নির্বাচনে বিএনপি না এলে উন্মুক্ত প্রার্থিতার চিন্তা আ.লীগের

আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। পৌরসভার মতো ইউপি নির্বাচনেও অংশ নেবে না বাম গণতান্ত্রিক জোট। এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। এ কারণে নির্বাচনী মাঠে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকছে আওয়ামী লীগই। পরিস্থিতি এ রকমই থাকলে ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী নির্দিষ্ট না করে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দিতে পারে বলে জানা গেছে।

বিগত স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে অন্য দলের প্রার্থী থাকার পরও আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের জের ধরে দেশের বেশকিছু জায়গায় সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ৫ ধাপে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে এবং জেলা-উপজেলা কমিটির জের ধরে নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, নোয়াখালী, ফেনী, মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, ময়মনমসিংহ, গৌরীপুর, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কুমিল্লাসহ বেশ কয়েকটি এলাকা হতাহতের ঘটনা

ঘটেছে। চাপা ক্ষোভ রয়েছে প্রায় সব সাংগঠনিক জেলায়। এ কারণে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবি এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল বৃদ্ধিসহ নানা শঙ্কায় আছেন ক্ষমতাসীন দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের রূপরেখা কেমন হবে এ নিয়ে তাদের ভাবনা আছে। অন্যান্য দল নির্বাচনে অংশ নিলে এক রকম কৌশল থাকবে আর অংশ না নিলে আরেক রকম কৌশল হবে। সর্বোপরি একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে- এটিই তাদের প্রত্যাশা।

আওয়ামী লীগের দুজন সভাপতিম-লীর সদস্য জানান, কোন্দল নিরসনে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা এবং হুশিয়ারি রয়েছে। এজন্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে প্রতিটি বিভাগের ক্ষেত্রে আলাদা করে সাংগঠনিক দায়িত্ব দিয়েছেন। এরপরও দলটিতে শৃঙ্খলা না ফেরায় সাংগঠনিক দায়িত্বে নিয়োজিতদের সদিচ্ছা ও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলেও মন্তব্য তাদের। এই দুই নেতার ভাষ্য, কোন্দল জিইয়ে রাখলে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি হবে। একইসঙ্গে বেশিরভাগ সাংগঠনিক ইউনিটে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে।

নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে, ১১ এপ্রিল প্রথম ধাপে ২০ জেলার ৬৩টি উপজেলার ৩২৩টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে একটি চিঠিও দিয়েছে আওয়ামী লীগ। চিঠিতে বলা হয়- আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ২৮(৩)(ঙ) অনুযায়ী আগ্রহী প্রার্থীদের প্যানেল তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ বর্ধিতসভার আয়োজন করবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থীদের একটি প্যানেল সুপারিশের জন্য কেন্দ্রে প্রেরণ করবে। প্যানেলটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরে নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

গণভবন ও আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ৫০টিরও বেশি জেলা থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে অভিযোগ এসেছে। এগুলোর ধরন প্রায় একই রকম। ওই এলাকাগুলোতে এমপি বনাম স্থানীয় নেতৃবৃন্দের দ্বন্দ্বের চিত্র ফুটে উঠেছে। দলীয় স্বার্থ দূরে ঠেলে ব্যক্তি স্বার্থের জের ধরে জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দুভাগে বিভক্ত হয়ে আছে। এ কারণে তৃণমূল থেকে ইউনিয়ন পরিষদের প্রার্থীদের নাম পাঠানোর ক্ষেত্রেও সংকট হতে পারে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপি বা অন্য দল নির্বাচনে আসা না আসার ওপর আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত নির্ভর করে না। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী সব সময় স্বকীয় চিন্তায় চলে। অর্থাৎ পরিবেশ ও পরিস্থিতি বিবেচনায় আওয়ামী লীগ নির্বাচনী কৌশলের কথা ভাববে। সুতরাং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন উন্মুক্ত থাকবে কিনা সময় হলে এ নিয়ে ভাবা হবে।

দলীয় কোন্দলের বিষয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটা বৃহৎ দল। ঐতিহ্যবাহী এই দলটি অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। এখানে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আছে। এটা থাকা স্বাভাবিক। কোন্দল যে নেই তা ঠিক নয়। তবে সেটি বেশি নয়। কেউ দলের শৃৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্র: আমোদেরসময়।

বার্তাবাজার/ই.এইচ.এম

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর