তারিকুল ইসলাম, শেরপুরে প্রতিনিধি: পঞ্চম ধাপে শেরপুরের নকলা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনন্দগন পরিবেশের মধ্যে দিয়ে চলছে প্রচার-প্রচারণা। দিনরাত ভোটারদের কাছে ছুটে ফিরছেন প্রার্থীরা। কর্মী সমর্থকদের নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তারা। ভোটারদের কাছে প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন নানা উন্নয়নের। বিএনপির কোন প্রার্থী না থাকায় এবং আওয়ামী লীগ মনোনিত ছাড়াও একজন চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। তাছাড়া ২জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ৩জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীর দাবিতেই নির্বাচনে লড়ে যাচ্ছেন। তবে চেয়ারম্যান পদের ২ জনই আওয়ামী লীগের সাহসী নেতা হওয়ায় ভোটের লড়াই হবে শেয়ানে শেয়ানে।
এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ পেয়েছেন নৌকা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ মো. বোরহান উদ্দিন লড়ছেন মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে। ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সারোয়ার আলম তালুকদার (চশমা) এবং অপর প্রার্থী উপজেলা যুবলীগে আহবায়ক মো. রফিকুল ইসলাম সোহেল লড়ছেন তালা প্রতীক নিয়ে মাঠে আছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দা উম্মে কুলসুম রেনু (প্রজাপতি), মোছা. ফরিদা ইয়াসমিন (কলসি) এবং লাকি আক্তার ফুটবল প্রতীক নিয়ে এই নির্বাচনে লড়ছেন।
সরজমিন ঘুরে ভোটারদের সাথে কথা বলে বুঝা গেছে, বিশাল ভোট ব্যাংক আছে বিদ্রোহী প্রার্থীর, অতএব লড়াই হবে শেয়ানে শেয়ানে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল, গনসংযোগ ও মাইকিংয়ে মুখর হয়ে উঠেছে নির্বাচনী এলাকা, অলি গলি ছেয়ে গেছে পোস্টারে। চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিভিন্ন হাটবাজারে গিয়ে চাইছেন ভোট, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। পিছিয়ে নেই ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরাও।
স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ মো. বোরহান উদ্দিন অভিযোগ করে জানান, নৌকা প্রতীকের কর্মী সমর্থকরা তার (মোটরসাইকেল) কর্মীদের বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। তবে সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হলে বিপুলভোটে বিজয়ী হবেন বলে মনে করছেন বোরহান উদ্দিন। অন্যদিকে অভিযোগ মিথ্যা দাবী করে উল্টো স্বাধীনতা বিরোধী কার্যকলাপে বোরহান অন্যদেরকে উৎসাহিত করেন বলে জানান নৌকা প্রতিকের প্রার্থী জিন্নাহ। তিনি বলেন, যে নাকি দলীয় সিদ্ধান্ত মানেন না, সে আওয়ামী লীগের কেউ হতে পারেন না। আর তাইতো তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
অন্যদিকে নির্বাচনে জয়ী হতে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মত মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরাও। ভোটরদের কাছে নিজের অবস্থান তুলে ধরে জয়ি হতে চালাচ্ছেন নানা প্রচেষ্টা। তবে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সারোয়ার আলম তালুকদার তার জন সম্পৃক্ততার জন্য জনমনে স্থান করে নিয়েছেন। ফলে তিনি পুনরায় বিপুল ভোটে জয়ী হবেন বলে জানান অনেক ভোটার।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এলাকার উন্নয়নকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন ভোটাররা, তারা চান সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত উপজেলা। নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ হলে, ভোটকেন্দ্রে যেতে পারলে বেছে নিবেন তাদের পছন্দের প্রার্থীদের, এমনটাই বলছেন সাধারণ ভোটাররা।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, উপজেলায় ৬৭ টি কেন্দ্রের ৩৭৫ টি বুথে ভোট গ্রহন করা হবে। এর জন্য ইতোমধ্যে ৬৭ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৩৭৫ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ৭৫০ জন পোলিং অফিসারসহ নির্বাচনের দিন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সমস্যা মোকাবেলায় অতিরিক্ত শতকরা ৫ ভাগ অফিসারকে প্রশিক্ষন করানো হয়েছে। নির্বাহী বিচারক সহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করা শেষ হয়েছে। জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ শুকুর মাহমুদ মিঞা জানান, সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করতে সব ধরণের প্রস্তুতি প্রায় শেষ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, নকলা উপজেলাটি একটি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ নির্বাচনে উপজেলায় ৬৭টি কেন্দ্রের ৩৭৫টি ভোটকক্ষের মাধ্যমে এক লাখ ৫১ হাজার ৫৩৫ জন ভোটার তাদের ভোটধিকার প্রয়োগ করবেন। ১৮ জুন মঙ্গলবার সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহন করা হবে।