হতদরিদ্রদের চাল বিতরণ অনিয়মে ডিলারের দোকান সিলগালা

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় হতদরিদ্রদের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণ অনিয়মের অভিযোগে বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করে ডিলারের দোকানঘর সিলগালা করার ঘটনা ঘটেছে।

বুধবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার বুড়াইচ ইউনিয়নের শৈলমারী বাজারের শরিফুল ইসলাম পলাশ নামের এক ডিলারের দোকানঘরে এ ঘটনা ঘটে।

আলফাডাঙ্গা খাদ্য গুদাম অফিস ও সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, প্রতিবছরের দূর্যোগকালীন সময়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় হতদরিদ্রদের জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় ডিলারের মাধ্যমে সরকার ১০টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ করেন।

আলফাডাঙ্গা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ১২জন ডিলারের মাধ্যমে ৫ হাজার ৩৬৮ জন হতদরিদ্র উপকারভোগী কার্ডধারীকে ১৬১.০৪ মে.টন প্রতিমাসে বরাদ্দ দেওয়া হয়। বছরের ৫মাস এ চাল বিতরণ করা হয়। গত সোমবার থেকে চাল বিতরণ শুরু হয় উপজেলার বুড়াইচ ইউনিয়নের ৪,৫,৬ (সাবেক ২ নম্বর ওয়ার্ড) ওয়ার্ডের শৈলমারি বাজারের শরিফুল ইসলাম পলাশের ডিলারঘরে। ডিলার শরিফুল ইসলামের আওতায় ৩৭৩ জন হতদরিদ্র কার্ডধারী রয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার ২৩৬জনকে চাল দেওয়া হয়। বুধবার চাল বিতরণ শুরু হলে ডিলারের বিরুদ্ধে প্রত্যেক কার্ডের ৩০কেজি চালের মধ্যে ১ থেকে দেড় কেজি চাল কম দেওয়ার অভিযোগ উঠে। দুপুরে উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশিকুর রহমান মোল্লা ডিলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত পাওয়ায় চাল বিতরণ বন্ধ করে ডিলারের দোকানঘর সিলগালা করে দেন।

সিলগালা দোকান। ছবি- বার্তা বাজোর

বুড়াইচ ইউনিয়নের শিয়ালদী গ্রামের চাল ওজনে কম পাওয়া কার্ডধারী ভ্যানচালক আবু সাঈদ বলেন, আমরা চার কার্ডধারী একসাথে চাল উঠাতে গেলে ১২০ কেজি চালের জায়গা ৬০ কেজি পরিমাপ করে দেন ডিলার। কিন্তু একটু এগিয়ে অন্য একটি ঘরে অপর ৬০ কেজি চাল ওজন দিলে সেখানে ৫৭ কেজি হয়। তবে অপর কার্ডধারী শৈলমারী গ্রামের শাহিনুর বেগম জানান, আমি ৩০ কেজি চাল সঠিকভাবে পেয়েছি।

চালের ডিলার শরিফুল ইসলাম পলাশ বলেন, আমার সাথে রেশারেশি ছাড়া কিছুই না। আমি সঠিকভাবে খাদ্য গুদাম থেকে চাল বুঝে আনতে গিয়ে গুদাম কর্মকর্তা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। তাছাড়াও চাল বুঝে আনার সময় গুদাম কর্মকর্তাকে বাড়তি টাকা না দিলে সে ডিলারদেরকে হয়রানি করেন। আমি সরকারি ট্যাগ অফিসারকে সাথে রেখে কার্ডধারীদের মধ্যে সঠিকভাবে চাল বিতরণ করছি।

শৈলমারি বাজার ডিলারের ট্যাগ অফিসার ও উপজেলা দারিদ্র বিমোচন কর্মকর্তা স্বপন কুমার সরকার বলেন, আমরা সঠিকভাবে হতদরিদ্রদের চাল বিতরণ করছি। হঠাৎ বুধবার দুপুরের দিকে উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা আশিকুর রহমান এসে বলেন, মঙ্গলবার বিতরণকৃত চাল দুই-তিনজনকে কম দেওয়া হয়েছে। আর বুধবার দুইজন কার্ডধারী অফিস থেকে ওজন না দিয়ে ৬০কেজি চাল নেওয়ার পরে অন্য দোকানে ওজন দিয়ে এসে বলেন, চাল ওজনে তিন কেজি কম হয়েছে। এটা মনে হচ্ছে রেশারেশি।

বুড়াইচ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য অসিত কুমার মৃধা বলেন, আমি মঙ্গলবার চাল বিতরণের সময় উপস্থিত থেকে দেখেছি চাল বিতরণে কোন অনিয়ম হচ্ছে না। আজ অসুস্থ থাকায় ওখানে যেতে পারিনি।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশিকুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার থেকে শৈলমারি বাজারের ডিলার শরিফুল ইসলামের আওতায় ৩৭৩ জন কার্ডধারী রয়েছেন। ২৩৬ জনের মধ্যে মঙ্গলবার চাল বিতরণেও অনিয়ম করেছেন মর্মে অভিযোগ পেয়ে ডিলারকে সতর্ক করা হয়। তারপরও সে বুধবার হতদরিদ্রদের মধ্যে চাল বিতরণে ওজন কম দেওয়ার খবরে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রমাণ পেয়ে চাল বিতরণ স্থগিত করে ডিলারের দোকানঘর সিলগালা করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপজেলা সভাপতি তৌহিদ এলাহী বলেন, ‘আমি শৈলমারি ডিলারের চাল বিতরণে ওজন কম দেওয়ার খবর শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হতদরিদ্রদের চাল বিতরণে কোন অনিয়ম হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

মিয়া রাকিবুল/বার্তাবাজর/ই.এইচ.এম

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর