মৃত্যুর খুব কাছে বিরল রোগে বুড়িয়ে যাওয়া নিতু, তবুও হাসে খেলে আঁকে স্কুলে যায়

মৃত্যু খুব কাছে জেনেও লেখাপড়া, ছবি আঁকা আর গানের মধ্য দিয়ে জীবনকে উপভোগ করার চেষ্টায় ব্যস্ত সিলেটের তাকলিমা জাহান নিতু নামের মেয়েটি।

নিতুর বয়স মাত্র ১২ বছর। ডাক্তারদের ভাষ্যমতে বিরল ব্যাধি প্রোজেরিয়ায় আক্রান্ত এই শিশুটি দাঁড়িয়ে আছে জীবনের অন্তিম প্রান্তে।

শিশুটিকে দেখে বোঝার উপায় নেই আর কিছুদিন পরেই মৃত্যুর অজানা অতল গহ্বরে হারিয়ে যাবে সে। চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ থাকায় পরিচিতজনদের নিগ্রহের শিকার হতে হয় তাকে।

গোপনে চোখের পানি মুছে নিতুর মা জোস্না খানম বলেন, আমার মেয়েকে কখনো কেউ কোলে তুলে আদর করেনি, সবাই তাকে ভয় পায়, দানব বলে দূরে ঢেলে দেয়।

ছোট্ট নিতু জীবন শুরু করার আগেই জানতে পেরে যায় তার জীবনাবসানের কথা। খুব বেশি সময় নেই প্রোজেরিয়া আক্রান্ত শিশু নিতুর হাতে।

চাইলেও আজীবন মায়ের বুকে ঘুমুতে পারবে না নিতু। বছরখানেকের মধ্যেই মৃত্যু তাকে কেড়ে নেবে মায়ের বুক থেকে, তার আপনজনদের থেকে, আর তার অদেখা এই সুন্দর পৃথিবী থেকে।

তবে এসব কিছুই থামাতে পারেনি তার নিত্যদিনের আনন্দ-উচ্ছ্বাসকে। এখনো সে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যায়, ছবি এঁকে ও পুতুল খেলে নিজের অবসর সময় কাটায়। নিতুর দিনমজুর বাবা আর গৃহিণী মায়ের এখনো আশা, উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো আবারও সুস্থ হয়ে উঠবে তাদের আদরের চতুর্থ সন্তান।

স্থানীয় তাসনুভা-শামীম ফাউন্ডেশনের প্রতিবন্ধী স্কুলে পড়াশুনা করছে হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর এলাকার নিতু। পড়াশুনায়ও ভালো। যেমন লিখতে পারে, তেমনি ছবিও আঁকতে পারে মেয়েটি। অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করলেও কথা বলে খুবই কম।

শিশুটির বাবা ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী কামরুল হাসান জানান, নিতুর জন্ম ২০০৭ সালে। জন্মের ৩ মাস পরই নিতু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এতে নিতুর হাত, পা, মুখ ও শরীরের চামড়া শুকিয়ে আস্তে আস্তে বৃদ্ধদের রূপ ধারণ করে। উদ্বিগ্ন হয়ে বিষয়টি নিয়ে তিনি এক প্রতিবেশীর সঙ্গে আলোচনা করেন। ওই প্রতিবেশী তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেন। এরপর নিতুকে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান তার মা। ওই চিকিৎসক নিতুকে গ্যাস্ট্রিকের কিছু ওষুধ দেন। দুর্ভাগ্যক্রমে, ওই চিকিৎসক নিতুর ভুল চিকিৎসা করেন এবং রাতারাতি তার সকল চুল পড়ে যায়।

ধীরে ধীরে পড়ে যেতে থাকে তার পায়ের নখ। শরীরের রগগুলো শক্ত হয়ে চামড়ার ওপর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। এরপর তারা নিতুকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, নিতু প্রোজেরিয়া নামের এক বিরল রোগে ভুগছে এবং এই রোগে আক্রান্ত হলে শিশুরা দ্রুত বুড়িয়ে যায়। পৃথিবীতে প্রতি ৪০ লাখে একজন প্রোজেরিয়া রোগী পাওয়া যায়। এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই এবং এই রোগাক্রান্ত শিশুরা সাধারণত ১৩ বছরের বেশি বাঁচে না।

আর ডাক্তারদের সেই হিসাবমতে নিতুর হাতে আছে আর একটি বছর।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর