পুরুষ নির্যাতন

নির্যাতন শব্দটা শুনলেই গায়ের লোম খানা শিউড়ে উঠে। আর এই শব্দটা যদি আশেপাশের কোন প্রতিবেশী কিংবা আত্মীয় স্বজনের সাথে ঘটে থাকে তাহলে তো আর কথাই নেই। আমাদের সমাজে নির্যাতন খুবই প্রচলিত। এ ঘটনা অহরহ ঘটছে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে আমরা যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অথবা টিভি চালু করি তাহলে অন্তত একটি হলে ও নির্যাতনের ঘটনা পাবোই তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় নারী নির্যাতনের খবরই বেশি শুনে আসছি কিন্তু তার মানে এই নয় এ সমাজে পুরুষেরা নির্যাতিত হচ্ছে না, তা বললে একেবারেই ভুল হবে।

বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী যদি জরিপ করা হয় তাহলে বেশিরভাগ পুরুষেরা প্রতিনিয়ত ঘরে এবং বাহিরে নানা কারণে নির্যাতিত হচ্ছে। আমরা কেউই এই বিষয়ে অবগত নই কিন্তু এটাই সত্য। বর্তমানে দেশে ব্যাপক হারে পুরুষ নির্যাতন বেড়ে গেছে। অনেক পুরুষেরা মনে করে হয়ত এই নির্যাতন আর বন্ধ হবে না, হয়ত এর কোন আইন চালু হবে না। আজ আমি কাল হয়ত অন্য কোন পুরুষ এই নির্যাতনের শিকার হবে।

বিবিসি বাংলার সূত্র অনুযায়ী আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস উপলক্ষে ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর ঢাকায় ‘বাংলাদেশ মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সংগঠন মানববন্ধন করেন। সেখানে তারা দাবি করে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পুরুষরাই নির্যাতিত হচ্ছে। তাই তারা মনে করেন বাংলাদেশে পুরুষ নির্যাতন বন্ধের জন্য সুরক্ষা আইন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি তাদের হাতে থাকা ব্যানারের দিকে একটু লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাবো তারা কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্লোগান লিখেছে যেমন- পুরুষ বিষয়ক মন্ত্রণালয় চাই, সাধ্যের অতিরিক্ত দেনমোহর পুরুষ নির্যাতনের ফাঁদ, পুরুষের নিরব কান্না কেউ শুনে না ইত্যাদি।

এ থেকে আমরা কিছুটা না অনেকটাই বুঝতে পেরেছি বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত নানা ভাবে নানা অযুহাতে, বিনা অপরাধে, মামলা বা প্রতারণার শিকার হয়ে নির্যাতিত হচ্ছেন যাদের মধ্যে অধিকাংশই বিবাহিত পুরুষ। সামাজিকভাবে লজ্জিত হবার ভয়ে কারো কাছে নির্যাতনের কথা বলতে পারছে না।

মনের ভিতরে কথা লুকিয়ে রাখছে কাউকে কিছু জানতে দিচ্ছে না, নিরবে চোখের অশ্রু ঝরাচ্ছে। একজন নারী যখন পুরুষের দ্বারা নির্যাতিত হয় তখন সেই নারী খুব সহজেই আইনের বা কোন মানবাধিকার সংগঠনের দ্বারা বিচার চাইতে পারেন কিন্তু যখন একজন পুরুষ একজন নারীর দ্বারা নির্যাতিত হয় তখন তার পাশে কেউ দাড়ায় না বরং বিষয়টি জানা জানি হলে এলাকাবাসী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ তার সাথে ঠাট্টা, মশকরা, মজা করা ইত্যাদি করতে থাকে। একজন নারী পুরুষের নামে থানায় বা এলাকার মুরুব্বীদের কাছে অভিযোগ করলে বা মিডিয়ার প্রকাশ করলে তখন বিষয়টি অনেক বড় আকার ধারণ করে। ভালো করে বিবেচনা বা যাচাই ও করছে না।

সে কি আসলেই নারীকে কোনভাবে হেনস্তা করেছে কিনা। কঠিন থেকে কঠিন শাস্তি দেয়া হচ্ছে তাদের। আবার অনেক জায়গায় তারা নির্দোষ প্রমানিত হচ্ছে। তাতে কি লাভ সমাজে তার যে সম্মানটুকু ছিল তা এক নিমিষেই মাটিতে মিশে গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে একসময় আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে তারা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে কিন্তু সব কিছুর সাথে এই বিষয়েও গুররুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে আমি করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি জনাব আব্দুল হামিদ বলেছিলেন, বাংলাদেশে কোন পুরুষ নির্যাতন আইন নেই।

