হাসপাতালে খোঁজ নেয়নি কেউ, ঠাঁই হলো বৃদ্ধাশ্রমে !

বয়সের ভারে ন্যুব্জ ও স্মরণশক্তি লোপ পাওয়ায় নিজের নাম ছাড়া কিছুই বলতে পারেননি তিনি। দীর্ঘ দুই বছরে কোনো স্বজনও তার খোঁজ-খবর নেয়নি। আত্মীয়-স্বজন আছে কি নেই সে বিষয়টি অজানাই রয়ে গেছে। আর স্বজন না থাকায় এ বৃদ্ধাকে রিলিজও দিতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অবশেষে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতায় ঢাকার একটি বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই হলো তার।

শুক্রবার দুপুরে হাসনাকে সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স মমতাজ খাতুন বলেন, ২০১৭ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে কয়েক যুবক হাসনা বেগমকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা হলেও স্বজনদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। ওই বৃদ্ধা নিজের ঠিকানা বা স্বজনদের পরিচয় কিছুই বলতে পারেন না। ফলে তাকে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগেই ভর্তি রাখা হয়।

সিরাজগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দি বার্ড সেফটি হাউজের সভাপতি মামুন বিশ্বাস জানান, গত ৩০ এপিল হাসপাতালের ৫ তলায় মেডিসিন ওয়ার্ডের বারান্দায় তাকে দেখতে পাই। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়- ওই বৃদ্ধা দুই বছর ধরে হাসপাতালে থাকলেও তার খোঁজ নিতে আসেনি কোনো স্বজন। এরপর ফেসবুকে ওই বৃদ্ধার ছবিসহ বিস্তারিত বিবরণ লিখে একাধিকবার পোস্ট দিয়েও তার পরিচয় জানার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু প্রায় পৌনে দু’মাসেও ওই বৃদ্ধার স্বজনদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। অবশেষে ঢাকার কল্যাণপুরে অবস্থিত চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার নামের চ্যারিটি অর্গানাইজেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়।

চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা বার্ড সেফটি হাউজের সভাপতি মামুন বিশ্বাসের মাধ্যমে খবর পেয়ে ওই বৃদ্ধাকে নিতে এসেছি। আমাদের প্রতিষ্ঠানে বিভিন্নভাবে পরিত্যক্তা আরও ৫৮ জন বৃদ্ধা ও শিশু রয়েছে। তাদের সঙ্গেই এই বৃদ্ধাও থাকবেন। এদের আমরা খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসাসেবা দিয়ে স্বজনদের অভাব মেটানোর চেষ্টা করছি।

হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হুমায়ন ইসলাম জানান, দুবছর ধরেই ওই বৃদ্ধাকে হাসপাতালে দেখছি। বার্ধক্যজনিত ছোটখাট সমস্যা থাকলেও তার জটিল কোনো শারীরিক সমস্যা নেই। তিনি কথা বলতেও পারেন শুনতেও পারেন। তবে স্মরণশক্তি না থাকায় নিজের ঠিকানা ও পুরো পরিচয় বলতে পারছেন না। মানবিক কারণে হাসপাতালের নিয়ম ভেঙে তাকে এতদিন রাখা হয়েছিল

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর