টাঙ্গাইলে ১০ হাজার টাকা অনুদানের গুজব, অনলাইনের দোকানে শিক্ষার্থীদের ভিড়

শিক্ষার্থীদের ১০ হাজার টাকা অনুদান দেবে সরকার। এমন গুজবে কান দিয়ে নিবন্ধন করার জন্য টাঙ্গাইল শহরের বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানে কাগজ ভর্তি ফাইল নিয়ে উপচে পড়া ভিড় করছেন শিক্ষার্থীরা। এর ফলে বিভিন্ন দোকানে জটলা তৈরি হয়েছে।

রোববার ( ৭ মার্চ) সকাল থেকেই জেলা শহরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এই অনুদানের টাকা পাওয়ার জন্য করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ থাকায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজগুলোতে প্রত্যয়নপত্র নেওয়ার জন্য ভিড় করে শিক্ষার্থী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা অনুদানের ফরম পূরণে মহাব্যস্ত। আবার কেউ সিরিয়ালের অপেক্ষায়। একই চিত্র শহরের প্রায় সবগুলো কম্পিউটারের দোকানে। আবেদনকারী অধিকাংশই নারী।

শিক্ষার্থীরা জানায়, সরকার ১০ হাজার টাকা অনুদান দেবে। সেই অনুদানের জন্য সবাই নিবন্ধন করছে এমন খবর শুনে আমরা এসেছি। কারা কোথায় থেকে, কবে, কিসের অনুদান দেবে বা এর প্রক্রিয়া কী কিছুই জানা নেই.

বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফাহিম মাহাতাব বার্তা বাজারকে বলেন, বন্ধুদের কাছ থেকে জানতে পেয়ে আমি ফরম পূরণ করার জন্য এসেছি। ফরম নিতে আমার ২০ টাকা লেগেছে। জমা দিতে আরও ২শ’ টাকা লাগবে। আমার মতো অনেকেই এখানে এসেছে।

কম্পিউটার অপারেটররা বার্তা বাজারকে বলেন, সকাল থেকেই নিবন্ধন করে দিচ্ছি। এর আগে এত ছাত্রছাত্রী নিবন্ধনের জন্য আসেনি। আজ হঠাৎ করেই এত ভিড় হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা মহামারিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর-মাউশি’র আওতায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের অনুদান প্রদানের বিজ্ঞপ্তিতে টাকার পরিমাণ উল্লেখ নেই। কিন্তু বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয় সবাইকে ১০ হাজার টাকা করে
অনুদান দেয়া হবে। সেই গুজবের রেশ ধরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় দিনভর নিবন্ধনের জন্য কম্পিউটারের দোকান গুলোতে ভিড় করে হাজার হাজার ছেলে মেয়ে।

১৮ জানুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তিতে অনুদানের জন্য তাদের ওয়েবসাইটে আবেদন ফরমে আবেদন করতে বলা হয়েছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে সবার জন্য সরকারি অনুদান দেওয়ার কথা বলা নেই। বলা আছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেরামত ও সংস্কার, আসবাবপত্র ক্রয়সহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজের জন্য, শিক্ষক- কর্মচারীরা তাদের দুরারোগ্য ব্যাধি ও দৈব দুর্ঘটনার সহায়তার জন্য এবং শিক্ষার্থী যারা দুরারোগ্য ব্যাধি, দৈব দুর্ঘটনা এবং শিক্ষাগ্রহণ কাজে ব্যয়ের জন্য আবেদন করতে পারবে। তবে শিক্ষার্থীদের এ বিশেষ অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে দুঃস্থ, প্রতিবন্ধী, অসহায়, রোগাক্রান্ত গরিব,
মেধাবী, অনগ্রসর সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।

এই অনুদানের আবেদনের সময়সীমা ছিল ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কিন্তু সেই আবেদনের সময়সীমা বাড়িয়েছে ৭ মার্চ পর্যন্ত।

এ দিকে মাউশির বিজ্ঞপ্তিতে অনুদানের টাকার পরিমাণ উল্লেখ না থাকলেও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাউশি থেকে ১০ হাজার টাকা করে

অনুদান দেওয়ার কথা ছড়িয়ে পড়েছে। এই অনুদানের টাকা পাওয়ার জন্য করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ থাকায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজগুলোতে প্রত্যয়নপত্র নেওয়ার জন্য ভিড় করে শিক্ষার্থী।

এ ব্যাপারে পুলিশ লাইন্স আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের বার্তা বাজারকে জানান, বিগত দুই দিনে অনেক শিক্ষার্থী আমাদের কাছ থেকে প্রত্যায়ন নিয়েছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। আমাদের কেউ চিঠি দেয়নি। এমনকি জেলা
শিক্ষার্থী অফিস থেকেও আমাদের কোন কিছু বলেনি। তাই আমাদের কাছে সঠিক তথ্য নেই। ছাত্ররা নিজেরাই তাদের মতো আবেদন করছেন।

তিনি বার্তা বাজারকে আরও জানান, শিক্ষার্থীদের না করার পরেও তারা আমাদের কাছ থেকে প্রত্যায়ন নিয়ে অনলাইনে আবেদন করছেন। এমন পরিস্থতে অনেক শিক্ষার্থী দোকানে গিয়ে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারছে না।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের জেলা শিক্ষা অফিসার লায়লা খানম বার্তা বাজারকে জানান, বিষয়টি আমরা শুনেছি। তবে এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। মন্ত্রণালয় থেকে এমন কোন চিঠি আমারা পায়নি। তাই শিক্ষার্থীদের বুজে শুনে আবেদন করার জন্য অনুরোধ করছি।

হাসান সিকদার/বার্তাবাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর