে জানা যায়, উল্লিখিত ঘটনাস্থলে নিকটবর্তী হাইওয়ে ফাঁড়ির তিনজন সদস্য দায়িত্বরত ছিলেন। এই ঘটনা পরে একাধিক জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংয়ের বার্তার পরিপ্রেক্ষিতে গাজীপুর হাইওয়ে রিজিয়নের কমান্ডার আলী আহমদ খান বিষয়টি তদন্তের জন্য তাৎক্ষণিক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। একইসঙ্গে অভিযুক্ত তিন সদস্যকে তাৎক্ষণিক এক অফিস আদেশে সাময়িক বরখাস্ত করে তাদেরকে হাইওয়ে পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দিয়ে হাইওয়ে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। বরখাস্তকালীন সময়ে ওই সদস্যরা পুলিশ লাইনসে উপস্থিত থেকে নিয়মিত রোল কলে হাজিরা দেবেন এবং এই সময়ে তারা বিধি অনুযায়ী কেবল খোরপোশ ভাতা প্রাপ্য হবেন।

তিনি জানান, গঠিত তদন্ত কমিটি এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট রিকশাচালককে খুঁজে বের করে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাকে সব ধরনের সহযোগিতা ও সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সব সাক্ষ্য প্রমাণ, তথ্য উপাত্ত এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি বিবেচনায় অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্ত সদস্যদের বিরুদ্ধে বিধান অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, বুধবার (০৫ মে) রাতে ভালুকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লিখেন, রাত ১টা ২০ মিনিটের দিকে সিডস্টোর বাসস্ট্যান্ডে ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। রিকশাচালক শামীম অটোরিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।

স্বাভাবিকভাবে শামীম এসে চেয়ারম্যানকে বলল কোথায় যাবেন? তখন চেয়ারম্যান যে ভালুকা যাবেন সে বিষয়ে কিছু বলেননি। তিনি প্রশ্নে এড়িয়ে যান। পরক্ষণেই জিজ্ঞেস করেন, যাত্রী পাওয়া যায় কেমন এত রাতে। জবাবে শামীম বললেন, রোজা থেকে সারাদিন রিকশা চালাতে পারি না। তাই রাতেই যা পাই তা দিয়ে সংসার চালাই আর অটোরিকশার কিস্তি দিতে হয়।

তিনি আরও জানান, গত মঙ্গলবার রাতে ৬০০ টাকা ইনকাম হয়েছিল। কয়েকজন পুলিশকে থানার সামনে নামিয়ে দিয়ে যখন আমি ভালুকা বাসস্ট্যান্ড ইউটার্ন নেই ঠিক সেই সময় হাইওয়ে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আমাকে থামায় আর বলে আমার অটোরিকশাটি তারা নিয়ে যাবে। একপর্যায়ে হাইওয়ে পুলিশ এক হাজার টাকা দাবি করে।

শামীম বলেন, অনেক কাকুতি-মিনতি করে হাইওয়ে পুলিশকে বলি স্যার আমি সারাদিন রোজা থেকে কাজ করতে পারি না। তাই ইফতারের পর থেকে ৬শ’ টাকা পেয়েছি। টাকা দিয়ে চাল ও ঢাল কিনব, কিন্তু কোনো কথাই তারা শুনল না। শেষপর্যন্ত আমার কাছে আগের ১০০ টাকা ছিল আর ইনকামের ৬০০ টাকাসহ মোট ৭০০ টাকা হাইওয়ে পুলিশকে দিয়ে অটোরিকশাটি নিয়ে খালি হাতে বাসায় যাই। পরে না খেয়ে রোজা রেখে আজকেও আবার পেটের দায়ে এত রাতে আছি স্যার।

ঘটনাটি শেয়ার করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদে প্রশ্ন রাখেন, আমরা কোথায় বসবাস করি?

ফেসবুক স্ট্যাটাসের মন্তব্য কলামে অনেকেই লেখেন- হাইওয়ে পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে রিকশা, অটোভ্যান, হাইওয়ে মিনি, প্রাইভেটকার, মাইক্রেবাস চালকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

বার্তা বাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর