করোনাকালে দেশে বেকার হয়েছেন দেড়কোটি মানুষ

সারাদেশে বিভিন্ন খাতে কাজ করা প্রায় ১ কোটি ৪৪ লাখ মানুষ করোনাকালে কাজ হারিয়ে আর কর্মস্থলে ফিরতে পারেননি। তাদের পরিণতি হয়েছে বেকারত্ব। কর্মহীনদের নিয়ে অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত এক গবেষণা শেষে এই তথ্য জানিয়েছেন।

দেশে এখন চলছে সর্বাত্মক লকডাউন। এতে নতুন করে আরও অনেক মানুষ হয়েছে বেকার। যার ফলে এই তালিকা আরও বড় হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টজনরা। নতুন করে আরও ৪ কোটি মানুষ হতে পারেন কর্মহীন।

অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাতের গবেষণায় দেখানো হয়, দেশে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে ৬ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার মানুষ কর্মে নিয়োজিত ছিলেন। শুধু লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়েছেন ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৭৩ হাজার ২৭১ জন। অর্থাৎ মোট কর্মগোষ্ঠীর ৫৯ শতাংশই কর্মহীন হয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেকার হয়েছে সেবা খাতে।

এ বিষয়ে ড. আবুল বারকাত জানান, কাজ হারানোদের ৪০ শতাংশ কাজ ফিরে পাবে না। তাদের জন্য তিনি সরকারের কাছে বেকারদের ভাতা চালুর সুপারিশ করেছেন। তবে সাময়িক ভাতা দেওয়ার চেয়ে শ্রেয় হবে তাদের কাজ দেওয়া। তিনি বলেন, করোনার প্রভাবে আগামীতে কর্মসংস্থানের প্যাটার্নও পাল্টে যাবে। গুরুত্ব বাড়বে প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষতাভিত্তিক কর্মসংস্থানের। সেদিকে সরকারকে নজর রাখতে হবে।

বিআইডিএস’র সাবেক মহাপরিচালক এমকে মুজেরি বলেন, করোনার প্রভাব দীর্ঘদিন হওয়ায় গরিব মানুষের অবস্থা খুবই খারাপ। অনেকে বেকার হয়েছেন, নতুন করে কাজে ফিরতে পারছেন না। এরই মধ্যে বড় আকারে ধাক্কা দিয়েছে করোনা। সরকারকে এখন বেকার ও দরিদ্র মানুষের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। আগামী বাজেটে বেকারদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি রাখার সুপারিশ করেন তিনি।

বারকাতের গবেষণায় দেখা গেছে, করোনায় কৃষি খাতে কাজ হারিয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ মানুষ। এর মধ্যে প্রায় ৪৬ লাখ আর কাজে ফিরতে পারেনি। এছাড়া শিল্প খাতে প্রায় ৯৩ লাখ শ্রমিক কর্মহীন হয়েছেন। তাদের ৩৭ লাখ শ্রমিক আর পুরনো কাজে ফিরতে পারেননি। সেবা খাতে ১ কোটি ৫৩ লাখ কর্মী চাকরি হারিয়েছে। তাদের ৬১ লাখই বেকার হয়ে পড়েছেন। তারা আগের কাজে ফিরতে পারেনি।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, কাজে ফিরতে না পারা এসব মানুষের অনেকে বেঁচে থাকার তাগিদে ঋণগ্রস্ত হয়েছেন। এমন অবস্থা চলতে থাকলে অর্থনীতিতে এক ধরনের দুষ্টচক্র সৃষ্টি হবে। যেখানে এক জনের স্বল্প ব্যয়ের কারণে অন্যের আয় হবে স্বল্প। এটি মানুষের জীবন-জীবিকা উভয়কে অনিশ্চিত করবে। এর ফলে সঞ্চয় হলেও হবে অতি স্বল্প। সৃষ্টি হবে বিনিয়োগহীন পরিবেশ বা বিনিয়োগ হলেও হবে অতি স্বল্প। এর ফলে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হারও কমে আসবে।

এরইমধ্যে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় দফায় লকডাউন। তৈরি পোশাক, রেস্তোরা ও শিল্পকারখানা চালু রাখার সুযোগ থাকলেও নির্মাণ, পরিবহণ, পোলট্রিসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত অসংখ্য মানুষের জীবিকা পড়ছে সংকটে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের হিসাবে সারাদেশে পরিবহণ শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। কঠোর লকডাউনে সব ধরনের গণপরিবহণ বন্ধ।

এর আগে এক সপ্তাহের শিথিল লকডাউনেও দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ ছিল। ফলে এরইমধ্যে কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছেন এ খাতের কয়েক লাখ কর্মী। পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ খাতের শ্রমিকেরা সবাই দিনভিত্তিক মজুরি পান। লকডাউনের কারণে ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পড়েছেন তারা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, কোভিড-১৯ ধাক্কায় অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আগামীর প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচন। আগামী বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হবে কর্মসংস্থান। কিছু পদক্ষেপ থাকবে যেখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিক নির্দেশনা থাকবে।

বার্তা বাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর