কোভিড-১৯: কালো অধ্যায়ের এক বছর

করোনা ভাইরাস যেন এক আতঙ্কের নাম। এই একটি অদৃশ্য শত্রুর কাছে পরাজিত হয়েছে সারা বিশ্ব। অর্থ, সম্পদ, ক্ষমতা কোনো কিছুই দাঁড়াতে পারেনি এই অদৃশ্য শত্রুর সামনে। এমনকি হারাতে হয়েছে শত শত প্রিয়জনদের, হয়নি তাদের শেষ দেখাও।

গত বছরের এই দিনে ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় করোনা রোগী। সেই হিসাব মতে আজ একবছর পূর্ণ হলো। এই শত্রুটির প্রাদুর্ভাব ও দ্রুত বিস্তারের ফলে অস্বাভাবিক ভাবে হারিয়ে গেছে অসংখ্য রাজনীতিবিদ, ডাক্তার, পুলিশ, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ অসংখ্য গুনীজন। সারা বিশ্বে এই বৈশ্বিক মহামারীর কারণে আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ড হয়েছে ব্যাহত। আবার অনেকেই কর্মস্থল হারিয়ে হয়েছে বেকার।

বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ রাজধানীতে প্রথম তিন জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছিলো। তাদের শরীরে করোনা ভাইরাসের নমুনা পাওয়া গেছে এটা নিশ্চিত করেছিলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এরপর থেকেই সংক্রমণের সংখ্যা দিন দিন বাড়তেই থাকে। তবে বাংলাদেশে এটির প্রাদুর্ভাব দ্রুত বিস্তার শুরু করে। এদিকে রাজধানীকেই চিহ্নিত করা হয়েছিলো রেড জোন হিসাবে। তার কারণ ছিলো বাংলাদেশের সব থেকে ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানীর শহর ঢাকা। ধীরে ধীরে এই অদৃশ্য শত্রুটি ছড়িয়ে পড়লো জেলা শহরে। শুরু হলো দেশের মানুষের ঘর বন্ধী হওয়া। ঘর থেকেই অফিস, আদালত এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম করতে হয়েছে।

খুব বেগে এই শত্রু সংক্রমিত হলেও দেশে মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে এই মহামারী পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছিল। কিন্তু পুনরায় সংক্রমণটি তীব্র আকার ধারণ করে জুন মাসে। তবে নতুন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত কমেছিলো আগস্ট মাস থেকে। এরপর থেকেই মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়েও শিথিলতা অবলম্বন করেছিলো। সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্ক সচেতন করতে পারেনি।

বাংলাদেশের ‘কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি’ গত ২৮ সেপ্টেম্বর জানিয়েছিলো, তারা এই রোগের সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করেছিলেন।

এদিকে, গত ৮ মার্চ থেকে এই পর্যন্ত একবছরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে হিসাব মতে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাজার ৩৩০ জন এবং আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৮ হাজার ৪৬২ জন। তবে সরকারের হিসাবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আরো বেশি বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকার করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করে গত ২৭ জানুয়ারি। এদিন প্রথম ভ্যাকসিন দেয় ২৬ জনকে। এরপর ২য় দিনের মতো রাজধানীর ৫টি হাসপাতালে ২৮ জানুয়ারি ভ্যাকসিন দেয় ৫৪১ ব্যক্তিকে। এরপর সারাদেশে ফ্রন্ট লাইনের যোদ্ধাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৭ ফেব্রুয়ারি ভ্যাকসিন প্রদান শুরু হয়।

দেশে এই পর্যন্ত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিয়েছে ৩৬ লাখ ৮২ হাজার ১৫২ জন। এদিকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছে মোট ৪৯ লাখ দুই হাজার ৯৪৮ জন। তবে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেওয়া পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ৮২৫ জনের।

যেকোনো কিছুর বছর ঘুরলেই উদযাপন করতে মেতে উঠে দেশসহ সারা বিশ্ব। তবে এই কোভিড-১৯ এর ব্যাপারে সকলের মতামতই ভিন্ন। সকলেরই একটাই চাওয়া যেন এবছরই মুক্তি পায় বাংলাদেশ তথা বিশ্বের প্রতিটি মানুষ এই মহামারি থেকে। আগের ন্যায় ফিরে আসুক সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধ এবং সেই সঙ্গে সকলে যেন আবার মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারে। এটাই সকলের কামনা।

বার্তাবাজার/ই.এইচ.এম

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর