সাংগঠনিক শক্তির প্রমাণ দিতে চায় বিএনপি

দীর্ঘ বিরতির পর আবারও বড় কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। চলতি মাসেই ঢাকা মহানগরে তিনটি সমাবেশ করবে। এজন্য ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে সাংগঠনিক শক্তি দেখাতে চায় দলটি। থানা-ওয়ার্ডে দফায় দফায় বৈঠক করছেন নেতারা। একটি সমাবেশ হবে কেন্দ্রীয় বিএনপির উদ্যোগে।

বাকি দুটির আয়োজন করবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর বিএনপি। এ দুই সমাবেশে ঢাকা বিভাগের সব জেলা থেকে নেতাকর্মীদের উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমাবেশগুলোর জন্য তিন আলাদা স্থান চেয়ে সোমবার ডিএমপির কাছে আবেদন করা হয়েছে।

নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন, সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিতে হবে এসব সমাবেশ। ঢাকা মহানগর উত্তরের আয়োজনে আগামীকাল ১০ মার্চ হবে সমাবেশ। এজন্য কাওরানবাজার প্রগতি টাওয়ারের সামনে, মোহাম্মদপুর শহিদ পার্ক মাঠ ও খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে-এই তিনটি স্থানের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। আর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আয়োজনে সমাবেশ হবে ১৬ মার্চ।

এজন্য নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব মাঠ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান-এই তিনটি স্থানের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এ দুটি সমাবেশে বিএনপির সিনিয়র নেতারা ছাড়াও ছয় সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলীয় মেয়র প্রার্থীরা অংশ নেবেন। সমাবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সোমবার ডিএমপি কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে বিএনপি।

দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, তাবিথ আউয়াল ও প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বিকালে ডিএমপি কার্যালয়ে গিয়ে চিঠি পৌঁছে দেন। এ্যানী গণমাধ্যমকে জানান, ‘আমরা ডিএমপি কার্যালয়ে গিয়ে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনির হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেছি। শান্তিপূর্ণ সমাবেশের জন্য পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। আশা করছি তারা সহযোগিতা করবেন।’ এ ছাড়া কেন্দ্রীয় বিএনপির উদ্যোগে আগামী ৩০ মার্চ সমাবেশের জন্য স্থান হিসাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কথা ভাবছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে হবে এ সমাবেশ।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গণমাধ্যমকে বলেন, জনগণের অধিকার আদায়ে আমরা তৎপর। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সমাবেশে অংশ নিতে জনগণ উন্মুখ হয়ে আছে। আশা করছি শান্তিপূর্ণ সমাবেশে কেউ বাধা দেবে না।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে রাজধানীতে তেমন বড় কোনো কর্মসূচি ছিল না দলটির। এ ছাড়া করোনাকালে তারা বিক্ষোভ সমাবেশসহ শুধু সাংগঠনিক তৎপরতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। গত ৫ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বিভাগীয় শহরে ছয়টি সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এরই মধ্যে তিন বিভাগে সমাবেশ হয়েছে। আগামী ২০ মার্চ চট্টগ্রামে সমাবেশ হবে। এর আগে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে দুটি সমাবেশ হবে। এই কর্মসূচি সফল করতে মহানগর বিএনপি নেতাদের পাশাপাশি বিশেষভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাবিথ আউয়ালকে ও প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে।

তারা থানা-ওয়ার্ড নেতাকর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারাও কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। এতে সমাবেশ ঘিরে নানা ধরনের ছক তৈরি করা হয়েছে। ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্যান্য অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশে অগ্রভাগে থাকবেন-সেভাবেই শীর্ষ নেতারা নির্দেশ দিয়েছেন।

বিএনপির মহানগর নেতারা জানান, উন্মুক্ত স্থানেই তারা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে চান। এজন্য পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন। খুলনা, রাজশাহী ও বরিশালের সমাবেশে দলীয় নেতাকর্মীরা যেন যোগ দিতে না পারেন সেজন্য নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল। তারা আশা করছেন ঢাকার সমাবেশের ক্ষেত্রে তা করা হবে না।

জানতে চাইলে তাবিথ আউয়াল গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের নামে ভোটারদের সঙ্গে তামাশা করছে। জনগণ ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চায়। আমরা ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়াই করছি। আশা করি সরকার আমাদের শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে দেবে। সরকারের প্রতি জনগণের যে অনাস্থা তা তাদের উপস্থিতির মাধ্যমে প্রমাণ করে দেবে।

প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, গত ১৩ বছর ধরে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেননি। দেশে অপকর্ম, গুম-খুন-দুর্নীতি হচ্ছে। দেশে একটি নির্বাচিত সরকার নেই। সমাবেশের মাধ্যমে মানুষকে এই সচেতনতায় নিয়ে আশা যে, ভোটের জন্য এখন তাদের সোচ্চার হতে হবে। সমাবেশে সর্বোচ্চ লোকসমাগম হবে বলে আশা করছি। সূত্র: যুগান্তর।

বার্তাবাজার/ই.এইচ.এম

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর