করোনায় অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে নেছারাবাদের মশারি শিল্প

ছায়াঘেরা বাড়িগুলোয় মশারি তৈরি হচ্ছে ঘরোয়া পরিবেশের কারখানায়। বাড়ির বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই কি কর্মজজ্ঞ চলছে বাড়িগুলোর মধ্যে। এসব বাড়িতে প্রবেশ করলে চোখে পড়ে বাড়ির পুরুষ এবং মহিলারা একত্রিত হয়ে কারিগর নিয়ে তৈরি করছেন মশারি, পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে বাড়ির বাচ্চারাও তাদের কাজে সহযোগিতা করছেন।

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলা সদর থেকে সন্ধ্যা নদীর পশ্চিম পাড় সুটিয়াকাঠী গ্রাম, এ গ্রামের মহল্লায় মহল্লায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় গড়ে তোলা হয়েছে মশারি তৈরির কারখানা। তবে একটি মহল্লার সবকটি পরিবার মশারি তৈরির পেশায় নিয়োজিত, কারখানাগুলোয় ইলেকট্রিক্যাল আর প্যাডেল সেলাই মেশিনের টুকটাক ঠক ঠক শব্দ আর নানা যন্ত্রের ছন্দে ভোর থেকেই মুখর হয়ে উঠে চলে গভীর রাত পর্যন্ত। চারদিকের নিস্তব্ধতা ভেঙে অবিরাম শব্দের মূর্ছনা যেন জানিয়ে দেয় এটা আর পাচঁটা মহল্লার মতো নয়, অজপাড়াগাঁয়ের এই মহল্লাটির নাম মশারী পট্টি। এখানকার দরিদ্র মানুষের হাতে এই শিল্পের গোড়াপত্তন হলেও ভাগ্য বদলায়নি তাদের। দাদন ব্যবসায়ী আর চড়া সুদে এনজিও থেকে লোন নিয়ে কোনভাবে তিন বেলা দু’মুঠো খেয়ে বাপ দাদার আদি ব্যবসা কে টিকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু মরার উপর খরার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈশ্বিক মহামারী করোনা। করোনা কারণে সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে মশারি উৎপাদন,

কর্মহীন হয়ে পড়েছে মশারি তৈরি কারিগররা। লকডাউন চলাকালীন সময় ঢাকা থেকে কাঁচামাল আনতে না পেরে এবং তৈরি মশারি বিক্রি করতে না পেরে নিজেদের স্বল্প পুঁজির অর্থ শেষ করে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে এই মশারি তৈরির কাজে নিয়োজিত ২০ হাজার নারী পুরুষ, অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে তাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষাজীবন, তাদের খোঁজ কেউ রাখেনি পায়নি তেমন কোনো সরকারি সাহায‍্য, চরম দারিদ্র্যতাই নিজেদের আদি পেশা ছেড়ে অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছেন দক্ষ মশারি তৈরির কারিগর ও কারখানা মালিকরা। এতে ঐতিহ্য হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নেছারাবাদের মশারি শিল্প।

নেছারাবাদ উপজেলার সুটিয়াকাঠী, কৌরিখাড়া, নান্দুহার, ইন্দেরহাট, মিয়ার হাট, সোহাগদল, বিন্না, জিলবাড়ি, চামি, ডুবি, উড়িবুনিয়া, প বেকী ও বলদিয়াসহ স্বরূপকাঠি এর আশেপাশে উপজেলা ৩৭ টি গ্রামে প্রায় ২০০ টি মশারি তৈরির ছোট বড় কারখানা রয়েছে, অগণিত পরিবার নিজেরা মশারি তৈরি করছে নিজেদের বসত ঘরে। ঘরোয়া পরিবেশে অলি-গলিতে গড়ে ওঠেছে এ সব কারখানা। প্রতিদিন এসব গ্রাম থেকে হাজার-হাজার মশারি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হয় ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়। নেছারাবাদের মশারি তৈরি জনক হচ্ছেন এই মশারি পট্টির সন্তান আব্দুল আউয়াল ও হাবিবুর রহমান।

বার্তাবাজার/ভিএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর