দেশের পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট

সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে বাংলাদেশে কতজন কত টাকা রাখছে, এর একটা তালিকা চেয়েছে হাইকোর্ট। এছাড়া দেশ হতে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটাও জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।

রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক হাইকোর্টকে জানান, দেশের প্রায় ১৪ হাজার ব্যক্তি ‘দ্বৈত নাগরিকত্ব’ গ্রহণ করেছেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দ্বৈত নাগরিকের তালিকা দেওয়ার বিষয়ে আমরা আদালতে সময় চেয়েছি। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি প্রায় ১৪ হাজারের মত দ্বৈত নাগরিক আছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাসপোর্ট জমা দিয়ে তারা ঘোষণা দিয়েছেন। তার একটি তালিকা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সেই তালিকা আমরা এখনও হাতে পাইনি। আবার ৩০ মার্চ এর শুনানি হবে।’

বিদেশি ব্যাংক বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে পাচার করা ‘বিপুল পরিমাণ’ অর্থ উদ্ধারের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস। রোববার ওই রিটের শুনানি নিয়ে পৃথক রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

রুলে বিদেশি ব্যাংক বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নাগরিক অথবা কোম্পানি এবং অন্য কোনো সংস্থার গোপনে গচ্ছিত টাকা উদ্ধারে বিবাদিদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি পানামা পেপার ও প্যারাডাইস পেপারে বাংলাদেশি যেসব নাগরিক ও কোম্পানির নাম এসেছে তাদের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না এবং সে তদন্তের অগ্রগতি প্রতি মাসে আদালতকে জানাতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশি কোনো নাগরিক অথবা কোম্পানি বা অন্য কোনো সংস্থার অর্থপাচার, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের বিষয় নিরীক্ষণ, পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে অর্থ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, বাণিজ্য সচিব, পররাস্ট্র সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যন, আইন সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের রেজিস্ট্রার ও পুলিশ প্রধানকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে শুনানিতে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আলোচিত পানামা ও প্যারাডাইস পেপারে যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। এ পর্যন্ত যাদের নাম এসেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মুসা বিন শমসের ও আব্দুল আউয়াল মিন্টু। এছাড়া সুইস ব্যাংক থেকে টাকা আনার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইমিগ্রেশন পুলিশ, বিএফআইইউসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে।

তিনি আরো বলেন, ‘গত বছর ২২ নভেম্বর অর্থপাচারকারী, দুবৃত্তদের বিষয়ে হাইকোর্ট যে স্বঃপ্রণোদিত রুল জারি করেছিল, ওই রুল এবং সুইস ব্যাংকের অর্থপাচার নিয়ে যে নতুন রুল (রোববার) জারি করা হয়েছে, দুটি রুলের শুনানি একসঙ্গে গ্রহণ করা হবে বলে হাইকোর্ট জানিয়েছেন। ৩০ মার্চ বিষয়টি আদেশের জন্য ধার্য করা হয়েছে।’

গত বছরের ১৮ নভেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশ থেকে কানাডায় টাকা পাচারের সত্যতা পাওয়ার কথা জানান। প্রাথমিকভাবে অর্থপাচারে জড়িত যাদের তথ্য পাওয়া গেছে তার মধ্যে সরকারি কর্মচারীই বেশি বলে জানান তিনি।

পরদিন বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেসব প্রতিবেদন নজরে আসার পর ২২ নভেম্বর অর্থপাচারকারী, দুবৃত্তদের নাম-ঠিকানার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা, তা জানতে চান হাইকোর্ট। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার এ বিষয়টি হাইকোর্টে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে।

বার্তাবাজার/ই.এইচ.এম

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর