পুলিশকে ঘুষ না দেওয়ায় দিনমজুরকে ভারতীয় নাগরিক বানিয়ে কারাগারে প্রেরণ!

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে আটককৃত মোটর সাইকেলসহ তিনজনকে ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়ে নিরীহ এক দিনমজুরকে ভারতীয় নাগরিক বলে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে।

গত শুক্রবার রাতে কালিগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক জিয়ারত আলীর নেতৃত্বে পুলিশ উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের ড্যামরাইল গ্রাম থেকে তাদেরকে আটক করেন।

উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে বাবু নামে এক ব্যক্তি জানান, গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে তিনি তার গ্রামের ধনঞ্জয় কয়ালের মুদি দোকানে মাল কিনতে আসেন। এ সময় লাইট বন্ধ করে দু’টি মোটর সাইকেলে পাঁচজনকে ড্যামরাইল গ্রামের মধ্যে ঢুকতে দেখে তিনি স্থানীয় দেবেন মন্ডল, সুভাষ মন্ডলকে ডেকে নিয়ে গ্রামের ভিতর হাঁটতে থাকেন।

পথিমধ্যে দেবেন ও সুভাষ দাঁড়িয়ে গেলেও তিনি এগিয়ে গিয়ে ওই এলাকার মনোরঞ্জন মন্ডলের বাড়িতে যেয়ে ছেলে সরোজিতের সঙ্গে হাতকড়া পরানো অবস্থায় বারান্দায় বসে থাকতে দেখে তাদের অপরাধ জানতে চান। এসময় কালিগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক জিয়ারত আলী তাদেরকে তক্ষক সাপের ব্যবসায়ী, কখনো মাদক ব্যবসায়ী আবার কখনো জুয়াড়ি বলে দাবি করেন।

একপর্যায়ে মনোরঞ্জনকে ছেড়ে দেন। এরপর এক পুলিশ সদস্য তার মোটর সাইকেলে বসে রাস্তায় আসার কথা বলেন। পথে দেবেন ও সুভাষের সঙ্গে দেখা হলে কোন কথা না বলতে দিয়েই তাদের হাতকড়া পরিয়ে সরোজিতের বাড়িতে নিয়ে যায়। এ সময় বেড়াতে এসে
ঘরের মধ্যে অবস্থানকারী মনোরঞ্জন মন্ডলের বড় ছেলে স্বপন মন্ডলের ভায়রা-ভাই পাশ্ববর্তী শ্যামনগর উপজেলার কাচড়াহাঁটি গ্রামের রাধা কান্ত মন্ডলের ছেলে কমলেশ মন্ডলকে (২৩) বিভিন্ন প্রশ্নবানে জর্জরিত করে তাকেও পাচারকারি বলে হাতকড়া পরান জিয়ারত আলী।

একপর্যায়ে এক লাখ টাকার বিনিময়ে ৪ জনকে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন উপ-পরিদর্শক জিয়ারত আলী। পরে এক গ্রাম পুলিশের কাছে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। টাকা না পেয়ে দেবেন, সুভাষ, সরোজিত ও কমলেশসহ তার (প্রশান্ত) ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটিও থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরদিন শনিবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে দেবেনের পিসে-মহাশয় উপ-পরিদর্শক জিয়ারতকে ৮০ হাজার টাকা নিলে মোটর সাইকেলসহ দেবেন, সুভাষ ও সরোজিতকে ছেড়ে দেন। তবে কমলেশকে কারাগারে প্রেরণ করেন।

শনিবার বিকেলে আদালত থেকে জেলে পাঠানোর সময় কমলেশ সাংবাদিকদের বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে অভাবের তাড়নায় তিনি দু’ একবার ভারতে কাজ করতে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। এটাই তার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান। শ্যামনগর উপজেলার কাচড়াহাটি গ্রামের হরিদাস মন্ডল জানান, ভাই কমলেশকে কালিগঞ্জ থানায় ধরে নিয়ে গেছে জানতে পেরে শনিবার সকাল ৯ টার দিকে কমলেশ এর জাতীয় পরিচয়পত্র, ওয়ারেশকাম ও চারিত্রিক সনদসহ কাকাত ভাই একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক অনাথ মন্ডল, উৎপল মন্ডল, কেনারাম মন্ডলসহ কয়েকজনকে নিয়ে কালিগঞ্জ থানায় যান।

দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রেখে বিকেল ৩ টার দিকে জিয়ারত আলী তাদেরকে বাড়ি চলে যেতে বলেন। তারা জাতীয় পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমানের কাছে দিয়ে বাড়িতে ফেরেন। বিষয়টি তারা কালিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে অবহিত করে রাত ৮টার দিকে আবারও থানায় যায়।

রাত ৯ টার দিকে কমলেশকে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে উল্লেখ করে জিয়ারত আলী মামলা দুর্বল ধারায় অভিযোগপত্র দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছে ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন। তারা টাকা দিতে অসম্মতি প্রকাশ করে চলে যায়। পরে তারা জানতে পারেন যে কোন প্রমাণ ছাড়াই ভারতীয় নাগরিক বানিয়ে মামলা দিয়েছেন জিয়ারত আলী।

কালিগঞ্জের ধলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান জি এম শওকত হোসেন বলেন, ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে ৩ জনকে ছাড়া হলেও কমলেশকে ভারতীয় নাগরিক বানিয়ে মামলা দেওয়ার বিষয় তিনি শুনেছেন।

কালিগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক জিয়ারত আলী আটকৃতদের ছেড়ে দেওয়ার নামে কারো কাছ থেকে টাকা নেওয়া ও মামলা দুর্বল ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করার জন্য টাকা চাওয়ার কথা অস্বীকার করেই বলেন, সার্কেল স্যারের কথামত ৩ জনকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় নাগরিক হিসেবে কোন কাগজপত্র না থাকলেও মুখের কথা অনুযায়ী কমলেশকে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে।

কমলেশ এর জাতীয় পরিচয়পত্র তার কাছে রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিদর্শক স্যার বলতে পারেন।

থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান জানান, ভারতীয় নাগরিক বলায় কমলেশকে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে আসামি চালান দেওয়ার পর কমলেশ এর মূল জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার পর সেটি উপ-পরিদর্শক জিয়ারত আলীকে দিয়েছেন। টাকা নিয়ে ৩ জনকে ছেড়ে দেওয়া ও কমলেশ এর কাছে টাকা চাওয়ার বিষয়ে তার জানা নেই বলে তিনি বলেন।

প্রসঙ্গত, কালিগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক জিয়ারাত আলীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। গত ১৬ এপ্রিল ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন আব্দুল জব্বার নামে এক ব্যক্তি।

বার্তাবাজার/ই.এইচ.এম

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর