শার্শায় কাচারী বাড়ির সরকারি সম্পত্তি দখল, উচ্ছেদে কৌঁসুলির মতামত

ঐতিহ্যবাহী যশোরের শার্শার কাচারি বাড়ির জমি দখলদার উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসনকে আইনগত মতামত দিয়েছে আদালতের সরকারি কৌঁসুলির (পিপি) দফতর।

জেলা প্রশাসন থেকে ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড করে নেয়া ওই জমি উদ্ধারে মামলা করার জন্য চিঠি দেয়া হয়। এতে প্রথম ধাপে এই মতামত দেন যশোর আদালতের পিপি কাজী বাহাউদ্দীন ইকবাল।

তিনি জেলা প্রশাসনকে অবহিত করে বলেন, প্রিন্ট পর্চার গেজেট এলে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা করে রেকর্ড সংশোধন করা হবে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, শার্শার কাচারি বাড়ির সরকারি প্রায় এক বিঘা বাস্তু শ্রেণির জমি তবে ধানী শ্রেণি দেখিয়ে ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড করে নেয়ার অভিযোগ ওঠেছে।

এদিকে স্থানীয় ফজলুর রহমান নামে এক ব্যক্তি প্রথমে একসনা বন্দোবস্ত করে নেন। তারপর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সরকারি জমি নিজেদের নামে রেকর্ড করে নেন।

শার্শা উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার দফতর থেকে তদন্ত করে এর সত্যতা পাওয়া যায়।

এদিকে শার্শা উপজেলার তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) খোরশেদ আলম চৌধুরী ওই জমি সরকারের অনুকূলে নেয়ার জন্য ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে এলএসটি মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন (স্মারক নং ০৫.৫৩৫.০১৮.০০.০০০.০০৩.২০১৯-১৮৪৮)।

তাছাড়া যশোরের শার্শা উপজেলার ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৭২ নম্বর শার্শার মৌজার সাবেক ১২৫৫ দাগের ৩৫ শতক সরকারি জমি ফজলুর রহমান প্রথমে একসনা বন্দোবস্ত নেন।

সরজমিনে জানা যায়, ৩২ দশমিক ৬৩ শতক (প্রায় এক বিঘা) জমি ১৯৮০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নিজ নামে রেকর্ড করে নেন ফজলুর রহমান। তবে তিনি প্রথম দিকে অতি গোপন থাকলেও তার মৃত্যুর পর প্রকাশ্যে দখল করে নিয়ে ছেলে কবির হোসেন, জসিম উদ্দিন, মনির হোসেন ও ইমাম হোসেন সেখানে অবকাঠামো নির্মাণ করে।

এছাড়া দেখা গেছে, ওই জমির ওপর দিয়ে রাস্তা ও ড্রেন থাকলেও স্থানীয়দের ব্যবহারে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তবে তার ছেলেরা বাসাবাড়ির পানি ড্রেনে দিতে নিষেধ করেন এমন কি এ নিয়ে প্রতিবেশীদের মারধর করেছে কবির-জসিম ও তার ভাইয়েরা।

এর আগে সরকারি জমি রেকর্ড করে নিজেদের দাবি করা কবির-জসিমদের বেপরোয়া আচরণ নিয়ে কয়েকবার স্থানীয়ভাবে শালিস বৈঠকও হয়েছে।

তবে স্থানীয় প্রশাসন সরকারি ওই জমি কীভাবে ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড হলো তা নিয়ে এখন নড়েচড়ে বসেছে। তারপর উপজেলা ভূমি অফিস থেকে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়।

এদিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খোরশেদ আলম চৌধুরী ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর স্বাক্ষরিত এক পত্রে উল্লেখ করেন, কালেক্টরেট যশোরের নামে কাচারি বাড়ির বাস্তু শ্রেণির জমি। তবে কাছারি বাড়ির এ জমি ধানী হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। ফজলুর রহমানের মারা যাওয়ার পর তার সন্তানদের নামে রেকর্ড করা হয়।

অতঃপর এ বিষয়ে তিনি জেলা প্রশাসককে অবহিত করে চিঠি দেন। পরে যশোরের জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে এলএসটি মামলা করার জন্য সরকারের পিপিকে চিঠি দেয়া হয়।

এ ব্যাপারে যশোর আদালতের পিপি কাজী বাহাউদ্দীন ইকবাল বার্তা বাজার কে বলেন, চিঠি পেয়ে তিনি সরেজমিনে সেখানে যান। কাগজপত্র যাচাই করলে দেখেন সরকারের কাছারি বাড়ির সম্পত্তি জাল দলিল করা হয়েছে।

তিনি বলেন, শার্শা মৌজার প্রিন্ট পর্চার রেকর্ড প্রকাশিত হলেও এখনো গেজেট হয়নি। যে কারণে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা করে রেকর্ড সংশোধন করতে অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু এখন তার দখলদার উচ্ছেদ করে সরকারের এই সম্পত্তি তারকাঁটা বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখতে মতামত দেয়া হয়েছে।

এ্যান্টনি দাস(অপু)/বার্তাবাজার/পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর