নুসরাত হত্যাঃ দুপুরে আদালতে তোলা হবে ওসি মোয়াজ্জেমকে

ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে আদালতে তোলার প্রস্তুতি চলছে।

আজ সোমবার (১৭ জুন) দুপুর ২টায় মোয়াজ্জেমকে আদালতে তোলা হবে। এর আগে সকাল ১১টায় তাকে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

রবিবার (১৬ জুন) দুপুরে তাকে শাহবাগ থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে খোদ রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকেই। গোয়েন্দা পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, জামিনের জন্য হাইকোর্টে এসে পুলিশের কাছে ধরা পড়েন মোয়াজ্জেম।

গ্রেফতার হওয়া এ আসামিকে নিজেদের হেফাজতে নিতে ও মামলার পরোয়ানা নিয়ে ফেনী সোনাগাজী থেকে চার সদস্যের পুলিশের একটি টিম ঢাকায় পৌঁছেছেন। ঢাকার আদালতে তাকে হাজির করার বিষয়টি নিশ্চিরত করেছেন ফেনীর সহকারী পুলিশ সুপার (সোনাগাজী সার্কেল) শফিকুল আহমেদ ভূঁইয়া।

এর আগে রবিবার (১৬ জুন) বিকেল ৩টার দিকে শাহবাগ থানার কদম ফোয়ারার সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গত ২৭ মে তার বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে তার রংপুরের কর্মস্থল, যশোরের গ্রামের বাড়ি, কুমিল্লার বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়েও তাকে পায়নি। ২৭ মে’র পর থেকে গত ১০ জুন পর্যন্ত রাজধানীর কল্যাণপুরে এক খালার বাসায় ছিলেন তিনি।

তবে, তাকে গ্রেফতারে গোয়েন্দারা সেখানেও যেতে পারেন, এমন আশঙ্কায় ওই বাসা থেকে তিনি কেটে পড়েন। রবিবার (১৬ জুন) গ্রেফতার হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদকালে ওসি মোয়াজ্জেম নিজেই শাহবাগ থানা পুলিশ এমন তথ্য জানিয়েছেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠলে দুজনকে থানায় নিয়ে যান ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। এ সময় আইনবহির্ভূতভাবে ওসি নুসরাতের জেরা করতে করতেই নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন।

ওই ভিডিওটি সোনাগাজীর আলো নামে একটি ফেসবুক পেজে শেয়ার করে। এরপর ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা ছিল- গত ২৭ মার্চ শ্লীলতাহানির চেষ্টার পর থানায় পুরো ঘটনা নিজ মুখে বর্ণনা করেছেন নুসরাত (ভিডিও)।

ভিডিওতে দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। ওই ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, যৌন নিপীড়নের ঘটনাকে নাটক ও পরবর্তীতে অগ্নিদগ্ধের ঘটনাকে আত্মহত্যার রূপ দিতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়েছিলেন।

এছাড়া দুটি ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজউদৌলাসহ তার সহযোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ধরনের আরও অসংখ্য অভিযোগে গত ১০ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানা থেকে তাকে প্রত্যাহার করা হয়।

নুসরাত মারা যাওয়ার পর গত ১৫ এপ্রিল ভিডিও করে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সুমন।

বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ ও মামলার নথি পর্যালোচনা করে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন ২৭ মে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। এরপরও তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তিনি আত্মসমর্পণও করেননি।

গত ৮ মে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে তিনি রংপুর রেঞ্জ অফিসে যোগ দেন। গত ক’দিন থেকে তার গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে ফেনী ও রংপুর পুলিশের ঠেলাঠেলি চলছিল। ঈদের আগে সেখান থেকে নিরুদ্দেশ হন ওসি মোয়াজ্জেম।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর