নৌকায় ভোট দিতে রাজি না হওয়ায় কুপিয়ে জখম

পঞ্চম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের চৌবাড়ি ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকালে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে জোর করে ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

বুথের মধ্যেই সরকার দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মতিন তালুকদারের লোকজন নৌকায় ভোট দিতে ভোটারদের ওপর বলপ্রয়োগ করেন। ভোটাররা ব্যালট পেপার তাদের কাছে ছেড়ে দিতে রাজি না হওয়ায় বাড়ি ফেরার পথে কেন্দ্রের মধ্যেই পুলিশের সামনে চৌবাড়ি গ্রামের অধিবাসী জেলা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাড. রেজাউল করিম ভুট্টু, খায়রুল আলম ও জহুরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজনকে বেধড়ক মারপিট করা হয় এবং কুপিয়ে জখম করে তারা।

আহত অ্যাড. রেজাউল করিম ভুট্টুকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় এবং অস্ত্রোপচার করা হয়। ভুট্টুর সহকর্মী ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মহসিন হক রানা এই ঘটনাকে ‘ন্যাক্কারজনক’ বলে মন্তব্য করেন। ডা. রাব্বান তালুকদার বলেন, ‘ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ভিকটিমের প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। সুস্থ হতে বেশ সময় লাগবে।’ মারপিটের আঘাতে আহত খায়রুল ও জহুরুলকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

সকাল ৯টার দিকে এই সহিংসতার পর ভোটারদের উপস্থিতি ক্রমশ কমতে থাকে। এ কেন্দ্রের চারটি বুথে ভোটার সংখ্যা ৩১১৪ জন হলেও দুপুর দেড়াটা পর্যন্ত মাত্র ৩৫৯ ভোট পড়ে। খবর পেয়ে জেলা নির্বাচন অফিসার আবুল হোসেন দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে এ কেন্দ্রের পরিস্থিতি সামাল দেন।আহত অ্যাড. রেজাউল করিম ভুট্টুর বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মো. সোহেল রানার অভিযোগ, ‘পুলিশের উপস্থিতিতেই সকাল থেকেই সরকার দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল মতিন তালুকদারের লোকজন কেন্দ্র নিজেদের দখল নেওয়ার চেষ্টা করেন। বুথের মধ্যে ঢুকে প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য বলপ্রয়োগ করতে থাকেন। যারা রাজি হননি তাদের ভয়ভীতি দেখানো হয়। ভয়ভীতি উপেক্ষা করে যারা নিজেদের পছন্দমতো ভোট দিয়েছেন, তাদের মারপিট করা হয়।’

মারপিটে আহত চৌবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম ও জহুরুল ইসলাম জেলা নির্বাচন অফিসার ও এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার প্রকৌশলী এস এম সানজিদ আহম্মেদের সামনেই সাংবাদিকদের জানান, ‘এলাকার স্বপন মাস্টার, সাদেক মাস্টার, তপন ও বেল্লালের নেতৃত্বে সরকারদলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল মতিন তালুকদারের লোকজন বুথের মধ্যে তাদের পক্ষে ভোট প্রদানে চাপাচাপি করে। রাজি না হওয়ায় বুথের বাইরে গেলে কামারখন্দ থানার উপ-পরিদর্শক এসআই মাইদুলের সামনেই আমাদের বেধড়ক মারপিট করা হয়।’

অভিযোগ শুনে জেলা নির্বাচন অফিসার আবুল হোসেন নিজেই প্রতিটি বুথে গিয়ে প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারসহ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার ও পুলিশ সদস্যদের সতর্ক করেন। এসময় এসআই মাইদুলকে কেন্দ্রে পাওয়া যায়নি। তবে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এসআই আব্দুর রাজ্জাক দাবি করেন, পুলিশের অনুপস্থিতিতে কেন্দ্রের বাইরে সকালে ঘটনাটি ঘটেছে। সংঘর্ষে বেশ ক’জন আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি ফালা (ধারালো অস্ত্র) জব্দ করলেও কাউকেও আটক করতে পারেনি। তবে জালভোট দেওয়ার অপরাধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে জনি হোসেন নামে নৌকার সমর্থক স্থানীয় এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ।

ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার প্রকৌশলী এস এম সানজিদ আহম্মেদ বলেন, ‘সকালে কেন্দ্রের বাইরে কিছুটা বিশৃঙ্খলা হলেও বুথে কিছু হয়নি। গণ্ডগোলের কারণে ভোটার উপস্থিতি কম।’ এসব বিষয়ে বক্তব্য নিতে নৌকার প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মতিন চৌধুরীর মোবাইলে বার বার চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘চৌবাড়ি ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সহিংস ঘটনায় অ্যাড. রেজাউল করিম ভুট্টুসহ বেশ ক’জনকে মারপিটের বিষয় শুনে তাৎক্ষণিক সেখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানো হয়।’

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর