এক সপ্তাহেও খোঁজ মেলেনি সোহেল তাজের ভাগ্নের !

নিউজ ডেস্কঃ সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজের অপহৃত ভাগ্নে ইফতেখার আলম সৌরভের খোঁজ ৭ দিনেও মেলেনি। গত ৯ জুন সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার আফমি প্লাজার সামনে থেকে তাকে অপরহণ করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ বলছে, সৌরভকে উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট কাউন্টার টেররিজম থানা পুলিশকে সহযোগিতা করছে। অপহরণের পরদিন ১০ জুন পাঁচলাইশ থানায় জিডি করেন সৌরভের বাবা সৈয়দ মো. ইদ্রিস আলম। চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাকে ডেকে নিয়ে একটি কালো পাঁজেরো গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

সৌরভ সোহেল তাজের মামাতো বোনের ছেলে। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইইউবিতে মিডিয়া কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা করছেন। সৌরভের পরিবারের দাবি, আবু সালেহ চৌধুরী আজাদ নামে এক ব্যবসায়ীর মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পকের জেরে সৌরভকে অপরহণ করানো হয়েছে।

মো. ইদ্রিস আলম বলেন, ‘আবু সালেহ চৌধুরী আজাদের মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সৌরভের। এর জেরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন তাকে ডেকে নিয়ে সর্ম্পক না রাখার হুমকি দেন। তার কাছ থেকে মুচলেকাও নিয়েছেন। সর্বশেষ ১০ রমজানে ঢাকায় বনানীর বাসা থেকে সাদা পোশাকের ১০-১২ জন সৌরভকে তুলে নিয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণা, ওই মেয়ের সঙ্গে সর্ম্পকের কারণেই সৌরভকে অপহরণ করিয়েছে মেয়েটির পরিবার।’
তবে ব্যবসায়ী আবু সালেহ চৌধুরী আজাদ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে আমাদের পরিবারের কোনও সম্পৃক্ততা নেই।’ তিনি তার মেয়ের সঙ্গে সৌরভের সম্পর্ক থাকার বিষয়টিও অস্বীকার করেন। বলেন, ‘আমার মেয়ের সঙ্গে সৌরভের মোবাইল ফোনে চ্যাট হতো, হয়তো কথাও হয়েছে। তবে তারা কখনও সরাসরি দেখা করার সুযোগ পায়নি।’

অপহরণের দিন সৌরভ তার পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র ও আইইউবি’র পরিচয়পত্র নিয়ে বাসা থেকে বের হন।

ইদ্রিস আলম বলেন, ‘গত ১০ রমজানে সৌরভকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর অপহরণকারীরা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে ওই সংস্থায় চাকরির অফার দেয়। ঘটনার দিন চাকরি দেওয়ার কথা বলেই সৌরভকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। গফুর সাহেব নামে একজনের সঙ্গে কথা বলে তাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়।’
এর আগে দুই দফায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সৌরভকে ডেকে নিয়ে মেয়েটির সর্ম্পকে জানতে চায় বলে জানান ইদ্রিস আলম। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরায় র‌্যাব সদর দফতরে ডেকে নিয়ে যায়। পরে ১৭ ফেব্রুয়ারি সৌরভকে বনানী থানায় ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়।

ইদ্রিস আলম বলেন, ‘২০১৭ সালে ওই মেয়ের সঙ্গে ফোনে সৌরভের পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে প্রেমের বিষয়টি মেয়ের পরিবার মেনে না নেওয়ায় দুজনের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।’ পরে খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে ওই মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের পরও মেয়ের সঙ্গে সৌরভের যোগাযোগ রয়েছে অভিযোগ তুলে সালেহ আজাদ সৌরভকে হুমকি-ধমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ইদ্রিস আলম। তিনি দাবি করেন, ব্যবসায়ী সালেহ আজাদকে তার ব্যবসায়িক পার্টনার ওমর ফারুককে নিয়ে বনানী থানায় ঢুকতে দেখেন সৌরভ।

পাঁচলাইশ থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সৌরভকে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘সম্ভাব্য সব বিষয় মাথায় রেখেই আমরা তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তবে উল্লেখ করার মতো এখনও কোনও অগ্রগতি নেই।’ সৌরভকে যে গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, ওই গাড়ির কোনও সন্ধান পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। গাড়ির সর্ম্পকে খোঁজখবর শুরু করেছি।’

এদিকে এ ঘটনায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ ১৫ জুন তার নিজের ভেরিফ্যায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া স্টাটাসে লিখেছেন, ‘যারা এই ঘটনা (অপহরণ) ঘটিয়েছে তাদের অনুরোধ করছি সৌরভকে ফিরিয়ে দিতে। অন্যথায় আপনাদের পরিচয় জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। ঘটনার আড়ালে কারা আছেন তা আমরা জানি।’

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর