মিথ্যা স্বাক্ষী বানিয়ে আদালতে পুলিশের প্রতিবেদন অন্যরকম

উত্তম আর্য্য, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:

⚫ কাগজে কলমে জমি ৩ বিঘা ⚫জোর করে ভোগ করে ২০ বিঘা ⚫আরও দাবী করে মারামারি

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় সন্ধানপুর ইউনিয়নের কুশারিয়া গ্রামে জমি দুইপক্ষের সৃষ্ট ঘটনা একরকম। অপরদিকে আদালতে পুলিশের প্রতিবেদন অন্যরকম দেয়ায় ১৬ জুন কুশারিয়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে শামীম আহমেদ বাদী হয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস/আই আপেল মাহমুদের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপার ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

বাদীর লিখিত অভিযোগ ও সরজমিনে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায় সন্ধানপুর ইউনিয়নের কুশারিয়া গ্রামের জমি নিয়ে মারামারি বাদী এবং বিবাদী তারা একই গ্রামের পাশপাশি বাড়ীর বাসিন্দা। তাদের পক্ষ মৃত-আবুল হোসেনের ছেলে শামীম ও শাহিন অত্যান্ত দরিদ্র এবং দিনমজুর। অপরপক্ষ আমজাদ কবিরাজ ও তার ছেলে হারুন অত্যান্ত দাঙ্গাবাজ, প্রভাবশালী, খামখেয়ালীপনা, জাল কাগজ সৃষ্টিকারী, চিহ্নিত জবরদখলকারী, লাঠিয়াল, পরসম্পদ লোভী, আইন অমান্যকারী, অত্যাচারী ও ফটকবাজ লোক বলে জানা যায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আমজাদ কবিরাজ ও তার ছেলে হারুন জাল দলিল তৈরি করে আবুল হোসেনের ২ একর ১০ শতক জমি প্রভাব খাটিয়ে হালজরিপে রেকর্ড করে নেয় এবং আরও জাল দলিল দেখাইয়া জমি দাবী করে আবুল হোসেনের পরিবারকে বিভিন্ন কায়দায় হয়রানি করতে থাকে। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ চলে আসছিল। ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় হৈচৈ, মারামারি, জবরদখল, মামলা মোকদ্দমা ছাড়াও একাধিক শালিসী বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকার কতিপয় ভূঁইফোড় মাতাব্বরের ইশারায় বিষয়টি অমীমাসিংত থেকে যায় বলে জানা যায়।

কুশারিয়া গ্রামের জয়েন উদ্দিনের ছেলে নূরুল ইসলাম ও মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে মজিবর জানায় কুশারিয়া মৌজার ৩৯৯৯ দাগে মোট ১৭ একর ৭৬ শতক জমি রয়েছে। এই জমির মধ্যে মৃত আবুল হোসেনের পরিবারের নামে ৬ একর ৩৪ শতক জমি আরওআর ভূক্ত। অবশিষ্ট জমি বন বিভাগের নামে। সেই রেকর্ডভূক্ত জমি থেকে আমজাদ কবিরাজ ৩ বিঘা জমি দানপত্র সূত্রে মালিক হলেও তিনি জাল দলিল সৃষ্টি করে প্রভাব খাটিয়ে ৩ বিঘার স্থলে ৬ বিঘা ১০ শতক জমি হাল জরিপে রেকর্ড করে নেয়। আমজাদ কবিরাজ এই রেকর্ডকে পুঁজি করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকার নামকরা মামলাবাজ জয়নাল তালুকদার কে হাত করে আবুল হোসেনের জমি ছাড়াও বন বিভাগের সহ প্রায় ২০ বিঘা জমি জোর করে দখল করে নেয় বলে জানা যায়। পরে আবুল হোসেনের ছেলে শামীম টাঙ্গাইল আদালতে রেকর্ড সংশোধনের মামলা করলে আমজাদ আলী কবিরাজ ও তার ছেলে হারুন ক্ষিপ্ত হয়ে এ মারামারির সৃষ্টি করে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে আমজাদ কবিরাজের ছেলে হারুনের কাছে বির্তকিত জমির দলিল দেখতে চাইলে তিনি দেই দিচ্ছি বলে কয়েকবার স্বীকার করলেও শেষে সাংবাদিকের দলিল লেখার এখতিয়ার নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন।

অনুসন্ধানে জানা যায় চলতি বৎসরের ৭ ফেব্রুয়ারি মৃত আবুল হোসেরে ছেলে শামীম ও শাহীন তাদের নিজস্ব লেবুর বাগানে কাজ করিতেছিল। অপরদিকে আমজাদ কবিরাজ তার দুই ছেলে হারুন ও লিয়াকত বোন জামাই আজমত ও মোন্নাফ ছাড়াও তার দুই বোন এবং দুই ভাইয়ের স্ত্রী ও তার মা সহ ১০/১২ জনের একটি দল সন্ত্রাসী কায়দায় লাঠি, শোঠা নিয়ে নিরীহ শামীম ও শাহীনের উপর অর্তকিত হামলা করে। কোনকিছু বুঝে উঠার আগেই তাদের মাথা ফাটিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় হৈচৈ পড়ে যায় এবং ঐ রাতেই থানায় মামলা হয়। এ বিষয়ে পার্শ্ববর্তী বাড়ির আমান আলীর স্ত্রী রিতা জানায় আমজাদ কবিরাজ ও তার পরিবারের সদস্যরা অবস্থা বেগতি দেখে মারামারি ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজেরাই নিজেদের ঘরের দুইটি জানালা ভাংচুর করে এবং চেয়ারম্যানের সহায়তায় এ্যাম্বুলেন্স ডেকে এনে সুস্থ মানুষ ঘাটাইল হাসাপাতালে ভর্তি হয়। পরে টাকার জোড়ে মিথ্যা সাক্ষী এবং মিথ্যা আসামী দিয়ে থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে ঐ গ্রামের একাধিক যুবক জানায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস/আই আপেল মাহমুদ আইনের লোক হয়ে আদালতে সঠিক প্রতিবেদন দেওয়া কথা থাকলেও তিনি তা না করে বিবাদী আমজাদ কবিরাজের কাছ থেকে মোটা টাকা উৎকোচ গ্রহন করে বাদী পক্ষকে আসামী বানিয়ে ২৪মে আদালতে মিথ্যা মনগড়া প্রতিবেদন দাখিল করে।

কুশারিয়া গ্রামের ইমান শেখেন ছেলে মানিক (৪০) জানায় ঘটনাস্থলে আমি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত ছিলাম। পাড়ার সকল লোকের উপস্থিতিতে পুলিশের কাছে মারামারির সকল কিছু খুলে বলেছি। কিন্তু পুলিশ আমাকে সাক্ষীর কলামে নাম না দিয়ে ঘটনাস্থলে যাদের কখনো দেখি নাই তাদেরকে সাক্ষী মানা হয়েছে এবং আমার মতো অনেকেই উপস্থিত ছিল তাদেরকে সাক্ষী না মেনে ঘটনাস্থল থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে মন্টুর বাড়ি এবং মারামারির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না অথচ তাকেও সাক্ষী মানা হয়েছে।

একই গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে আঃ লতিফ (৫০) জানায়, গ্রামে চেয়ারম্যান থাকতেও আমজাদ কবিরাজ ও তার পরিবারের সদস্যরা এতটাই বেপেরোয়া হয়েছে যে, আইনগতভাবে রেকর্ড সংশোধনের মামলা করায় হারুন নিরীহ শামীম ও শাহিনের নামে ৬টি মাসে ৫টি মামলা দায়ের করেছে যা অমানবিক এবং দুঃখজনক।

আমজাদ আলীর জাল দলিল সৃষ্টির বিষয়ে একই গ্রামের ইন্তাজ আলীর ছেলে আবুল হোসেন (৭৫) এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন শুনেছি আমজাদ আলীর কয়টি টাকা হওয়ায় জাল কাগজ দিয়ে মানুষকে হয়রানি করছে।

সন্ধানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের কাছে জমি সংক্রান্ত বিরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি দুইপক্ষকেই মীমাংসা হতে বলি কিন্তু কেউ আমার কথা নেয় না।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘাটাইল থানার উপপরিদর্শক এস/আই আপেল মাহমুদের কাছে জানতে চাইতে তিনি মজলুমের কন্ঠকে বলেন উভয়পক্ষের ডাক্তারী রিপোর্ট দেখে আমি প্রতিবেদন দিয়েছি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর