দশমিনায় বেড়িবাধের অভাবে ২’শ কোটি টাকার ফসল নষ্ট

সিডর,রেশমী,নার্গীস,আইলা ও সর্বশেষ আম্ফানের তান্ডবে পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলার উপকূলীয় চরাঞ্চলে বেড়িবাধ না থাকায় প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার ফসল নষ্ট হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কবলে পরে একাধিক বার সর্বশান্ত হয়েছেন উপকূলীয় দশমিনার মানুষ।

উপজেলা সদরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দূর্গম চরাঞ্চলে বেড়িবাধ না থাকায় চরবোরহান,চরশাহজালাল,চরহাদী, চরবাশঁবাড়ীয়া, চরঘূর্নি, চরআজমাইন,লালচর,চরতৈলক্ষ্য,চর ফাতেমা সহ দশমিনার চরাঞ্চলে প্রতি বছর ঘূনিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ও সাগরের নোনা পানি ঢুকে চরে বসবাসকারী কৃষকদের ফসলের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। বার বার ফসল হানির কারনে হাজার হাজার চরের কৃষক, মহাজন ব্যাংক ও এনজিও থেকে একাধিকবার ঋন গ্রহণ করে পরিশোধ করতে পারছেনা।

উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সুত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়, সিডর থেকে আম্ফান পর্যন্ত চরাঞ্চলে প্রায় ২শ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে,এসব ঘূর্নিঝড়ে ১২জন মানুষ মারা গেছেন।

দশমিনা উপজেলায় বুড়াগৌরাঙ্গ ও তেতুলিয়া নদীর বুকচিরে জেগেওঠা ছোট বড় ২৫/৩০ টি চরে ৫০ হাজার মানুষের জনবসতী রয়েছে। নির্বাচনের সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা চরাঞ্চলে বেড়িবাধসহ উন্নয়নের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিলেও কেউ কথা রাখেনি। চরের কৃষকেরা সরকারের কাছে বেড়িবাধ নির্মাণের দাবী জানিয়ে বহুবার স্বারকলিপি ও মানববন্ধন করেছেন।

চরবোরহানের বাবুল সরদার (৪৮) মোকলেস মাতুব্বর (৬৫)জানান, এসব চরে জনবসতী গড়ে ওঠার ৩৫/৪০ বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত ভেড়ীবাধ নির্মাণ করা হয়নি। এসব চরের চারদিকেই নদীবেষ্টিত।

চরশাহজালালের কৃষক রফিক হোসেন (৪০) হানিফ বয়াতী (৫৬) বাদশা হাওলাদার (৫৫) জানান, আমাগোরে আল্লায় বাচায়ে রাখছে,আমাগো চরে কোন বেড়িবাধ না থাকায় বন্যা জলোচ্ছাসে নোনা পানি ঢুকে প্রতি বছর ফসল নষ্ট হচ্ছে, আমরা সরকারের কাছে বেড়িবাধ চাই,রিলিফ চাইনা। চরহাদির কৃষক বারেক হাওলাদার(৫৫),মোঃ আমিন(৪০) মতি মাতুব্বর (৬০) কালু মৃধ (৬৫) জানান,ঝড় জলোচ্ছাসের পর সরকারি ও বেসরকারীভাবে চরের মানুষকে ত্রান দিলেও বন্যার হাতথেকে আমরা কিভাবে বাচতে পারি সে ব্যবস্থা কেউ করে দেয়না। তারা জানান,ঘূর্নিঝড় জলোচ্ছ্বাসের ক্ষতি অবর্ননীয়। বেড়িবাধ ছাড়া আমাদের বাচাঁর কোন উপায় নেই।বারবার ত্রান না দিয়ে একবার ভেড়ীবাধ নির্মাণ করেদিন। বাশঁবাড়িয়া চরের কৃষক মনির হাওলাদার(৫০),আজাহার বেপারী(৬০), কবির হোসেন(৫৫),আলমাছ ফকির(৪৫) জানান,তাদের চরে ভেড়ীবাধ না থাকায় কয়েক দফা বন্যায় ক্ষেতের ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চরাঞ্চলের কৃষকের একটাই দাবি ত্রান নয় এবার বেড়িবাধ চাই।

দশমিনার ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল মাহামুদ লিটন জানান,চরহাদীতে ভেড়ীবাধ নির্মাণের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছি। তিনি আরো জানান,বন্যা ও জলোচ্ছাসে চরে নোনা পানি ঢুকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করছে।

বাশবাড়ীয়ার ইউপি চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন আকন জানান, উপজেলা সমন্বয় সভায় চরে বেড়িবাধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছি।
চরবোরহান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজির আহমেদ সরদার জানান, চরাঞ্চলে বেড়িবাধ না থাকায় ঝড় জলোচ্ছাসে নদী ও সাগরের নোনা পানি ঢুকে কৃষকের ফসলের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয় তাই চরাঞ্চলে বেড়িবাধ নির্মাণ করা একান্ত প্রয়োজন।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ জাফর আহমেদ জানান, ঝড় জলোচ্ছাস ও নোনা পানি ঢুকে প্রতি বছরই কৃষি ফসলের ব্যপক ক্ষতি হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আল আমিন জানান, চরের বেড়িবাধ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য এস,এম,শাহজাদা জানান, বিষয়টি পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়কে অবহিত করা হয়েছে তারা জানিয়েছেন এব্যপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সাফায়েত হোসেন/বার্তাবাজার/পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর