৪র্থ শ্রেণির ছাত্রীর সাথে ৩৫ বছরের যুবকের বিয়ে

শেখ আমিনুর হোসেন, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: বিদ্যালয়ে জমা দেওয়া জন্ম সনদ অনুযায়ি ফারজানা ইয়াসমিনের জন্ম তারিখ ২০০৭ সালের ১৩ আগষ্ট। সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলার সোনাটিকারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী ও একই গ্রামের হাফেজ আশরাফুল ইসলাম ও আমেনা খাতুনের মেয়ে সে। সোমবার তার বয়স হয়েছে ১১ বছর ১০ মাস চারদিন। গত ১০ জুন ফারজানা ইয়াসমিনকে (১১) বিয়ে দেওয়া হয়েছে একই গ্রামের বাবর আলীর ছেলে আনারুল ইসলামের (৩৫) সঙ্গে।
সরজমিনে রবিবার সন্ধ্যায় সোনাটিকারী গ্রামে গেলে ঐ স্কুলের ছাত্রীর পিতা চৌবাড়িয়া গাজী পাড়ার জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ আশরাফুল ইসলাম বলেন, তার মেয়েকে বিয়ের ব্যাপার তিনি কিছুই জানেন না। মেয়ের মা আমেনাই সব।

স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী মনিরুল ইসলাম, মাফুজা খাতুন, মেয়ের চাচা শওকত হোসন ও আমির আলী জানান, আনারুলের সঙ্গে আমেনার ভালো সম্পর্ক এলাকায় বহুল প্রচলিত। মেয়েটির বাবা একটি মাদ্রাসার ইমাম। মা আমেনা খাতুন, নাহিদ হোসেন, হায়াত আলীসহ কয়েক জনের সহযোগিতায় গত ১০ জুন সোমবার রাত ৮ টায় তাকে জোরপূর্বক নলতার মাঘুরালীর মঈনুদ্দিন উকিলের বাড়িতে নিয়ে নীল রংয়ের রেজিষ্টার বইতে সাক্ষর করতে বললেন মা। মারপিটের ভয় দেখালে সাক্ষর করতে বাধ্য হয় ফারজানা। তাকে দেবহাটা উপজেলার নাংলা গ্রামে নুর ইসলাম হুজুরের বাড়িতে নিয়ে আটকে রাখে। হাফেজ আশরাফুল ইসলাম বিষয়টি জানতে পর গত ১৩ জুন বৃহস্পতিবার দুপুরে ইউপি সদস্য মনোয়ারা খাতুনের সহযোগিতায় মেয়েকে উদ্ধার করে এনে তার ভাই শওকতের বাড়িতে রেখে দিয়েছেন। মেয়েকে ফিরে পেতে জটিলতা নিরসনে ভাড়াসিমলা ইউপি চেয়ারম্যান নুরমোহাম্মাদ বিশ্বাস, সদস্য মনোয়ারা খাতুন ও সদস্য পিয়ার আলীর কাছে আবেদন করেও কোন লাভ হয়নি।

ফারজানা ইয়াসমিন পড়াশুনা করার স্বার্থ বাবার কাছে ফিরে আসার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছে।

তবে মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সারা বাংলাদেশের মধ্যে কালিগঞ্জ উপজেলাকে বাল্য বিবাহ মুক্ত প্রথম উপজেলা হিসেবে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়।
আমেনা খাতুন বলেন, আনারুলের চেয়ে তার বয়স কম হলেও তাকে খুব কাছ থেকে চেনায় মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সুযোগ হাত ছাড়া করতে পারলাম না। আনারুল যে বড্ড ভালো ছেলে—-।

সোনাটিকারী গ্রামের বাবর আলী বলেন, তার ছেলে আনারুল বিয়ে করছে শুনেছি। তবে তাকে জাননো হয়নি। বউমাকে বাড়িতে আনা হয়নি।
সোনাটিকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সদানন্দ মন্ডল জানান, ফারজানার বয়স জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ি ১২ বছরের নীচে। ঈদের পর স্কুল খুললে ফারজানা না আসায় খোঁজ নিয়ে জেনেছেন যে তার বিয়ে হয়েছে একই গ্রামে।

এব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মাদ বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি শোনার পর সংশি­ষ্ট ইউপি সদস্যকে মীমাংসা করে দিতে বলেছেন।

সদস্যা মনোয়ারা খাতুন বলেন, মেয়েকে নাংলা গ্রামের নুর ইসলামের কাছ থেকে নিয়ে তার চাচা শওকত আলীর বাড়িতে রাখা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহীন বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নেবেন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর