পায়রায় সংঘর্ষ ও শ্রমিক হত্যার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা, গ্রেফতার-১৬

মিজানুর রহমান, পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালীর কলাপাড়া পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলা, ভাংচুর, লুট-পাট এবং চায়না শ্রমিক জাং ইয়াং ফাং (২৬) হত্যার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলা দু’টির বাদী হয়েছেন পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সেপ্টি পরিচালক ওয়াংলিবিং। দুটি মামলায় স্থানীয় গ্রামবাসী এবং বাঙালী শ্রমিকসহ অজ্ঞাত পাঁচ থেকে ছয়শত জনকে আসামী করা হয়েছে। এ মামলায় শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে কলাপাড়া থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।

হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস,আই মোঃ শাখাওয়াত জানায়, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের মুধাপাড়া গ্রাম থেকে সুজন তালুকদার ও মরিচ বুনিয়া গ্রাম থেকে মামুন তালুকদার, সজিব শরীফ, জলিল ফকিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্থানীয় আটককৃতদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভ্যন্তরে লুট হয়ে যাওয়া ল্যাপটপ সহ বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।

পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইলেকট্রিক্যাল চায়না শ্রমিক জাং ইয়াং ফাং হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ শওকত জাহান জানান, হত্যা মামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বিদ্যুৎ কেন্দ্রর বাঙ্গালী শ্রমিক ১২ শ্রমিককে ঢাকা জেলার দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ বিদেশী শ্রমিক হত্যা মামলায় গ্রেফতার করে কলাপাড়া থানার এসআই মোজাম্মেলের কাছে হস্তান্তর করেছে। গ্রেফতকৃতরা হচ্ছে- মোঃ নাসির, সুজন, আবদুল লতিফ, আতিকুর রহমান, ইমাম হাসান, মেহেদী হাসান, রাসেল আলী, শামিম মিয়া, মামুন, আইয়ুব, ফারুক ও বেল্লাল। এদের সবার বাড়ী বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বলে জানা গেছে। কলাপাড়া থানার এস আই মোজাম্মেল জানান, ১২ জনকে দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ আটক করেছে। আমি গ্রেফতারকৃত আসামীদের নিয়ে কলাপাড়া থানার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছি। তাদের কলাপাড়ায় নিয়ে এসে আদালতে হস্তান্তর করা হবে।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বয়লারের ওপর থেকে সবিন্দ্র দাস (৩২) নামে এক বাংলাদেশি শ্রমিক নিচে পড়ে গেলে তাঁর মৃত্যু হয়। সবিন্দ্রর লাশ তাঁর সহকর্মীরা বাংলা ক্যান্টিন এলাকায় নিয়ে গিয়ে পাহারায় রাখেন। সেখানে লাশ গুমের গুজব ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্দ বাংলাদেশি শ্রমিকরা বয়লার এলাকার প্রকল্পের একটি অফিসসহ ক্যানটিন, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ওয়েল্ডার এবং পাশ্ববর্তী স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর চালান। এক পর্যায়ে চীনা শ্রমিকদের আবাসিক এলাকায় ঢুকে ভাঙচুর চালান। এ সময় ক্রেন-বুলডোজারসহ কয়েকটি ভারি যন্ত্রপাতিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওই দিন সন্ধ্যার পর চীনা শ্রমিকরা এক হয়ে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। থেমে থেমে রাত ১১ টা পর্যন্ত সংঘর্ষ, ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি চলে। দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত চীনা শ্রমিক ঝাং ইয়াং ফাং বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে গত বুধবার প্রকল্প এলাকা ঘুরে গেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। তিনি এসে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরী বৈঠক করেছেন। কর্মকর্তারাও তাঁকে সব বিষয় অবহিত করেন। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উদ্ভুত পরিস্থিতি কারণে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে ইতিমধ্যে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক, পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার এবং তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালকের নেতৃত্বে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনটি কমিটিকেই আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আলাদাভাবে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এদিকে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে গত বৃহস্পতিবার সকালে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা সুপারভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে গুরুতর জখম হওয়া চীনা শ্রমিক লিন কু মু, ঝ্যাং হুয়া, ঝ্যাং সিং থান, ঝাং হু এবং জু ঝাংকে অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। রডের আঘাতে এঁদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়েছে। এঁদের হাত-পা লোহার আঘাতে ভেঙ্গে গেছে। বৃহস্পতিবার এ ছয় জনের শরীরে অস্ত্রপচার করা হয়েছে।

এব্যাপারে কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম জানায়, মামলার আসামীদের গ্রেফতার এবং লুট হওয়া মালামাল উদ্ধার অভিযান অব্যহত রয়েছে। যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের সুনির্দৃষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্ত্রের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ###

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর