সাংবাদিক খাশোগি হত্যার নির্দেশ দেন সৌদি যুবরাজ
সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যা সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশেই হয়েছিল। শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের দফতর।
এর পরপরই এ হত্যাকাণ্ডের সাথে যুবরাজ মোহাম্মদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে তাদের সন্দেহের কথা জানিয়েছিল মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ। সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করবে যুক্তরাষ্ট্র।
হোয়াইট হাউজ এখন সেই গোপন রিপোর্টের অংশবিশেষ প্রকাশ করতে চলেছে, এবং সরকারী বিভিন্ন সূত্রে নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো বলছে রিপোর্টে খাসোগজি হত্যাকাণ্ডে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের জড়িত থাকার কথা রয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টর্স বুধবার তাদের এক রিপোর্টে বলেছে, সিআইএ’র রিপোর্টে এমন কথা রয়েছে যে সৌদি যুবরাজ নিজে খাসোগজি হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা “অনুমোদন করেছিলেন এবং সম্ভবত হত্যার নির্দেশও তিনি দিয়েছিলেন”।
যদিও সৌদি সরকার সমসময় এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
তাদের বক্তব্য – সৌদি নিরাপত্তা বিভাগের একটি অংশ সরকারের অগোচরে নিজেদের সিদ্ধান্তে ঐ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি, ইয়েমেনের যুদ্ধ এবং ব্যক্তি যুবরাজ মোহাম্মদের ব্যাপারে তার নেতিবাচক মনোভাব কখনই চেপে রাখেননি জো বাইডেন।
২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থিতা নিয়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মধ্যে এক বিতর্কে তিনি খোলাখুলি বলেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশেই জামাল খাসোগজিকে হত্যা করা হয়েছে, এবং “সৌদি আরবকে এর জন্য জবাবদিহি করা হবে”।
মি. খাসোগজি হত্যায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রত্যক্ষ ভূমিকা নিয়ে আরো তদন্তের জন্য জোর সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ।
সৌদি সরকার এবং রাজপরিবার সবসময় মি. খাসোগজির হত্যাকাণ্ডে তাদের হাত থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে। অভিযুক্ত কয়েকজনকে আটক করে তাদের বিচারও শুরু হয়েছে সৌদি আরবে।
কিন্তু জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বলছেন, সৌদি বিচার প্রক্রিয়ার মান গ্রহণযোগ্য নয়, এবং তা স্থগিত করা উচিত।
বিবিসির সংবাদদাতা ইমোজেন ফুকস্ বলছেন, জাতিসংঘের তদন্ত রিপোর্টে খুব স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে জামাল খাসোগজিকে সূক্ষ্মভাবে পরিকল্পনা করে হত্যা করা হয়েছে, এবং এর দায় সৌদি রাষ্ট্রের।
জাতিসংঘের রিপোর্ট বলছে, ‘কে বা কারা এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা কার্যকর করেছে, তা খুব একটা প্রাসঙ্গিক নয়, যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো রাষ্ট্রের পক্ষে তারা সেই কাজ করেছে।’
জাতিসংঘ তদন্তকারীরা আরো বলছেন, খাশোগি হত্যার পেছনে যুবরাজ মোহাম্মদসহ সৌদি সরকারের আরো কজন ক্ষমতাবান ব্যক্তির প্রত্যক্ষ ভূমিকা তদন্তের জন্য ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ তারা পেয়েছেন।
যেভাবে. মি খাসোগজিকে হত্যা করা হয়েছে সেটাকে নির্যাতন বলে বর্ণনা করেছে জাতিসংঘ। আরো বলা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের তদন্তে তুরস্কের প্রয়াসকে সৌদি আরব বাধাগ্রস্ত করেছে।
জাতিসংঘ বলছে, খাসোগজি হত্যায় তার প্রত্যক্ষ ভূমিকা তদন্তের পেছনে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। মি খাশোগি হত্যাকাণ্ডের বিচার যেভাবে সৌদি আরব করছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘ বলছে, এই হত্যাকাণ্ড একটি ‘অন্তর্জাতিক অপরাধ’ এবং এর বিচারের অধিকার শুধু সৌদি আরবের নয়। অর্থাৎ, এই হত্যাকাণ্ড যেহেতু তুরস্কে সংঘটিত হয়েছে এবং মি. খাশোগি যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা ছিলেন, সুতরাং এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের অধিকার তুরস্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রেরও রয়েছে।
২০১৮ সালের অক্টোবরে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর মি. খাশোগিকে হত্যার ঘটনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে তুমুল তোলপাড় হয়। মি. খাশোগি সৌদি রাজপরিবারের একজন সমালোচক ছিলেন, এবং মৃত্যুর আগে বেশ কবছর ধরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন। খবর বিবিসি।
বার্তাবাজার/ই.এইচ.এম