আমি যখন ৬/৭ বছর আগে স্পিকার ছিলাম তখন নারী নির্যাতন বিল পাশ করি। আমি তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই বিষয়ে কথা বলেছিলাম যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি নারী নির্যাতন বিল পাশ করেছেন তাহলে পুরুষ নির্যাতন বিলও তো পাশ করার প্রয়োজন আছে কারণ বাংলাদেশে কিন্তু পুরুষ নির্যাতন যে কিছু হচ্ছে না একথাটা ঠিক না এটা কিন্তু মারাত্মকভাবে হচ্ছে, ভুক্তভোগীরাই এটা টের পাচ্ছেন। এ কথা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় বাংলাদেশে পুরুষ নির্যাতন মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বিষয়ে জরিপ করতে একদিন বিকেলে লেকের পাশে কয়েকজন বয়স্ক চাচাদের হাটতে দেখি।

তখন তাদের সাথে পরিচয় হয় কথা হয় এক পর্যায়ে করিম নামের এক চাচাকে প্রশ্ন করি বর্তমানে দেশে প্রধান কি কি ঘটনা ঘটছে বলেন তো তখন তিনি বললেন, নারী নির্যাতন। আমি বললাম এর পাশাপাশি আরেকটা ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে আপনারা কেউ কি জানেন এই বিষয়টা? একেকজন একেক উত্তর দিল। আমি বললাম সেটা হল পুরুষ নির্যাতন। চাচাদের চেহারার দিকে তাকালাম এই কথা শুনার পর তাদের মুখখানা শুকিয়ে গেছে। চাচারা বলল তোমার কেন মনে হইল পুরুষ নির্যাতন হইতাছে। বললাম কারণ বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী অনেক পুরুষই প্রতিনিয়ত মানসিক, শারীরিক, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। লজ্জায় কারো কাছে কিছু বলতে পারে না।

বিশেষ করে নির্যাতিত হচ্ছে স্ত্রীর দ্বারা। স্ত্রীর অমানবিক অত্যাচারে মানসিক দিক দিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ছে। একা একা কাঁদছে। দেখার এবং সহযোগিতা করার কেউ থাকে না। ‘তখন বরকত উল্লাহ’ নামের এক চাচাকে বললাম আপনার কি অবস্থা বলেন, চাচা বলেন দেশের অবস্থা ভালা না আমরা বাজান এই বুড়া বয়সেও অনেক কষ্টে আছি। ঘরে বউয়ের অশান্তি আর ভালা লাগে না। কাউরে কিছু কইতে পারি না লজ্জায়। ঘর থেইকা বাইর হলে আর বাড়ি যাইতে মনে চায় না। ‘শফিক চাচা বলেন’, আমার ছেলের বউ খালি ঝগড়া করে আমার পোলাডারে কোন শান্তি দেয় না।

বাজান আমরা তো কষ্ট কইরা আমাগো জীবন চালাই দিসি আমাগোর দিন তো শেষ বাজান তোমাগোর ভবিষ্যৎ কি হইব জানো কিছু। বললাম চাচা আসলে পুরুষ নির্যাতন বলেন আর নারী নির্যাতন বলেন পুরোটাই নির্ভর করে আমাদেরে মানসিকতার উপর। আমাদের মন মানসিকতা এতই নিকৃষ্ট প্রকৃতির হয়ে গেছে যার কারণে আমরা কখন কি করে বসছি তার কোন খেয়ালই আমাদের হচ্ছে না। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে আমাদের দেশে পুরুষ নির্যাতন বন্ধে আইন চালু করতে হবে তাহলে হয়ত কিছুটা হলেও এই নির্যাতন কমবে বলে আমি মনে করি। তাদের দেয়া তথ্যানুযায়ী বর্তমানে দেশে অস্বাভাবিকভাবে পুরুষ নির্যাতন হচ্ছে।

এর প্রতিকার হিসেবে বর্তমানে একটাই গুরুত্বপূর্ণ কাজ সেটি হচ্ছে অতি ধ্রুত সংসদে পুরুষ নির্যাতন দমন আইন চালু করতে হবে। একজন পুরুষ হিসেবে আমার ব্যক্তিগত মতামত থেকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি আমার লেখা যদি কোনভাবে আপনাদের কাছে পৌছায় তাহলে বিষয়টি বিবেচনা করে খুব ধ্রুত পুরুষ নির্যাতন দমন আইন চালু করুন। তাহলে একদিন হয়ত জাতির পিতার সোনার বাংলা থেকে পুরুষ নির্যাতন নামটি চিরতরে মুছে যাবে।

লেখক,
নাসিফ জাবেদ নীলয়।
শিক্ষার্থী, জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

বার্তা বাজার/এস.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর