কবরস্থানের রাস্তাকে বাঁধের কাজ দেখিয়ে বরাদ্দ হজমের পায়তারা!

সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নে রণসী গ্রামে পঞ্চায়েতের টাকায় নির্মিত গ্রামের রাস্তাকে বেঁড়িবাঁধের কাজ দেখিয়ে বরাদ্দ টাকা হজম করার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। পানি উন্নয়নে বোর্ডের অক্ষত বেড়িবাঁধে অতিরিক্ত বরাদ্দ বাগিয়ে এনে নামমাত্র কাজ করে সরকারের টাকা লোপাট করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার ৪৮ নং পিআইসির সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য রোপন মিয়ার বিরুদ্ধে।

ইউনিয়নের দেখার হাওর সংলগ্ন পুটিয়া নদীর পারে ৪৮ নং প্রকল্পে নির্মানাধীন বেড়িবাঁধের কাজে শুরুর থেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অভিযোগ ৪৮ নং পিআইসির স্থলে গত দুই বছর কোনো প্রকল্প গ্রহণ হয়নি। ২০১৮ সালে বাঁধ নির্মাণ করা হলে জলাবদ্ধতার কারনে নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে স্থানীয়দের।

চলতি বছরে পুটিয়া নদীর পাড়ের কিছু স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হলেও যা স্বল্প পরিমাণ বরাদ্দ দিয়ে সংস্কার করা যেতো। কিন্তু স্বল্প পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত স্থানকে বেশি দেখিয়ে অতিরিক্ত বরাদ্দ বাগিয়ে এনে বাঁধে নামমাত্র মাটি ফেলে বরাদ্দের টাকা হজম করা হয়েছে। গ্রামের পঞ্চায়েতের তহবিল থেকে নির্মিত কবরস্থানের রাস্তাকে বাঁধের কাজ বলে চালিয়ে দিয়ে অভিনব পন্থায় সরকারের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ স্থানীয়দের।

বাঁধ নির্মাণ কাজে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে গত ২২ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেন স্থানীয় কয়েকজন কৃষক। এলাকাবাসীর পক্ষে অভিযোগ করেন মাওলানা আমিনুল ইসলাম, আবুল খয়ের ও আব্দুল আলীম প্রমুখ।

রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখায় যায় বাঁধের কাজের হাল চিত্র। বাঁধের উপরে কতখানি মাটি পড়েছে তা বাঁধের গোড়ার মাটির স্তর দেখলেই অনুমেয়। নামমাত্র মাটি ফেলে পুরো বাঁধ ঢেকে দেয়া হয়েছে। বাঁধের দৈর্ঘ্য প্রস্থের ঠিক নেই। বাঁধের স্লুভ সঠিক পরিমাণে দেয়া হয়নি। বাঁধের গোড়ায় ঘাস লাগানোর বরাদ্দ রাখা হলো এখনও ঘাস লাগানো হয়নি বাঁধে।

বাঁধের পরিমাণ ৬৫৪ মিটার হলেও নতুব মাটি ফেলা হয়েছে স্বল্প পরিমাণ স্থানে। বাঁধের সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে কবরস্থানের রাস্তায় । যাতে কবরস্থানের রাস্তাকেও বেঁড়িবাঁধের রাস্তা হিসেবে গণনা করা যায়। নির্মিত বাঁধ ও কাজের ব্যপারে জানতে চাইলে নানা অভিযোগ করেন স্থানীয়রা স্থানীয়রা।

আব্দুল বারী বলেন, সরকার কৃষকের ফসল রক্ষায় বাঁধ নিমার্ণের জন্য টাকা দেয়। কিন্তু যে বাঁধে জনগণের উপকারে আসবে না তা দিয়ে লাভ কি। অপ্রয়োজনীয় বাঁধে জলাবদ্ধতা তৈরী হয়। গোচারণভূমি ডুবে গো খাদ্যের সংকট দেখা দেয়। যেই বাঁধে দুইতিন লাখ টাকা বরাদ্দ দিলেও হতো সেই বাঁধে কার স্বার্থে এতো টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কাকে খুশি করতে এমন আয়োজন।

কৃষক হিরণ খা নামে আরেক কৃষক বলেন, দুই আনাও কাজ হয়নি বাঁধে। নামমাত্র কাজ করে এতো টাকার বরাদ্দ হজম করা হয়েছে। এই বাঁধে এতো টাকা বরাদ্দ দেয়ার কোনো প্রয়োজনই ছিলনা। গ্রামবাসী করস্থান থেকে বাঁধের গোড়া পর্যন্ত মাটি ফেলেছেন কিন্তু এই কাজকে পিআইসির কাজ বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। কাজ না করে সরকারের লাখ লাখ টাকা হাকাজ অনুপাতে বিল ছাড় দিতে দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি রাখেন তিনি।

স্থানীয়দের এমন অভিযোগ অস্বীকার করে ৪৮ নং পিআইসির সভাপতি রোপন মিয়ার বলেন, আমি সঠিক কাজ করেছি। সাইনবোর্ড আমার কাজ করা জায়গার উপর টানানো। আমি কোনো অনিয়ম করিনি। আপনি আমার কাজ দেখে যান।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারি প্রকৌশলী মাহবুবুল আলমের ফোনে একাধিকবার কল দিলেও ফোন রিসভি করেননি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেবুন্নাহার শাম্মী বলেন, এই ধরনের কোনো অভিযোগ আমি পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নোহান আরেফিন নেওয়াজ/বার্তাবাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর