৩৩ বছরের ভিক্ষা বৃত্তির জীবন থেকে ফিরতে চান রফিকুল

বয়স ৫৩ ছুঁই ছুঁই ,বসে থাকেন সকাল থেকে বিকেল অব্দি। কখন মানুষ আসবে দু-একটাকা দেবে সেই অপেক্ষায় থাকেন। কি রোদ কি বৃষ্টি সব কিছুকে উপেক্ষা করে বসে থাকেন তিনি। বলছিলাম কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের ফারাজি পাড়া গ্রামের কৃষক পরিবারের মৃত কাশেম আলীর ছেলে প্রতিবন্ধী রফিকুল ইসলামের কথা।

মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) বিকালে প্রতিবন্ধী রফিকুলের কাছে গিয়ে দেখা যায়,একটি পলিথিন পেতে তার উপর তিনি বসে রয়েছেন, সাথে একটি ছাতা ও বাজারের ব্যাগ এবং কিছু খুচরো পয়সা। কথা হলো এই বৃদ্ধ ভিক্ষুকের সাথে,

তিনি বলেন,”৮৮ সাল থেকে আমি এখানে ভিক্ষা করছি,৩৩ বছর হলো আমি এই পেশার সাথে জড়িত,বয়স হচ্ছে এখন আর বেশিক্ষণ বসে থেকে ভিক্ষা করতে পারি না, যদি একটা কারো কাছে হুইল চেয়ার পেতাম তাহলে আশ-পাশের বাজারগুলোতে ভিক্ষা করতে পারতাম।”

তিনি আরো বলেন,” ভিক্ষা করতে আজ-কাল আর ভালো লাগে না। কারো সহযোগিতা পেলে ছোট্ট কোন মুদি দোকান দিতাম অথবা অটোরিক্সা চালাতাম বসে থেকে। ”

প্রতিবন্ধী রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা যায়,ছোট বেলায় তাঁর এক ভীষন জ্বর হয়। সেইসময় তার বামপাশের এক পা ও একহাত অবশ হয়ে যায়। এরপর স্থানীয়ভাবে কবিরাজী চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হলেও কর্মক্ষম হয়ে পরেন তিনি। এরপর থেকে তিনি কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী মহাসড়কের চন্ডিপুর বাজার সংলগ্ন স্থানে বসে ভিক্ষা বৃত্তি শুরু করেন সেই কিশোর বয়স থেকেই। টানা ৩৩ বছর ধরে এরকম স্থানে বসে ভিক্ষা করার কারণে তার বসার স্থানটি পরবর্তীতে ফকীরের তকোয়া নামে পরিচিত পায় সবার মুখে মুখে।

ফকিরের তকোয়ার স্থানীয় বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন, “রফিকুল দীর্ঘদিন ধরে এই একটি স্থানে বসে ভিক্ষা বৃত্তি করছেন। সে বাড়ি থেকে যাওয়া আসার জন্য প্রতিদিন রিক্সায় ৪০ টাকা খরচ করেন। তাকে যদি কেউ একটি হুইল চেয়ার দিয়ে সহযোগিতা করতো,তাহলে রফিকুল বিভিন্ন হাট-বাজারে গিয়েও ভিক্ষাবৃত্তি করতে পারতো।”

স্থানীয়দের কথায় আরো জানা যায়, কোন কাজ-কর্ম করতে না পারায় ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি বেছে নেন ভিক্ষা বৃত্তি। সেই থেকে তিনি এখনো একই স্থানে বসে চালিয়ে যাচ্ছেন তার জীবন সংগ্রাম তথা ভিক্ষা বৃত্তি। তার পরিবারে রয়েছেন বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও মানসিক ভারসাম্যহীন একটি মেয়ে।

খোলা স্থানে বসে ভিক্ষাবৃত্তি করার সময় ঝড়-বৃষ্টি আসলে সেদিন আর তার ভিক্ষাবৃত্তি হয় না। অনাহারে কাটাতে হয় সেই দিন। প্রতিদিন গড়ে ১০০-১৫০ আয় করেন, যা দিয়ে চলে ৪ জনের ভরণ পোষণ। প্রতিবন্ধী রফিকুল ইসলাম সমাজ সেবার আওতায় প্রতি ৩ মাস পর পর পান প্রতিবন্ধী ভাতা। তবে সে ভাতা গত একবছর ধরে বন্ধ রয়েছে।

তবে ভাতা বন্ধ কেন এর কারণে কিছুই বলতে পারেন না রফিকুল। রফিকুল ইসলাম তার ৩৩ বছরের ভিক্ষাবৃত্তি জীবন থেকে ফিরে একজন মুদি দোকানদার অথবা অটোরিক্সা চালক হতে চান। সেই ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত একটি হুইল চেয়ারেও আকুতি জানান প্রতিবন্ধী এই ভিক্ষুক।

সুজন মোহন্ত/বার্তাবাজার/পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর