ভালো রাস্তা না থাকায় সবজি গ্রাম খ্যাত মালিয়াটার কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত

বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লী গ্রাম মালিয়াটা পলিপাড়া। শেরপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে এই গ্রামের অবস্থান। শেরপুর, শাহজাহানপুর ও নন্দীগ্রাম উপজেলার সীমান্ত ঘেষা এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষের পেশা কৃষি কাজ। গ্রামটি সবজি উৎপাদনে বেশ পরিচিত। বেগুন, পটল, লাউ, শিম, মরিচ, টমেটোসহ সব ধরণের সবজি চাষ হয় এই গ্রামে।

কাক ডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি কিষাণ-কিষাণীদের কর্ম তৎপরতা দেখা যায় এখানে। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও গ্রামের মেঠো পথের কোন উন্নয়ন হয়নি। আর একারণে এখানকার কৃষকদের এখনো অনেক কষ্ট করে তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারে নিতে হয়। অনেক সময় যাতাযাত সমাস্যার কারণে মাঠে অথবা বাড়িতেই কম মূল্যে কৃষি পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হয় কৃষকরা।

সরেজমিনে মালিয়াটা পলিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এই গ্রামে বিদ্যুত সরবরাহ চালু থাকলেও রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা। গ্রামের অধিকাংশ বাড়িঘর মাটির তেরী। গ্রামের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে বরেন্দ্র এলাকার বৃহৎ ভাদাই খাল। গ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে কয়েক মাস আগে ভাদাই খালের মুখে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে শেরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন(পিআইও)অফিস একটি ছোট ব্রীজ নির্মাণ করেছে। গ্রামের কৃষকরা মরিচ, বেগুন, পটল, মূলা ইত্যাদি সবজি ক্ষেত থেকে তুলে রাস্তার পাশে বসে আছে ব্যাপারীর অপেক্ষায়।

এই গ্রামের কৃষক মো. ফরিদ উদ্দিন এ বছর প্রায় ২ বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ, আড়াই বিঘা জমিতে বেগুন ও ১ বিঘা জমিতে মূলার আবাদ করেছেন। এ বছর সবজি ফসলের দাম ভাল থাকায় বেশ লাভবান হয়েছেন তিনি। তারপরও তার মনে আক্ষেপ। কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, গ্রামের রাস্তা-ঘাট খারাপ থাকায় কমদামে জমিতেই ফসল বিক্রি করতে হয়েছে। আবার হাট-বাজারে বেশি দাম পাওয়া গেলেও যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে ভ্যান ভাড়া বেশি দিতে হয়। একই সমস্যার কথা জানিয়েছেন গ্রামের অন্যান্য কৃষক।

শেরপুর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, কুসুম্বী ইউনিয়নের পলিপাড়া গ্রামের রাস্তার দৈর্ঘ প্রায় ১.৭৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে মাত্র ১৯০ মিটার রাস্তা ইট দ্বারা সোলিং করা হয়েছে।

কুসুম্বী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলম পান্না জানান, পলীপাড়া গ্রামের কৃষকরা সারা বছর নানা ধরণের সবজি উৎপাদন করে থাকে। কিন্তু যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ থাকায় তারা কৃষি পণ্যের ন্যয্য মূল্য পান না। মাঝে মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় ঐ গ্রামের রাস্তা মাটি দ্বারা সংস্কার করা হয়।

শেরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন আক্তার জানান, কুসুম্বী ইউনিয়নের মালিয়াটা পলিপাড়া গ্রামের কৃষকরা প্রায় সারা বছর বিভিন্ন ধরণের সবজির আবাদ করে থাকে। ইউনিয়ন পর্যায়ের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে আসছে।

শেরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ লিয়াকত আলী সেখ জানান, মালিয়াটা পলিপাড়া গ্রামের কৃষকদের জীবন-মান উন্নয়নের জন্য ও তাদের উৎপাদিত ফসল সহজে পরিবহনের জন্য সম্প্রতি দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঐ গ্রামে একটি ব্রীজ নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। গ্রামের অভ্যন্তরীণ রাস্তা পাকা করণের বিষয়টিখুব দ্রুত উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

রাশেদুল হক/বার্তাবাজার/পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর